রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ০৬:৫০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
সুন্দরবনে বিএসএফের রেখে যাওয়া ৭৫ জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর দেবহাটা বিএনপির সদস্য নবায়ন উদ্বোধনী আয়োজনে জেলা বিএনপির আহবায়ক রহমাতুল্লাহ পলাশ বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন যুবদলের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত কলারোয়ায যুবদল নেতার ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ মুন্সীগঞ্জে তাপদাহে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ শ্রীউলায় ইউনিয়ন পর্যায়ে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত তারুণ্যের সমাবেশ সফল করতে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রস্তুতি সভা ভাড়াশিমলায় ২৫০ প্রান্তিক কৃষানের মধ্যে সবজির বীজ বিতরণ খুলনার সাবেক মহিলা কাউন্সিলর গ্রেফতার বসন্তপুর ফকিরপাড়া জামে মসজিদে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল

পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ২ ঘন্টায় ঢাকা থেকে ভাঙ্গায় গেল ট্রেন

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

এফএনএস: স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়ে প্রথমবারের মতো ঢাকা থেকে ভাঙ্গায় গেছে পরীক্ষামূকভাবে চালানো ট্রেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ১৭ মিনিটে ট্রেনটি ভাঙ্গা স্টেশনে পৌঁছায়। এর আগে সকাল ১০টা ৭ মিনিটে ঢাকা থেকে ছাড়ে ট্রেনটি। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া স্টেশনে পৌঁছায়। এরপরই ওঠে পদ্মা সেতুতে। সব মিলিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ৮২ কিলোমিটার রেলপথ পাড়ি দিতে ট্রেনটির লাগে ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট (১৩০ মিনিট)। পরীক্ষামূলক বলেই সময় বেশি লেগেছে। পুরোদমে চালু হলে আরও কম সময়ে এই দূরত্ব পাড়ি দেবে। এদিকে বেলা ১১টা ২৬ মিনিট ট্রেনটি এ সেতুতে ওঠে, পার হয় ১১টা ৩৪ মিনিটে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতু পাড়ি দিতে পরীক্ষামূলক ট্রেনটির সময় লেগেছে মাত্র আট মিনিট। কম সময়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি- বর্তমান সময়ের জন্য যুগান্তকারী। রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনও একই কথা বলেছেন। ট্রেন যাত্রা শুরুর আগে তিনি বলেন, এই রেল লাইন উদ্বোধনের ফলে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ জীবনযাত্রা সহজ হবে। এর সুফল সারা দেশের মানুষ পাবে। এদিকে পরীক্ষামূলক ট্রেনটি ভাঙ্গায় পৌঁছালে ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী স্বাগত জানান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রথমবারের মতো ঢাকা-ভাঙ্গা পরীক্ষামূলক যাত্রার জন্য গত বুধবার ঢাকায় প্রবেশ করে ট্রেনটি। এর আগে ট্র্যাক কার ও মালবাহী ট্রেন পদ্মা সেতু অতিক্রম করলেও এবারই প্রথম যাত্রী বহনের ট্রেনটি প্রবেশ করেছে রাজধানীতে। আর আগামী ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন এ রেলপথের উদ্বোধন করবেন। এর মধ্যে দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের নির্বিঘ্নে ও সাশ্রয়ী ভাঙ্গায় চলতে পারবে। এর মাধ্যমে পদ্মা পাড়ের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রায় ১৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণ করছে রেলওয়ে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ চালু হচ্ছে। যদিও যশোর পর্যন্ত পুরো প্রকল্প উদ্বোধন হবে ২০২৪ সালের জুনে। এ লক্ষ্য ঠিক করে এগুচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে ঢাকা-যশোর পর্যন্ত