স্টাফ রিপোর্টার \ সাতক্ষীরা শহরের নারকেলতলার একটি বাড়ির নাম ‘এখানেই নোঙর’। বাড়িটিতে এখন প্রতিবেশী ও স্বজনদের জটলা। বাড়ির লোকজন ঈদের চেয়েও যেন বড় খুশি। বাড়ির ছেলে মনসুরুল আমিন খান ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজ থেকে বেঁচে ফিরেছেন। গত বুধবার রাত ১০টার দিকে বাড়িতে যখন ঢোকেন মনসুরুল, তাঁর মা-–বাবা, স্ত্রী ও তিন সন্তানের ডুকরে কান্নার আওয়াজে চারপাশে কষ্টের চেয়ে খুশি ছড়িয়ে যায় কয়েক গুণ। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধির ২৯ জন নাবিকের মধ্যে একজন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হয়েছেন। উদ্ধারের পর বাড়িতে ফিরে এসেছেন অন্য ২৮ জন। তাঁদেরই একজন মনসুরুল আমিন আর তার বাড়িতে শুক্রবার সন্ধ্যায় কথা হয়েছে আমাদের এ প্রতিনিধির। বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের সহকারী ক্যাপ্টেন মনসুরুল আমিন খান বলেন, ‘২ মার্চ স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটার দিকে হঠাৎ বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে উঠি আমরা। দ্রুত আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করলেও ততক্ষণে হারিয়েছি আমাদের সহকর্মী এক নাবিককে। তাঁকে রেখেই আমাদের দেশে ফিরতে হলো।’ মনসুরুল আমিন বলেন, ‘সে দৃশ্য ভয়াবহ। মৃত্যু দেখেছি। চারদিকে বিকট শব্দ। আকাশজুড়ে ধোঁয়ার কুন্ডলী। এই কয়েক দিন বাড়িতে মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু আতঙ্ক আর হতাশা কিছুতেই পিছু ছাড়েনি। শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটিয়েছি। তবু মনের কোণে আশা ছিল, বাড়ি ফিরবই। বাংলাদেশ সরকার, শিপিং করপোরেশন এবং সর্বোপরি রোমানিয়া দূতাবাসের আন্তরিক চেষ্টায় আমরা সুস্থ ভাবে দেশে ফিরে আসতে পারায় সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ মনসুরুল আমিন খানের বাবা বিএডিসির সাবেক কর্মকর্তা নুরুল আমিন খান ও মা মর্জিনা খানম ছেলেকে কাছে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেন। তাঁরা বলেন, দেশের মানুষের আন্তরিকতা ও ভালোবাসায় তাঁদের সন্তানকে ফিরে পেয়েছেন। মনসুরুলের স্ত্রী আশরুকা সুলতানা ও তিন শিশুপুত্র ফাহিমি, ফারহান ও ফারদিনের খুশির যেন শেষ নেই। তাঁরা বলেন, এ কয়েক দিন কাটানো ছিল যেন এক যুগের বেশি সময়ের প্রতীক্ষা।