কৃষ্ণনগর (কালিগঞ্জ) প্রতিনিধি ॥ স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নুরজাহান নামে এক ৩ সন্তানের জননী গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১১ অক্টোবর বুধবার রাত আনুমানিক ৮টায়। উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের (মোল্লারহাট) রঘুনাথপুর গ্রামে। সে শ্যামনগর উপজেলার চরের বিলের মৃত মতিয়ার রহমান শানার মেয়ে এবং কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত ময়না সরদারের পুত্র ইউপি সদস্য আঃ গফফার এর স্ত্রী। সরেজমিনে জানা যায় কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আঃ গফফারের স্ত্রী তার স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নিজ বসত ঘরের আড়ার সাথে দড়ি দিয়ে গলায় ফাস লাগিয়ে আত্নহত্যার চেষ্টা করে। দ্রুত দড়ি কেটে নামিয়ে পাশ্ববর্তী শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করে।নিহত নূরজাহান এবং অভিযুক্ত মেম্বার আঃ গফফারের বড় ছেলে আঃ গফুর বলেন সন্ধ্যা থেকে আব্বা,আম্মা স্বাভাবিক ছিল মাগরিবের পরে আব্বা বাহিরে চলে যায় এবং পরে বাড়িতে এসে লাইট অফ করে ঘরের দরজা বন্ধ থাকতে দেখে। বাহির থেকে দোকানের লাইট জালিয়ে বসত ঘরের দরজা খুলে আম্মাকে দড়ির সাহায্য ঘরের আড়ার সাথে ঝুলে থাকতে দেখে চিৎকার করে এবং দ্রুত রশি কেটে নামায়। কিন্তু নামানোর পরে নূরজাহান জীবিত ছিল কিনা? সেটা সঠিক ভাবে বলতে পারেননি। পরে পাশ্ববর্তী শ্যামনগর উপজেলা কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নূরজাহানকে মৃত ঘোষণা করে। ঘটনার আগের দিন তার আব্বা, আম্মা ঝগড়াঝাটি মারামারি করেছিল বলে সে জানায়। এদিকে নুরজাহানের ভগ্নিপতি একই ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের বাসিন্দা আঃ জব্বার বলেন আমি আত্মহত্যার ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে আসার পরে স্থানীয়রা জানায় গতকাল তারা স্বামী-স্ত্রী ঝগড়াঝাটি-মারামারি করেছে এবং আজ নূরজাহান আত্মহত্যা করছে। আঃ গফফার বিয়ের পর থেকে অধিকাংশ সময় নুরজাহানকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতো। এ বিষয়ে নুরজাহান একাধিকবার অভিযোগ করলেও আমরা তাকে শান্তনা সহ সবকিছু মানিয়ে নিয়ে সংসার করার জন্য পরামর্শ দিতাম। তবে কিছু দিন আগে আঃ গাফফারের নির্যাতনের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পাওয়ায় আমি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামকে মৌখিকভাবে অবহিত করায় সে আমার উপরও চড়াও হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পার্শ্ববর্তী কয়েকজন দোকানদার বলেন গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ইউপি সদস্য আঃ গফফার বাজারের দিক থেকে এসে মোকছেদ নামের এক ব্যক্তির সাথে কথা বলতে ছিল। এক পর্যায়ে স্ত্রী দোকানের মধ্য থেকে তার স্বামী মেম্বারকে উদ্দেশ্য করে বলে বিচারটা সঠিক হয়নি একথা শোনার সাথে সাথে উভয়ই কথা কাটাকাটিতে লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে গফফার মেম্বর স্ত্রীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে জুতা ছুড়ে মারে, স্ত্রীও পাল্টা ফ্যান ছুড়ে মারায় দোকানের মধ্যে গফফার-নুরজাহান ধস্তাধস্তি শুরু করায় তার ছেলে আব্দুর রউফ ও আঃ গফুর ছুটে আসে এবং ছোট ছেলে আব্দুর রউফ তার বাবাকে আঘাত করে ছাড়িয়ে নেয়। তখন নূরজাহান পাশেই পড়েছিল। তারা ইতিপূর্বে অনেকবারই মারামারি করেছে এবং আঃ গফফার তার স্ত্রীকে বেদম প্রহারও করেছে। অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আঃ গফফারের ব্যবহৃত ০১৭১১২১০৩৯২ মোবাইল নাম্বারে বারবার যোগাযোগ করা হলেও নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। যে কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মামুন রহমান জানান কৃষ্ণনগর ইউপি সদস্যের স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে মর্মে জানতে পেরে লাশের সুরত হাল শেষে মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যা নাকি আত্মহত্যা ময়না তদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত বলা যাবে না এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।