দৃষ্টিপাত রিপোর্ট ॥ সাতক্ষীরার ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সাথে মিশে একাকার হওয়া নামটি গুড়পুকুর মেলা, কেউ কেউ বা অনেকে আবার বলেন গুড়পুকুরের মেলা। সাতক্ষীরা জেলা সহ আশপাশের জেলাগুলোর জনমানুষের মাঝে বিশেষ ভাবে পরিচিত নাম গুড়পুকুর মেলা। যুগ হতে যুগান্তর এই মেলা সাতক্ষীরার জন সাধারনকে এক সূত্রে গেথেছে। আশ্বিন মাসের শেষে আর ভাদ্র মাসের শুরুতে সাতক্ষীরার শহর আর শহরের সংযোগ সড়কগুলো থাকতো লোকে লোকারান্য। দুর দূরান্ত হতে ব্যবসায়ীরা পণ্য সামগ্রী নিয়ে ব্যবসার পরসা সাজিয়ে ব্যবসা করতো। কি আসতো, না, কি উঠতো না, কোন সামগ্রী আর পন্যের ব্যবসা হতো না? বড় বড় এবং বৃহদাকারের খাট, আলমারী, চেয়ার টেবিল সহ মনোমুগ্ধকর কারুকাজ খচিত ফার্ণিচার, ঘর গৃহস্থালীতে ব্যবহারের সামগ্রী, হারানো দিনের, অতীত কালের স্বাক্ষী সম্বলিত সামগ্রী হাতের তৈরী কুটির শিল্প, নয়নাভিরাম আসবাব পত্র, কাসা, কড়ি, পিতলের সামগ্রী, গুড়পুকুর মেলার বিশেষ আকর্ষন ছিল ছোটদের চোখ ধাদানো সব খেলান সামগ্রী। লোহার হাসুয়া, দাও, ছুরি, হাড়ি পাতিল, কৃষি সামগ্রী। বিভিন্ন জাতের বিভিন্ন ধরনের ফলমুলের গাছ, ঔষধী গাছ গাছালি। গড়ুপুকুরের মেলা কেবল সাতক্ষীরা জেলাবাসির আগ্রহ আর উৎসাহের প্রতিক ছিল না। এই মেলায় যুশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া সহ বিভিন্ন জেলা হতে ব্যবসায়ীরা ও দর্শনার্থীরা আসতো। যাত্রাগান, জারি, সারি, মারফতী গানের উৎসব চলতো, সার্কাস, নগরদোলা সহ ম্যাজিক খেলা চলতো চমৎকার। কিন্তু সেই ঐতিহ্যময় আনন্দস্রোতী, প্রাণের উচ্ছ্বাস এর মেলা সাম্প্রতীক বছর গুলোতে অনুপস্থিত। নেই প্রাণের স্পন্দন, উৎসব, উচ্ছ্বাস আর ব্যস্ততা, গাড়িতে নেই ভিড়, সড়কে সড়কে নেই জনস্রোত, সবই যেন হারিয়ে যেতে বসেছে, সাতক্ষীরার অতি প্রাচীন উৎসব গুড়পুকুর মেলা, কোন কোন ঐতিহাসিক এর কথামত এবং জনশ্র“তি আছে তিনশত বছরের পুরাতন উৎসব এই গুড়পুকুর মেলা, সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল গুড়পুকুরের ধারে বটগাছে নিচে ভাদ্রমাসের শেষ দিনে মনসা পূজা হয়। এ বছরের শেষ ভাদ্রে অনুরুপ মনসা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সেই হতে শহরময় মেলা বসে। এই মেলায় স্বতস্ফুর্থ ভাবে সব ধর্মের সব বর্ণের মানুষের উপস্থিতি দৃশ্যতঃ সাতক্ষীরাকে সম্প্রীতির সেতুবন্ধন আবদ্ধ করে। কিন্তু জেলাবাসি অত্যন্ত বেদনার সাথে প্রত্যক্ষ করেন ২০০২ সালে গুড়পুকুর মেলা চলাকালে শহরের একটি সিনেমা হলে এবং স্টেডিয়ামের সার্কাস প্যান্ডেলে তিনটি শক্তিশালী বোমা বিষ্ফরনের ঘটনা ঘটে। মৃত্যু হয় তিনজনের আহত হয় অগনিত সেই বেদনাময়, কলঙ্কিত ঘটনা গুড়পুকুর মেলার বৃহৎ আয়োজনে ছন্দ পতন ঘটলেও জেলাবাসির মানস পটে আলোকিত বিদ্যমান এই মেলা। সাম্প্রতীক বছর গুলোতে গুড়পুকুর মেলা শহীদ রাজ্জাক পার্ক এলাকায় সীমাবদ্ধ জৌলুস নেই তবে প্রাণের স্পন্দন, উৎসব, আকুতি আর প্রবল ইচ্ছা শক্তির সামান্যতম ঘাটতি নেই। গ্রামের লোকেরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকতো সাতক্ষীরা শহরের গুড়পুকুর মেলায় যাওয়ার সেই প্রবল, অদম্য আগ্রহ কেবল আগ্রহই থাকছে। তারপর ও গ্রামের লোকজন আসা শুরু করেছে। শহরের মানুষরা প্রতিমুহুর্তে যাচ্ছে, ভিন্ন জেলার লোকজন ও ব্যবসায়ীরাও আসছে, জেলা বাসির প্রত্যাশা আবারও গুড়পুকুর মেলা তার জৌলুস ফিরে পাক।