ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধ ॥ যেখানে চোখের জলে স্বপ্ন মুছে যায়, জীবনের শেষ ইচ্ছেটুকু পূরণ করা সম্ভব হয় না এমন এক ইউনিয়নে আমাদের বসবাস। অশ্র“সিক্ত নয়নে এমন অনুভূতি প্রকাশ করলেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল মজিদ। প্রশ্ন করতেই তার চোখ থেকে বেরিয়ে এলো অনবরত অশ্র“। দেখলে যেন মনে হবে কোন এক শোকে পাথর তিনি। আসলেই বাস্তবতার নিরিখে তিনি বলতে লাগলেন আমি আমার সন্তানকে রাস্তার কারণে চিকিৎসা ঠিক মতো করতে পারেনি এমন কি তার মৃত্যুর আগে আমার কাছে দাবি করেছিল শেষবারের মতো জন্ম ভিটা দেখার। আমি পিতা হয়ে আমার কলিজার টুকরা সন্তানের শেষ ইচ্ছাটুকু পূরণ করতে পারিনি। শ্যামনগর উপজেলার সীমান্তবর্তী কৈখালী ইউনিয়ন দীর্ঘদিন অবহেলায় নিপতিত। যেখানে যতটুকু রাস্তাঘাট হয়েছে সেখানেই দুর্নীতি স্পর্শ করেছে। যেখানে ইটের সলিং রাস্তা হয়েছে ইটের নিচে বালু নেই। থাকলেও নামমাত্র। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যেন দেখেও দেখে না। আবার কোথাও দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছেন খোয়া বিছানো রাস্তা। জনগণ ভোগান্তিতে চলছে চলুক দিন তো কেটে যাচ্ছে। আবার কোথাও ইটের সোলিং রাস্তা আছে কিন্তু ৫০ অথবা ১০০ মিটার ইটই নাই। এরকম তথ্যচিত্র ইউনিয়ন জুড়ে সর্বত্র স্পষ্ট। কে দেখবে কার দায়িত্ব এগুলো এমন প্রশ্ন জনমনে। জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন ইটেরসোলিং রাস্তা গুলোর ইট কোথায় গেল? কাদামাটির রাস্তা যাতায়াতের জন্য কতটুকু কষ্টদায়ক তা লেখনি ভাষায় তুলে ধরা সম্ভব নয়। অন্তর আত্মা দিয়ে উপলব্ধি করার বিষয় মাত্র। মৎস্য ও কৃষি নির্ভর এ ইউনিয়নে সকালে সূর্য ওঠার আগেই মৎস্য ব্যবসায়ীদের তোর জোর শুরু হয় মাছ নিয়ে মৎস্য সেটে যাওয়ার, শিক্ষার্থীদের প্রত্যুষে শুরু হয় কোচিং। মেঠো পথ আর ইটের সলিং দিয়ে আসতে বর্ণনাতীত কষ্টের স্বীকার হতে হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। কখনো কখনো দুর্ঘটনা স্বীকার হচ্ছে। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ব্যবসায়ীরাও এর বাইরে নয়। শুধু মৎস্য ব্যবসায়ী নয়, সব ধরনের ব্যবসায়ী, কোমলমতি শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ জনসাধারনের যাতায়াতের জন্য এ ধরনের রাস্তাগুলো খুবই বিপদজনক হয়ে উঠেছে। পরানপুর হাই স্কুল সংলগ্ন চৌরাস্তা থেকে ঋষি পড়া হয়ে ৬৭ নম্বর পরানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত সংযোগ রাস্তাটি বর্ষা মৌসুমে চলাচলের জন্য একেবারে অনুপযোগী, ষষ্ঠীর মোড় থেকে বি জি বি সড়ক হয়ে কাঁঠামারী পর্যন্ত সংযোগ সড়কটি বেহাল দশাই কয়েক বছর পড়ে আছে। সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের নজরে আসেনি। আধুনিক জীবনায়নের জন্য যোগাযোগ, যাতায়াত ব্যবস্থার বিকল্প নেই। এ অঞ্চলের মানুষ আধুনিক জীবনের ছোঁয়া পেলেও আধুনিকতা ও উন্নত জীবনমানের স্বাদ গ্রহণ করতে পারেনি। অনুন্নত যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে উন্নত জীবনের স্বাদ গ্রহণে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তাগুলো বিনির্মাণ ও সংস্কার একেবারে জরুরী হয়ে পড়েছে। বিষয়টি দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধিদের প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকার সুশীল সমাজ।