এফএনএস লাইফস্টাইল: ভাইরাসজনিত লিভারের রোগ হেপাটাইটিস বি। এর মধ্যে ক্রনিক হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের একাংশ লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। সাধারণত লিভার সিরোসিস থেকে লিভার ক্যান্সার হয়ে থাকে। কিন্তু ক্রনিক হেপাটাইটিস বি ভাইরাস থেকে লিভার সিরোসিস না হয়েও সরাসরি লিভার ক্যান্সার হতে পারে।
সময়মতো চিকিৎসকের কাছে না গেলে অবস্থার আরো অবনতি ঘটে।
যেভাবে ছড়ায় হেপাটাইটিস বি ভাইরাস
– আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত অন্য কোনো ব্যক্তির শরীরে সঞ্চালন করলে।
– আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে প্রতিরোধবিহীন যৌন মিলনের মাধ্যমে।
– জন্মগ্রহণের সময় আক্রান্ত মায়ের শরীর থেকে নবজাতকের শরীরে।
– আক্রান্ত ব্যক্তির সিরিঞ্জ, শেভিং রেজর, টুথব্রাশ শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে।
চিকিৎসা
ক্রনিক হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের প্রায় সারা জীবন নিয়মিত চিকিৎসকের ফলোআপে থাকতে হয়। একিউট হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের প্রয়োজন হয় না। তবে সবার ক্ষেত্রে না হলেও অনেকের ক্ষেত্রে ক্রনিক হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের প্রয়োজন হয়।
ইনজেকশন ও মুখে খাওয়ার-এই দুই ধরনের ওষুধ বাজারে সহজলভ্য। মুখে খাওয়ার ওষুধ সাধারণত সারা জীবনই খেয়ে যেতে হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মুখে খাওয়ার ওষুধ কখনো হঠাৎ বন্ধ করতে নেই। এতে লিভার আরো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ওষুধের কোনোটিই হেপাটাইটিস বি ভাইরাসকে একেবারে নির্মূল করতে পারে না, নিয়ন্ত্রণ করতে পারে মাত্র।
এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই সামান্য।
টিকা গ্রহণ
হেপাটাইটিস সি ভাইরাস যেমন ১২ সপ্তাহে মুখে খাওয়ার ওষুধের মাধ্যমে শরীর থেকে একেবারে নির্মূল হয়ে যায়, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের ক্ষেত্রে তেমন ওষুধ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তবে টিকা গ্রহণের মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা যায়। পূর্ণবয়স্ক মানুষ, বিশেষত যাঁদের জন্ম অনেক আগে, তাঁরাও চাইলে যেকোনো বয়সে এই ভাইরাসের টিকা নিতে পারবেন। শূন্য, এক ও ছয় মাস অন্তর মোট তিন ডোজ টিকা নিলেই এই রোগের আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়।
টিকা দেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। এসব পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হয় মূলত আগে কখনো এই ভাইরাস আক্রমণ করেছে কি না এবং রোগীর শরীরে এরইমধ্যে রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে আছে কি না। একবার এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেলে আর টিকা নেওয়ার সুযোগ নেই। তাই টিকা নিন এবং লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করুন।
(পরামর্শ দিয়েছেন ডা. মুহাম্মদ সায়েদুল আরেফিন সহকারী অধ্যাপক শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল)