জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক কর্মীদের (দল বা প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট) প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা চিন্তা করছে নির্বচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা (আরও) ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা (এআরও) মূলত তাদের প্রশিক্ষণ দেবেন। তবে কত সংখ্যক সদস্যকে এই প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। এর আগে আগামী ৪ অক্টোবর একটি সংলাপ করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এই সভায় চার স্তরের অভিজ্ঞতা সম্পর্ক ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। নির্বাচনে পোলিং এজেন্টদের কি ধরণের ভূমিকা হওয়া উচিত; সে বিষয়ে তাদের মতামত নেওয়া হবে। আমন্ত্রিতদের মধ্যে সাবেক সিইসি-কমিশনার, সিনিয়র সাংবাদিক, পেশাজীবী শ্রেণির মধ্যে শিক্ষক এবং ইসির সাবেক কর্মকর্তা থাকবে। প্রতিটি স্তর থেকে বিশিষ্ট চারজনকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর সুধীজনদের নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা কর্মশালার আয়োজন করেছিল ইসি। ইসি সূত্র বলছে, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর জেলা পর্যায়ে একজন করে রাজনৈতিক কর্মীকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। নিবন্ধিত ৪২ রাজনৈতিক দল থেকে প্রতিটি জেলার একজন করে সমসংখ্যক ব্যক্তি অংশ নিবেন। আমন্ত্রিত রাজনৈতিক কর্মীরা জুমে ইসির সঙ্গে সংযুক্ত থাকবেন। কিন্ত ওই সভায় তারা মতামত প্রকাশ করতে পারবেন না। তারা শুধু সভার সিদ্ধান্তগুলো নোর্ট করে রেখে দলীয় ফোরামে আলোচনা করবেন। সে আলোকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পোলিং এজেন্টরা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। রাজনৈতিক কর্মীদের সভায় উপস্থিত থাকতে ইসির জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের ইসি সচিবালয় থেকে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। এসব কর্মকর্তারা স্থানীয় দলগুলোর নীতি-নির্ধারণীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে অনুরোধ জানাবেন। জেলা পর্যায়ের একটি নিদিষ্ট কক্ষে অবস্থান করে কমিশন সভার সিদ্ধান্তগুলো অবলোকন করবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপি রোধে প্রার্থীর পক্ষে পোলিং এজেন্টের ভূমিকা কী হতে পারে, পোলিং এজেন্ট তাঁর প্রার্থীর পক্ষে আইন ও বিধি অনুযায়ী কীভাবে দায়িত্ব পালন করে, পোলিংকে স্বচ্ছতার রূপ দিয়ে নির্বাচন কীভাবে প্রভাবমুক্ত রাখতে পারে, নির্বাচনের ফলাফলে জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটিয়ে কীভাবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করিয়ে আনতে পারেন, প্রার্থী কী ধরনের পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করবেন এবং কীভাবে তাঁকে দায়বদ্ধ করবেন। নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, রাজনৈতিক কর্মীদের একটা প্রশিক্ষণ দেয়ার চিন্তা রয়েছে ইসির। তবে সেটি এখনিই নয়। নির্বাচনী তফসিল ঘোষনার পর দেয়া হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা এই প্রশিক্ষণ দেবেন। তবে কত-সংখ্যক কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। এক প্রসঙ্গে সচিব বলেন, নির্বাচনে পোলিং এজেন্ট গুরুত্বপূর্ণ। সিইসি ও কমিশনদ্বয় মনে করছেন তাদের ভোটে একটা রোল প্লে থাকে। সূত্র আরও জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ২২ ধরনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করবে ইটিআই। এর আওতায় বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত ৯ লাখ ৮৮ হাজার ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরমধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক ও দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও। তাদেরও দিনব্যাপী নির্বাচনি প্রশিক্ষণ দেবে কমিশন। যদিও ওই প্রশিক্ষণের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওরিয়েন্টেশন বা ব্রিফিং’। কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ে পৃথকভাবে এসব প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে, রাজনৈতিক কর্মীদের আগাম প্রশিক্ষণ দেয়া নিয়ে কিছুটা বিতর্ক তৈরি হয় বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। পরে আগের ফরমেটে পরিবর্তন এনে সাবেক সিইসি-কমিশনার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ইসির সাবেক দক্ষ কর্মকর্তাদের অভিব্যক্তি, মতামত ও পরামর্শগুলো নিয়ে পরবতীতে অর্থাৎ তফসিলের পর রাজনৈতিক কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে রাজনৈকি কর্মীদের বৈঠকে সংযুক্ত রেখে আগাম ধারণা পৌছানোর চিন্তা ইসির।