বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে গেছে হাসিনার স্বৈরতন্ত্র: কূটনীতিকদের ইউনূস ভারতে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা চিকিৎসকদের নলতা আহসানিয়া মিশন রেসিডেনসিয়াল কলেজের অধ্যক্ষের দুর্নীতি ॥ উত্তাল নলতা ॥ শিক্ষক কর্মচারীরা মতবিনিময় করলেন ডাঃ শহিদুল আলম ও চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের সাথে মহামারীর দ্বারপ্রান্তে গাজা আলোচনায় থাইল্যান্ড ॥ বন্দী থাকসিন মুক্ত হরিনগর বাজারে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদের মাঝে নগদ অর্থ প্রদান পাইকগাছায় একটি বাঁশের সাঁকো পারাপারে এলাকাবাসীর চরম ভোগান্তি মাথাভারি হচ্ছে প্রশাসনের ॥ বাড়ছে সরকারের দু:চিন্তা ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ এর পদত্যাগ দাবীতে-মানববন্ধন চাম্পাফুল ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত

আইনি জটিলতায় ভোটাধিকার বঞ্চিত কোটিও বেশি নাগরিক

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩

জি এম শাহনেওয়াজ, ঢাকা থেকে ॥ আইনি ফাঁদে আটকে গেলো এবারও পোষ্টাল ব্যালটে ভোটদান কার্যক্রম। জটিলতা কাটাতে দরকার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ (আরপিও) সংশোধন। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় আপাতত সংশোধনের সুযোগ নেই। ফলে দেশে-বিদেশে থাকা কোটি নাগরিক ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে হচ্ছেন বঞ্চিত। বিপুর সংখ্যক নাগরিকের মধ্যে রয়েছে, – নির্বাচনের কাজে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারি, দেশীয় সাংবাদিক, নির্বাচনী পর্যবেক্ষক এবং প্রবাসে থাকা কোটি নাগরিক। সংযুক্ত-আরব আমিরাতসহ প্রায় ৪০টি দেশে ভোটার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু আইনি মারপ্যাঁচে পছন্দের জন-প্রতিনিধি নির্বাচনে এই নাগরিকদের স্বপ্ন থেকে যাচ্ছে অধরা। কমিশন বলছে, বর্তমান আরপিও বিধান অনুযায়ী ভোট হওয়ার দিনই ফলাফল প্রকাশ করা হয়। রিটার্নিং কমিশন সর্বোচ্চ ভোটদাতাকে বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করে ফলাফল পাঠান কমিশনে। পোষ্টাল ব্যালটে ভোট হলে নির্ধারিত সময়ে ভোটদাতাদের মতামত ইসিতে পৌছানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ এটি ডাকযোগে পাঠাতে হয়। আসতেও কয়েকদিন সময় লেগে যেতে পারে। তাই পোষ্টাল ব্যালটের সিদ্ধান্তের জন্য ফলাফল আটকে রাখা হলে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যেতে পারে। আরপিও সংশোধন ছাড়া এই প্রক্রিয়ায় যাওয়ার সুযোগ নেই। এ নিয়ে কমিশনে আলোচনা হলেও ফলাফল দাঁড়ায় শুন্য। ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, পোষ্টাল ব্যালটে ভোট নেয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শুধু প্রবাসী নাগরিক নন; দেশের অনেকেই নির্বাচনী কাজে ভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব পালন করতে হয়। তারাও এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কারণ আরপিওতে পোষ্টাল ব্যালটে ভোটদানে যে বিধানটি বলা আছে, সে অনুযায়ী কমিশন ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এখনো তফসিল ঘোষণা হয়নি তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, পোষ্টাল ব্যালটে ভোটদানের বিষয়ে কমিশনের আলোচনায় উঠেছিল। কিন্তু বিদ্যমান আইনে সেটি কাভার করে না, বিধায় সিদ্ধান্তটি আলোচনা পর্যায়ে থেমে যায়। তিনি বলেন, এ পদ্ধতিতে ভোট আয়োজন করতে চাইলে অবশ্যই আরপিওতে সংশোধনী আনতে হবে। অন্যথায় আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে। কারণ পোষ্টাল ব্যালটে ভোট দেয়ার পর সেটি আসতেও বিলম্ব হয়ে যাবে। ততদিন পর্যন্ত নির্বাচনী ফলাফল আটকে রাখা সম্ভব না। তাই আপাতত এ পদ্ধতিতে ভোট প্রক্রিয়ার চিন্তা কমিশনের নেই বলে জানান প্রশাসন সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ এই কর্মকর্তা। ইসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদায়ী কে এম নুরুল হুদা কমিশন পোষ্টাল ব্যালট