এফএনএস স্পোর্টস: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নতুন দিনের পথচলায় অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার ভার পেলেন মিচেল মার্শ। এই মাসের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি। সব ঠিকঠাক থাকলে লম্বা সময়ের জন্যই সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দুই সংস্করণে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক হতে পারেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার আরেকটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনও দেখা যাবে এই সিরিজ থেকে। বিগ ব্যাশে ওপেনিংয়ে চমকপ্রদ সাফল্যের পর এবার জাতীয় দলেও ইনিংস শুরু করতে দেখা যাবে স্টিভেন স্মিথকে। নির্বাচক জর্জ বেইলি নিশ্চিত করেছেন, ওপেনার হিসেবেই দলে রাখা হয়েছে অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানকে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ গত ফেব্রæয়ারিতে অবসর নেওয়ার পর কোনো অধিনায়ক ছিল না অস্ট্রেলিয়ার। এই সংস্করণে কোনো ম্যাচ এতদিন না থাকায় নতুন অধিনায়কের প্রয়োজনও পড়েনি। সম্ভাব্য অধিনায়ক হিসেবে অবশ্য মার্শের নাম উচ্চারিত হয়েছে প্রবলভাবেই। সঙ্গে ট্রাভিস হেড, অ্যালেক্স কেয়ারি, মার্কাস স্টয়নিসরাও ছিলেন আলোচনায়। শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব পেলেন মার্শই। প্রথমবারের মতো জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি। আগে কখনও ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বেও অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টস করা হয়নি তার। আপাতত শুধু এক সিরিজের জন্য অধিনায়ক করা হলেও লম্বা সময়ের জন্য মার্শের নেতৃত্ব পাওয়া একরকম নিশ্চিত। অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর ৫০ ওভারের ক্রিকেটেও নেতৃত্ব দেওয়া হতে পারে ৩১ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডারকে। ভবিষ্যৎ ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে অবশ্য ট্রাভিস হেডও থাকবেন জোর আলোচনায়। বিগ ব্যাশে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে দলে প্রথমবার সুযোগ পেয়েছেন বাঁহাতি ফাস্ট বোলার স্পেন্সার জনসন, পেস বোলিং অলরাউন্ডার অ্যারন হার্ডি ও স্পিনিং অলরাউন্ডার ম্যাথু শর্ট। গত বিগ ব্যাশে ব্রিজবেন হিটের হয়ে নজরকাড়া পারফরম্যান্স দেখান স্পেন্সার জনসন। যদিও ১০ ম্যাচে তার উইকেট ছিল কেবল ৯টি। তবে শেষের ওভারগুলোয় বোলিংয়ে দারুণ দক্ষতা দেখান তিনি। বিগ ব্যাশের পর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও তার শুরুটা হয়েছে দুর্দান্ত। সাউথ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেকে প্রথম ইনিংসে উইকেটশূন্য থাকলেও পরের ইনিংসে শিকার করেন ৬ উইকেট। দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৪৭ রানে নেন ৭ উইকেট! দ্রæতই জায়গা পান অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলে। সেখানে প্রথম ইনিংসে নিউ জিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে উইকেট নেন ৪টি। স¤প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেট ও কানাডার গেøাবাল টি-টোয়েন্টিতেও ভালো বোলিং করেছেন ২৭ বছর বয়সী এই পেসার। গত বিগ ব্যাশেই ১৪১.১০ স্ট্রাইক রেটে ৪৬০ রান করে আসরের সর্বোচ্চ রান স্কোরার ছিলেন হার্ডি। সঙ্গে পেস বোলিংয়ে তার উইকেট ছিল ৫টি। ২৪ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও গত মৌসুমে ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। বিগ ব্যাশে রান সংগ্রহে হার্ডির সামান্য পেছনে ছিলেন শর্ট। ১৪৪.৪৭ স্ট্রাইক রেটে তার রান ছিল ৪৫৮। সঙ্গে অফ স্পিনে ১১ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটার হয়েছিলেন তিনিই। ২৭ বছর বয়সী অলরাউন্ডার এরপর আইপিএলে খেলেন পাঞ্জাব কিংসের হয়ে। স¤প্রতি মেজর লিগ ক্রিকেটেও খেলেন তিনি। এখন খেলছেন ইংল্যান্ডে দা হান্ড্রেড-এ নর্দান সুপারচার্জার্সের হয়ে। এই বিগ ব্যাশেই শেষ দিকে যোগ দিয়ে চমক দেখান স্মিথ। তিন বছর পর বিগ ব্যাশে খেলতে নামেন তিনি এবার। সিডনি সিক্সার্সের হয়ে তাকে দেখা যায় ওপেনিংয়ে। প্রথম ম্যাচে ২৭ বলে ৩৬ রান করে আউট হয়ে যান। পরের ম্যাচে রান আউট হওয়ার আগে করেন ৭ ছক্কায় ৫৬ বলে ১০৭। তৃতীয় ম্যাচে অপরাজিত থাকেন ৯ ছক্কায় ৬৬ বলে ১২৫ রান করে। টানা তৃতীয় সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে পরের ম্যাচে আউট হয়ে যান ৬ ছক্কায় ৩৩ বলে ৬৬ করে। বিগ ব্যাশের এই বিধ্বংসী ওপেনারকেই এবার জাতীয় দলে চায় অস্ট্রেলিয়া। তিন সংস্করণ মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩৫৮ ইনিংস খেললেও কখনও ওপেন করেননি স্মিথ। দক্ষিণ আফ্রিকায় এই সিরিজে বিশ্রামে থাকবেন ডেভিড ওয়ার্নান, জশ হেইজেলউড, মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স ও ক্যামেরন গ্রিন। চোটের কারণে থাকবেন না অ্যাশটন অ্যাগার। তবে টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডে সিরিজে খেলবেন তারা সবাই। দলে ফিরেছেন জেসন বেহরেনডর্ফ। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সবশেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তিনি ২০২১ সালের জুলাইয়ে। গত বিশ্বকাপের দল থেকে এবার জায়গা হয়নি কিপার-ব্যাটার ম্যাথু ওয়েড ও পেসার রিচার্ডসনের। কিপার হিসেবে খেলবেন জশ ইংলিস। দক্ষিণ আফ্রিকায় অস্ট্রেলিয়ার এই সিরিজের ম্যাচ তিনটি হবে আগামী ৩০ অগাস্ট, ১ সেপ্টেম্বর ও ৩ সেপ্টেম্বর।