পদ্মা সেতু রেল লিংক রুটটি। এ রুট দিয়ে বাংলাদেশের রেলপথ ভারতের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে নতুন চার জেলা (মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল) অতিক্রম করে যশোরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। একই সঙ্গে বিদ্যমান ভাঙ্গা-রাজবাড়ী থেকে কুষ্টিয়া হয়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দিয়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সঙ্গেও যুক্ত হবে এ রেলপথ। ফলে এসব অঞ্চলে কম খরচেই পণ্য ও যাত্রী চলাচল করতে পারবে ঢাকার সঙ্গে। এর আগে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন গণমাধ্যমকে বলেছেন, পদ্মা সেতু হয়ে রেলপথ উদ্বোধনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১০ অক্টোবর সময় দিয়েছেন। সেদিন একটি সুধী সমাবেশও অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের এক সপ্তাহ পর থেকে এ পথে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। শুরুতে একটি ট্রেন পরিচালনা করা হবে। প্রকল্প কার্যালয় থেকে ঢাকা-পদ্মা সেতু-রাজবাড়ী রুটে ট্রেন চালানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে রাজশাহী থেকে ঢাকা পর্যন্ত একটি ট্রেন চালানোর প্রস্তাব রয়েছে। মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভাঙ্গা পর্যন্ত আসে। এ ট্রেন ঢাকা পর্যন্ত আনা হতে পারে। পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের অধীনে চীন থেকে ১০০ নতুন কোচও কেনা হয়েছে। নতুন কোচ দিয়েই ট্রেন চালু করা হবে। রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উদ্বোধনের সময় সব স্টেশন এবং পুরো সংকেত ব্যবস্থা হয়তো চালু করা যাবে না। শুরুতে তিনটি স্টেশনে ট্রেন থামার ব্যবস্থা থাকবে। স্টেশনগুলো হচ্ছে মাওয়া, পদ্মা (জাজিরা) ও শিবচর। মুন্সিগঞ্জের নিমতলা স্টেশনটিও চালুর চেষ্টা চলছে। প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুসারে, আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮২ শতাংশ। এ প্রকল্পে তিন অংশে বিভক্ত হয়ে কাজ চলমান। প্রথম অংশের ঢাকা-মাওয়া অংশে অগ্রগতি ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ অংশে রেললাইন নির্মাণ শতভাগ হয়ে গেলেও নতুন চার স্টেশনের একটিরও শতভাগ কাজ হয়নি। কাজ বাকি রয়েছে ব্যালাস্টেড ট্রাক ও মেজর দুই ব্রিজের। আর দ্বিতীয় অংশ মাওয়া-ভাঙ্গার কাজের অগ্রগতি ৯৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। ব্যালাস্টেড ট্রাক ও সিগন্যালিংয়ের কাজ বাকি। নতুন চার স্টেশনের দুটির নির্মাণ শেষ, বাকি দুইটি। এ ছাড়া এ অংশের সব কাজই সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে আগামী বছরের জুনে উদ্বোধনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া ভাঙ্গা থেকে যশোর অংশের কাজের অগ্রগতি ৭৮ শতাংশ। এ অংশে রেললাইন নির্মাণ প্রায় ৯৯ শতাংশ হয়ে গেলেও নতুন নয় স্টেশনের একটিরও শতভাগ কাজ হয়নি। কাজ বাকি রয়েছে ব্যালাস্টেড ট্রাক ও মেজর একটি ব্রিজের। এসব কাজের সঙ্গে এ অংশে সবচেয়ে বেশি কাজ বাকি রয়েছে সিগন্যালিংয়ের কাজ, রেলপথ নির্মাণ শেষ হলেই শুরু হবে এ কাজ। প্রসঙ্গত, ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ প্রকল্প নির্মাণ শুরু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। জিটুজি পদ্ধতিতে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। রেল সংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এ পরীক্ষামূলক যাত্রায় রেলমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী ও রেলওয়ে এবং প্রকল্পের কর্মকর্তারা। যাত্রাপথে তারা এ পথের সবকিছু পর্যবেক্ষণ করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com