এম এম নুর আলম/আব্দুল মোমিন \ আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী গুনাকরকাটি খানকায়ে নকশবন্দীয়া মোজাদ্দেদীয়া খায়েরিয়া আজিজীয়া দরবার শরীফে যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে বাৎসরিক ৯৯তম ওরস ও ফাতেহা শরীফ আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার ফজরের পর কুরআন খতম, ফাতেহা ও মিলাদ শরীফ, সাজরা শরীফ এবং মানকাবাত শরীফ পাঠ শেষে সকাল ৯ টা ৪০ মিনিট থেকে ৯টা ৪৯ মিনিট পর্যন্ত মানবজাতির কল্যাণ, সমৃদ্ধি এবং ইহকালে শান্তি ও পরকালে মাগফিরাত এবং বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ-শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন, হযরত গাওছুল আযম নকশবন্দী মোজাদ্দেদী দেহলবী (রহঃ) ও গওছুল আযম নকশবন্দী মোজাদ্দেদী খুলনবী (রহঃ) এর ওরস ও ফাতেহা শরীফের প্রধান মেহমান ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) এর ৪১তম আওলাদ, মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহঃ) এর ১৩তম আওলাদ, দিলীর হযরত গাওছুল আযম দেহলবী (রহঃ) এর দরবার শরীফের বর্তমান সাজ্জাদানশীন, নূরে চশমে হযরতে ইমামে রব্বানী, গুলেবাগে মুজাদ্দেদী আলহাজ্ব হযরত শাহ্ আবু নসর আনাছ ফারুকী (মাঃজিঃ)। এসময় হযরতে গাওছুল আজম খুলনবী (রহঃ) এর আওলাদ ও গুনাকরকাটি খানকাহ্ শরীফের বর্তমান সাজ্জাদানশীন খাজা মোহাম্মাদ মিন্নাতুলাহ (মাঃজিঃ)সহ আওলাদবৃন্দ, বিভিন্নস্থান থেকে আগত হাক্কানী আলেম ওলামা, সরকারী কর্মকর্তা, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সর্বস্তরের মুসলীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আখেরী মোনাজাতকে কেন্দ্র করে আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের গুনাকরকাটি খানকা শরীফ এলাকা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের নগরীতে পরিণত হয়। দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুরিদান, আশেকান ভক্তবৃন্দ ও ধর্মপ্রাণ মুসলিবৃন্দের আমিন, আমিন ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠে খানকা শরীফ। মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দু’হাত তুলে আমিন, আমিন ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে পরম করুনাময় আলাহু রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় মুসলিবৃন্দ আকুতি জানান। জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তির জন্য, পরম দয়াময় আলাহর দরবারে অনুনয়-বিনয়ের সাথে পানাহ চেয়েছেন তারা। ফজরের নামাজের পরে মোনাজতে শরীক হওয়ার জন্য আসা মুসলীবৃন্দের চাপে খানকা শরীফসহ আশপাশ এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বিশাল প্যান্ডেলের নিচে জায়গা না পেয়ে মুসলীবৃন্দকে আশেপাশের মাটিতে বসতে দেখা গেছে। পুরুষদের পাশাপাশি হাজার হাজার নারীরাও মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন। মোনাজাত শেষে সকল মুসলীবৃন্দের মাঝে খানকা শরীফের খায়ের ও বরকত মিশ্রিত তাবারক বিতরণ করা হয়। তাবারক বিতরণ শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষ নিজ গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা শুরু করে। এতে বাঁকা-দরগাহপুর সড়ক ও আশাশুনি-সাতক্ষীরা সড়ক এবং সংযোগ সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় তীব্র ও যানজট। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মোস্তাফিজুর রহমান (পিপিএম বার) এর দিক নির্দেশনায় ও আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মমিনুল ইসলাম (পিপিএম) এর নেতৃত্বে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে এই যানজট নিরাসনে কঠোর পরিশ্রম করতে দেখা গেছে। এদিকে, ওরস ও ফাতেহা শরীফের প্রথম দিনে গত বুধবার রাতে আগত ভক্ত, মুরিদান ও মুসলীদের হেদায়েত এর উদ্দ্যেশে দেশ, বিদেশের বিভিন্ন খ্যাতিমান আলেম ওলামা বক্তব্য রাখেন। দুইদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত ওরস ও ফাতেহা শরীফে বিভিন্ন সময়ে উপস্থিত হয়ে ইহকালের শান্তি ও পরকালের মুক্তি চেয়ে মহান আলাহর দরবারে দোয়া কামনা করেন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক এমপি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইয়ানুর রহমান, থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মমিনুল ইসলাম (পিপিএম)সহ সরকারী কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের মানুষ।