বাঁশের তৈরী শিল্প সামগ্রী কেবল জীবনের কথা বলে না, পরিবেশকেও সুরক্ষিত রাখে
দৃষ্টিপাত রিপোর্ট ॥ সাতক্ষীরার ঐতিহ্য হিসেবে খ্যাত এবং বহুল পরিচিত ব্যবহৃত বাঁশের তৈরী কুটির শিল্প কেবল হত দরিদ্র শ্রমজীবী পরিবারের জীবন জীবিকার উৎস্য তা নয় পরিবেশ সহনীয় তথা পরিবেশ বান্ধব হিসেবে বাস্তবতার নিরিখে পরীক্ষিত। সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে যাচ্ছে এই শিল্প, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে প্লাষ্টিক এবং পলিথিন সামগ্রীর সহজলভ্যতা আর চাকচিক্যময়তায় জনগোষ্ঠী ঝুকছে উল্লেখিত সামগ্রীর প্রতি। বাঁশের তৈরী ঝুড়ি, টাবড়া, চৌবাচ্চা, কুলা, খাচা, মাচা, চাটাই, গোলা, মোড়া, মাছ ধরার চাই, বাঁশের তৈরী ঘর, শিশুদের ঘুম পড়ানোর হেলনা, প্রভৃতি। সম্পূর্ণ ঘরোয়া পরিবেশে বিনা পুজিতে অথবা অপেক্ষাকৃতকম মুলধনের এই ব্যবসায় অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবন জীবিকার উৎস্য। পুজি বলতে বাঁশ ক্রয়ের অর্থ। কোন খারখানায় উৎপাদন হয় নাম, বাড়ীর উঠানে, বারান্দায় আবার সড়ক এর পাশে রৌদ্রে পুড়ে বর্ষায় ভিজে জীবন যুদ্ধে সংগ্রামরত মানুষরা এ সকল কুটির শিল্প তৈরী রত। তারা তাদের জীবন ধারনের জন্য হাতের কারিশমায় এসকল কুটির শিল্প তৈরী করে অথচ তারা জানেনা তাদের এই কর্মযজ্ঞ অনবদ্য সৃষ্টি, সুশোভিত শিল্প। সাতক্ষীরা শহর হতে ২৫/৩০ কিলোমিটারের পথ দেবহাটা, সখিপুর, সড়কের উপজেলা সদর সংলগ্ন কোড়া এলাকায় এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে। পৈত্রিক ব্যবসা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বাশের তৈরী কুটির শিল্প তৈরীতে মহিলারাও পিছিয়ে নেই। একই উপজেলার সখিপুর হাসপাতাল সংলগ্ন ঋষি পল্লীতে ও পৈত্রিক এই কর্মযজ্ঞ চলমান, সকাল, দুপুর সমানতালে তারা তাদের জীবন যুদ্ধের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে চলেছে। সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎহীনতায় তথা আলোর অভাব হেতু তারা কাজ করতে পারে না। একই উপজেলার হাদিপুর জগন্নাথপুর এলাকাতেও বছরের পর বছর যুগ যুগ ধরে কুটির শিল্প কর্মযজ্ঞের সাথে জড়িত ঋষি পল্লীর বাসিন্দারা। এক সময় বাশের তৈরী নিত্য ব্যবহৃত ব্যবসায়, কৃষিতে অপরিহার্য সামগ্রীর অত্যাধিক চাহিদা থাকলেও বর্তমানে চাহিদা কম, চাকচিক্যময় টেকসই প্লাষ্টিকের সামগ্রীর দিকেই সকলে ঝুকছে। আবহাওয়াগত কারনে বাঁশের তৈরী সামগ্রী দীর্ঘ স্থায়ী না হওয়াটা অন্যতম কারন কিন্তু আর্থিক মূল আর পরিবেশে বিষয়টি আমলে নিলে বাঁশের তৈরী সামগ্রীগুলোই সর্বোসর্বা, বাঁশ কোন ভাবেই পরিবেশের প্রতিপক্ষ নয়, পরিবেশ দুষন করে না, পরিবেশের সাথে প্রাকৃতিক ভাবে মিশে থাকে। ঋষিপল্লীর কুটির শিল্পের শিল্পীরা জানালেন দিন দিন পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে ক্রেতারা বাঁশের তৈরী শিল্প সামগ্রীর দিকে ঝুকছে। নুন আনতে পানতা ফুরানো, দিন আনা দিন খাওয়া জনগোষ্ঠী এই পেশার সাথে জড়িত। তাদের সুযোগ সুবিধা সীমিত, এই শিল্প রক্ষা করতে হবে। পরিবেশ আর প্রাকৃতিকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। সরকারি সহায়তা, অল্প সুদে অথবা বিনা সুদে ঋন সেই সাথে প্রনোদনার ব্যবস্থা তাদের জন্য অতি জরুরী। গতকাল দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোড়ার কুটির শিল্প পল্লী পরিদর্শন করেন, তাদের শিল্পকর্ম প্রত্যক্ষ করেন, সুবিধা, অসুবিধা আর সম্ভাবনার বিষয়ে জানালেন, দীর্ঘ সময় এই পেশায় জড়িতদের সাথে অবস্থান করেন।