জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ যেকোন নির্বাচনে প্রার্থীদের অনলাইনে (ঘরে বসে) মনোনয়নপত্র পাঠানোর জন্য তৈরি বাংলাদেশ ইলেকশন এ্যাপ চলতি মাসের শেষে অথবা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বহুমুখী নানান ধরণের সুবিধা সংবলিত এই অ্যাপ তৈরিতে প্রাথমিকভাবে ব্যয় হচ্ছে ২০ কোটি টাকা। যার মধ্যে সফটওয়্যারের পেছনে ৯ কোটি ১১ লাখ এবং হার্ডওয়ারের পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। প্রস্তুত হওয়া অ্যাপটি আদ্যপান্ত সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনারগণ, কমিশন সচিবসহ উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে অবহিত করবেন নেপথ্যের কারিগররা। এর আগে ট্রায়াল বেইস পর্যবেক্ষণ চালানো হবে। আর চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ অথবা অক্টোবরের প্রথম দিকে এই অ্যাপটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে পুরোদমে। বাংলাদেশ ইলেকশন এ্যাপটি রক্ষণাবেরক্ষণের জন্য বাৎসরিক এই বরাদ্দ রাখা হবে, যাতে সার্বক্ষণিক এটি সচল থাকে। কারণ কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) রক্ষণাবেরক্ষণে ত্রুটির কারণে প্রায় ৪০ হাজার নষ্ট হয়ে যায়। এটি সংস্কারে ব্যয় হয়েছে অনেক টাকা। বর্তমানে ইভিএমটি নির্বাচনে ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তের কারণে কমিশনের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একজন কর্মকর্তা বলেন, এ্যাপটি তৈরির পেছনে সরকারের খরচ হচ্ছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। সমুদয় এই অর্থ হার্ডওয়ার ও সফটওয়্যারের পেছনে ব্যয় হবে। বাৎসরিক রক্ষণাবেরক্ষণের জন্য আলাদা ব্যয় নির্ধারিত থাকবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই এ্যাপে বিশেষ ধরণের চারটি সুবিধা রাখা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, – যেকোন নির্বাচনে ঘরে বসে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন। ভোটারগণ তার ভোটকেন্দ্রটি এই এ্যাপের মাধ্যমে জানতে পারবেন; সঙ্গে সুবিধা পাবেন কোন পথ দিয়ে তাকে কেন্দ্র পৌছাবেন তার পথনিদের্শনা, নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তারা প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর কত ভোট পড়লো তার একটি তথ্য-পরিসংখ্যান বা হিসাব দেখতে পারবেন এবং স্থানীয় সরকারের যে নির্বাচনগুলো হয় তার বিস্তারিত তথ্য যেমন,- কবে নির্বাচনটি হয়েছিল, ভোটার কত ছিল এবং নির্বাচনের মেয়াদ কবে শেষ হবে সেটিও জানা যাবে এর সহায়তায়। তবে চতুর্থ এই স্তরটি ফ্যাংশনাল হতে একটু বিলম্ব হতে পারে বলে জানিয়েছেন ইসির সংশ্লিষ্টরা। ইসির সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ ইলেকশন এ্যাপে সাত ধরণের ব্যক্তির প্রবেশাধিকার থাকবে। যাদের মধ্যে ভোটার, রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, রিটার্নিং কর্মকর্তা, সচিব এবং কমিশনসহ সকলের। এই স্তরে ৯ ধরণের সুবিধা থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত রয়েছে ইসির। এগুলো হচ্ছে, নির্বাচনী এলাকার নাম ও নম্বর; প্রার্থীর নাম, পরিচিতি, ছবি, দলীয় পরিচয় ও মার্কা, হলফনামায় প্রদত্ত তথ্য; ভোট কেন্দ্র সংক্রান্ত তথ্য (কেন্দ্রের নাম ও কেন্দ্রের নম্বর); কেন্দ্র ও ভোটারদের তথ্য (ভোটারগণ যাতে এ্যাপে দেখতে পারেন তাকে কোন কেন্দ্রে ভোট দিতে হবে); কোন কোন আসন, ভোট কেন্দ্রে ইভিএম ও কোন কোন আসন-ভোট কেন্দ্রে ব্যালট ভোট হবে; কেন্দ্র ও আসন ভিত্তিক মোট ভেটার সংখ্যা (পুরুষ ও মহিলা ভিন্ন ভাবে); নির্বাচন শেষে অঅসন-কেন্দ্র ভিত্তিক কোন প্রার্থী কত ভোট পেয়েছে তা সংখ্যায় ও চার্টের মাধ্যমে প্রদর্শণ; দল ভিত্তিক প্রাপ্ত আসন সংখ্যা ও নিকটতম প্রার্থীর পরিচিতি ও প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা। জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ইসির আইটি বিভাগ ঘরে বসে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল সংক্রান্ত এ্যাপটি নিয়ে কাজ করছে। তাদের কার্যক্রম সম্পন্ন হলে সেটি সিইসি ও কমিশনারদের সামনে প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হবে। তাদের সম্মতি মিললে চলতি মাসের শেষে অথবা আগামী মাসের প্রথমাংর্ধে বাংলাদেশ ইলেকশন এ্যাপটির কার্যক্রম শুরু হবে। তবে এটির ক্ষেত্রে বিশেষ চারটি সুবিধা থাকবে। ইসির তথ্যমতে, অলনাইনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র ব্যাপক পরিসরে শুরু হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে। এর আগে ঢাকা-১৭ আসনে সীমিত পরিসরে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমার বিধান রেখেছিল ইসি; যা ছিল টেস্ট কেস। এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান নির্বাচনী বিধিমালায় সংযুক্ত করা হয়। দশম সংসদ নির্বাচনে এই সুযোগ থাকলেও তা কার্যকর ছিল না।সেটি পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক ছিল না। অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সেটির কাগজপত্রও (হার্ড কপি) রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হয়। এখন বিষয়টি পুরোপুরি অনলাইননির্ভর করায় ওই ঝামেলা শেষ হলো।