ব্যবস্থাটি সংস্কার ও কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছিল। এ জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও বিধি সংশোধনের কাজেও হাত দিয়েছিল তারা। ওই কমিশন চেয়েছিল আরপিও সংশোধন করে পোস্টাল ব্যালটের ব্যালট অনলাইনে দিতে। এই ক্ষেত্রে নাগরিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশি¬ষ্ট নির্বাচনী এলাকায় প্রতীক বরাদ্দের পর অনলাইনে ব্যালট পেপার দেওয়া থাকবে। সেখান থেকে নাগরিকেরা একবারই সেটি ডাউনলোড করতে পারবেন। কারণ একজনের জন্য একটিমাত্র নির্দিষ্ট নম্বর দিয়ে একটিমাত্র ব্যালট পেপারই অনলাইনে সরবরাহ করা হবে। অনলাইনে থেকে ডাউনলোড করে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে সংশি¬ষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে দেবেন। কিন্তু তারা সেটি কার্যকর করে রেখে যেতে পারেননি। বর্তমান কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সু-সংহত করতে আরপিও’র কিছু ধারায় সংশোধন, কিছু ধারা সংযোজন করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের পথকে প্রশস্ত করেছেন। ইতিমধ্যে তাদের সংশোধিত আইনটি সংসদে পাস হয়েছে। কিন্তু বিপুল একটি সংখ্যক মানুষ নির্বাচনী কাজে যুক্ত যার সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ এবং প্রবাসে থাকা রেমিটেন্স যোদ্ধা রয়েছে আরও কোটি মানুষ। সব মিলিয়ে সোয়া কোটি মতো মানুষ পোষ্টাল ব্যালট পদ্ধতিটি যুগোপযোগী না হওয়ায় ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে দূরে থাকছে। আরপিও সংশোধনের সময় এ ধারাতে সংশোধনী আনা হলে ওই সংখ্যক মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারতেন। কিন্তু যখন কমিশন এই উদ্যোগটি নিয়ে আলোচনায় বসেন তখন আইন সংশোধনের মতো পর্যান্ত সময় হাতে ছিল না। ফলে তাদের আলোচনাটি প্রাথমিক পর্যায়ে থেমে যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্বাধীনতা পরবর্তী ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ আগামী বছরের প্রথম সপ্তাহে হওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে ইসির। কিন্তু এখন পর্যন্ত পোষ্টাল ব্যালটে ভোট নেয়া হয়েছিল কি না সে তথ্য কেউ জানাতে পারেনি। ফলে বিপুল জনগোষ্ঠী ভোটদান থেকে দূরে থাকছে বছরের পর বছর। সংশ্লিষ্টরা বলছে, বিদ্যমান আরপিও অনুযায়ী বাংলাদেশি ভোটাররা দুই ভাবে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। একটি হচ্ছে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে সরাসরি ভোট দিতে পারেন। আর অন্যটি পোষ্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটদান। পোষ্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ১৫ দিনের মধ্যে ভোটারকে সংশি¬ষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ব্যালট পেপারের জন্য আবেদন করতে হয়। পরবর্তী সময়ে প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার পর পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ব্যালট পেপার পৌঁছানো হয়। এরপর ভোট দিয়ে সিলগালা করে সেটি আবার পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আগে সংশি¬ষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে হয়। এই প্রক্রিয়াটি বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার বলে তা কার্যকর নয় বলে জানিয়েছে ইসি কর্মকর্তা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই প্রবাসেই ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা চেয়েছিলেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ২০১৭ সালে ১৮ ডিসেম্বর আইনমন্ত্রীকে এই বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। যার কপি তৎকালীন সিইসির কাছেও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এটিও চালু করা যায়নি। বিগত কমিশন যেটা পারেনি; ওই পথেই হাটছে এই কমিশনও। ফলে বিশাল একটি জনগোষ্ঠী প্রতিবারের মতো এবারও ভোটদান থেকে বিরত থাকতে হচ্ছে কমিশনের সদিচ্ছার অভাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com