এফএনএস স্পোর্টস: জয়ের জন্য ৩০ বলে প্রয়োজন ৩৭ রান, হাতে ৬ উইকেট। ম্যাচ তখন হেলে ভারতের দিকে। কিন্তু মোড় ঘুরে গেল এক ওভারে। জেসন হোল্ডার কোনো রান না দিয়ে তুলে নিলেন একটি উইকেট। রান আউটও হলো একটি। মাঝারি পুঁজি নিয়ে দারুণ এক জয়ের আনন্দে মাতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ভারতকে ৪ রানে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল ক্যারিবিয়ানরা। ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে দুই দিন আগে শেষ ওয়ানডেতে ৩৫১ রানের পুঁজি গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২০০ রানে হারিয়েছিল ভারত। একই উইকেটে এবার হলো কুড়ি ওভারের ক্রিকেট। তবে উইকেট ছিল এবার বেশ মন্থর। আগে ব্যাটিং করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৬ উইকেটে তোলে ১৪৯ রান। ৩২ বলে ৩টি করে ছক্কা ও চারে সর্বোচ্চ ৪৮ রান করেন অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েল। ৩৪ বলে ৪১ রান করেন নিকোলাস পুরান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২০০ ম্যাচের মাইলফলক প্রথম ছুঁয়েছিল পাকিস্তান। দ্বিতীয় দল হিসেবে এই কীর্তি গড়ার দিনে ভারত ৯ উইকেটে করতে পারে ১৪৫ রান। আইপিএলে ঝড় তুলে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া তিলক ভার্মা আন্তর্জাতিক অভিষেকে ২২ বলে ৩ ছক্কা ও ২ চারে খেলেন ৩৯ রানের ঝড়ো ইনিংস। আর কেউ পারেননি প্রত্যাশা পূরণ করতে। হোল্ডার ৪ ওভারে ১৯ রানে নেন ২ উইকেট। ম্যাচের সেরাও এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। ওবেড ম্যাককয় ২৮ রানে ও রোমারিও শেফার্ড ৩৩ রানে নেন ২টি করে উইকেট। স্পিনার আকিল হোসেন ১৭ রান দিয়ে ধরেন একটি শিকার। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ব্র্যান্ডন কিংয়ের ব্যাটে ভালো সূচনা পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম চার ওভারে তারা তুলে ফেলে ২৯ রান। এরপর আসে জোড়া ধাক্কা। পঞ্চম ওভারে প্রথমবার বোলিংয়ে এসে প্রথম তিন বলের মধ্যে দুই ওপেনারকে বিদায় করে দেন লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চেহেল। কাইল মেয়ার্সের পর কিং, দুজনই হন এলবিডবিøউ। মেয়ার্স যদিও রিভিউ নিলে বেঁচে জেতেন। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল স্টাম্প মিস করে যেত। ১৯ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ২৮ রান করা কিং নষ্ট করেন একটি রিভিউ। তিনে নেমে টিকতে পারেননি জনসন চার্লস। তার অসাধারণ একটি ক্যাচ নেন তিলক। ডিপ মিড উইকেট থেকে বাঁ দিকে অনেকটা দৌড়ে গিয়ে ডাইভ দিয়ে বল মুঠোয় জমান তিনি। দলকে এরপর এগিয়ে নেন পুরান ও পাওয়েল। ৪০ বলে ৩৮ রানের জুটি গড়েন দুজন। শর্ট বলে পুরানকে বিদায় করে দেন ভারতের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া। পাওয়েল বাড়ান রান। পঞ্চম উইকেটে শিমরন হেটমায়ারের সঙ্গে আরেকটি ৩৮ রানের জুটি গড়েন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক। এই জুটিতে বল লাগে ¯্রফে ২৪টি। শেষ তিন ওভারে অবশ্য প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেনি স্বাগতিকরা। অবিশ্বাস্যভাবে এই সময়ে আসেনি কোনো বাউন্ডারি! শেষের আগের ওভারে হেটমায়ার ও পাওয়েলকে ফিরিয়ে দেন আর্শদিপ সিং। ভারতের তিন স্পিনারের বিপরীতে একমাত্র স্পিনার নিয়ে বোলিং বিভাগ সাজানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং শুরু করে স্পিন দিয়েই। সেই আকিলের হাত ধরেই আসে প্রথম সাফল্য। তৃতীয় ওভারে বাঁহাতি এই স্পিনারকে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় লাইন মিস করে স্টাম্পড হন শুবমান গিল। সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ বাউন্ডারিতে রানের খাতা খোলার পর কাভার-পয়েন্টের ওপর দিয়ে দারুণ একটি ছক্কা মারেন আলজারি জোসেফকে। ওয়ানডে সিরিজে তিন ম্যাচেই ফিফটি করা ইশান কিষান এ দিন ধুঁকছিলেন শুরু থেকে। একটি চার মেরেই বিদায় নেন তিনি ৯ বলে ৬ রান করে। তিলক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রানের খাতা খোলেন জোসেফকে পরপর দুই বলে পুল করে ছক্কা মেরে। এই ওভারের শেষ বলে ওভার থ্রো থেকে আরও চার মিলিয়ে রান আসে মোট ১৭। অষ্টম ওভারে তিনি পরপর ছক্কা ও চার মারেন শেফার্ডকে। হেটমায়ারের দারুণ ক্যাচে সুরিয়াকুমারের (২১ বলে ২১) বিদায়ে ভাঙে ২৭ বলে ৩৯ রানের জুটি। শেষ ১০ ওভারে ভারতের দরকার ছিল ৮০ রান। পরের ওভারে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান তিলকও। পান্ডিয়া ও সাঞ্জু স্যামসনের জুটিতে এরপর সমীকরণ নেমে আসে ৩০ বলে ৩৭ রানে। কিন্তু চিত্র পাল্টে যায় হোল্ডারের করা ওই ষোড়শ ওভারে। পান্ডিয়া বোল্ড হয়ে ফেরার পর মেয়ার্সের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়ে যান স্যামসন। শেষ দুই ওভারে ভারতের দরকার ছিল ২১ রান। আগের ওভারে একটি ছক্কা হাঁকানো আকসার প্যাটেল আউট হয়ে যান প্রথম বলেই। আর্শদিপের পরপর দুটি চারে নাটকীয় কিছুর আভাস যদিও জাগে। তবে শেষ ওভারে ১০ রানের সমীরণে শেফার্ডের বোলিংয়ে ভারত নিতে পারে কেবল ৫, উইকেট হারায় ২টি। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে এই সংস্করণে দলের বাইরে থাকা রোহিত শর্মা ও ভিরাট কোহলি যথারীতি নেই এই সিরিজেও। দ্বিতীয় ম্যাচ হবে আগামী রোববার গায়ানাতে।