জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ দারিদ্র্যসীমার নিচে (দুংস্থ পরিবার) বসবাসকারী নাগরিকদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানে কাজ করছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট। পরীক্ষামূলক (পাইলট) প্রকল্পের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগামীতে বরিশাল জোনে এই কার্যক্রম হাতে নিতে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে কার্যাদেশ প্রদান প্রক্রিয়া সম্পন্নের পথে। নিদিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দারিদ্র্যসূচকের মান নির্ণয়ের মাধ্যমে দুংস্থ পরিবারকে প্রদান করা হবে হেলথ কার্ড। কার্ডধারী পরিবারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ১১০টি রোগের চিকিৎসা নিতে পারবেন বিনামূল্যে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির (এসএসকে) আওতায় সরকারের এই উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হবে বেসরকারি সংগঠনের সহায়তায় (এনজিও)। বিনামূল্যে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. এনামুল হক বলেন, দুংস্থ পরিবারের সদস্যদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এসএসকে নামে এই প্রকল্পের অধীনে একটি হেলথ কার্ড প্রদানের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে আমরা কাজ করছি। টাংগাইল জেলার হাতিহাতি উপজেলা দিয়ে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৬ সালে ২৪ মার্চ কার্যক্রমটি শুরু হয়। পরবর্তীতে মধুপুর ও ঘাটাইল দুটিতে সম্প্রসারণ করা হয়। সেখানের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে টাংগাইলের সব উপজেলার পাশাপাশি ঢাকা দুই সিটি এলাকা, বরিশাল, বরগুনা, মানিকগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলায় কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে দেশব্যাপী এসএসকে সম্প্রসারণ করার প্রয়াস চলমান রয়েছে। স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের পরিচালক গবেষণা ড. সৈয়দা নওশীন পার্ণিনী বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বল্প আয়তনের জনবহুল দেশ। পরিবেশ দূষণ, বাঙালির ভোজনপ্রিয়তা, সুস্বাস্থ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে উদাসীনতা প্রভূতি কারণে আমাদের দেশের মানুষ বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের আয় বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে চিৎকিসা ব্যয়। প্রতিটি পরিবারের আয়ের একটি বড় অংশ চিকিৎসাখাতে ব্যয় হচ্ছে। যে কারণে পরিবারের কোনো সদস্য অসুস্থ হলে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী পরিবারে নেমে আসে অসনীয় বিপর্যয়। দুংস্থ পরিবার যাতে বিনামূল্যে চিকিৎসা পেতে পারেন সেজন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে; যোগ করেন এই কর্মকর্তা। রোগীর চিকিৎসা ব্যয়ে বিরুপ প্রভাব : বর্তমানে চিকিৎসা নিতে রোগীর পকেট থেকে অস্বাভাবিক ও মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় হয় ৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ; প্রতি বছর আনুমানিক ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য সেবা থেকে বিরত থাকেন এবং চিকিৎসাগ্রহণকারী ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ (পরিবারের মোট আয়ের ১০ শতাংশ ভিত্তিতে) পরিবার বিপর্যয়মূলক স্বাস্থ্য ব্যয়ের সম্মুখিন হয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির উদ্দেশ্যে : হাসপাতালে আন্তঃবিভাগীয় সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে দরিদ্র জনসাধারণের জন্য বিদ্যমান আর্থিক প্রতিবদ্ধতা দূর করা; দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নিজস্ব পকেট হতে ব্যয় হ্রাস ও চিকিৎসার বিপর্যয়মূলক ব্যয় থেকে দরিদ্রদের রক্ষা করা এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্যে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থাপনা : দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী পরিবার নিবন্ধন, এসএসকে কার্ড বিতরণ, এএসকে বুথ পরিচালনা, ক্লেইম ব্যবস্থাপনা ও স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করা এবং জেলা হাসপাতাল স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটি এবং উপজেলা হাসপাতাল স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নে মাসিক সভার অগ্রগতি পর্যলোচনা করা। স্বাস্থ্য সুরক্ষার কার্যক্রম: দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী প্রতিটি পরিবারকে একটি করে এসএসকে কার্ড প্রদান। এটি ব্যবহার করে পরিবারের সকল সদস্যই স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের সুযোগ গ্রহণ; প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসএসকে বুধ ও ফার্মেসি স্থাপন; সার্বক্ষণিক (২৪/৭) মানসম্মত সেবা ও ঔষধ সরবরাহ, ভর্তি হওয়া রোগীর রোগ নির্ণয়ের জন্য পারীক্ষা-নিরীক্ষা ও অপারেশন সবকিছুই বিনামূল্যে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অভিজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা বিনামূল্যে নরমাল ডেলিভারী, সিজারিয়ানসহ মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা প্রদান এবং এসএসকে কার্ড নিয়ে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হলে ১১০টি রোর্গের পূর্ণ চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ প্রদান।