# ভোটার তালিকা মুদ্রুণের দায়িত্ব পাচ্ছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা
# নথি উত্থাপন সহসাই চলতি সপ্তাহে মিলতে পারে অনুমোদন
জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উপজেলাওয়ারী ভোটার তালিকা মুদ্রুণে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। দায়িত্বটি রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা কর্মকর্তাদের করার কথা। কিন্তু তাদের না দিয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের উপরে এই দায়িত্ব বর্তানো হচ্ছে। নানা অজুহাতে উপজেলা কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থেকে ক্ষমতাচ্যুত করার ঘটনায় মাঠ পর্যায়ে বাড়ছে ক্ষোভ-অসন্তোষ ও হতাশা। এর আগে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করার ক্ষেত্রে তাদেরকে কামলা বানিয়ে প্রশাসনকে দিয়ে এই কাজটি করানোর অভিযোগ উঠেছিল। এ নিয়ে অভিযোগ-অনুযোগের অন্ত ছিল না ইসির মাঠ কর্মকর্তাদের। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এমন আজগুবি ও হঠকারী সিদ্ধান্তে ক্ষোভে ফুঁসছে উপজেলা কর্মকতারা। চলতি মাসের ৮ তারিখে মাসিক সমন্বয় সভা হয়। এ সভাতে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের ভোটার তালিকা মুদ্রুণের দায়িত্ব দেয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সব ধরণের প্রস্তৃুতি সম্পন্ন। এখন কমিশনের অনুমতি মিললে বাস্তবায়নে যাবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। চলতি সপ্তাহে এ সংক্রান্ত নথিতে ইসির অনুমোদন মিলতে পারে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, মাসিক সমন্বয় সভায় ভোটার মুদ্রুণের কাজটি ইসির উপজেলা কর্মকর্তা থেকে জেলাকে দায়িত্ব দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এখন কি সমস্যা হতে পারে সেটা নিয়ে আলোচনা করা হবে। জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে যেটা করলেও ভালো হয় সেটাই করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোটার তালিকা মুদ্রুণ একটি জটিল ও স্পর্শকাতর বিষয়। রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তা হিসেবে মুদ্রুণের এখতিয়ার উপজেলা বা থানা কর্মকর্তাদের। আইনে সেটাই নিদের্শনা রয়েছে। তবে এক শ্রেণির কর্মকর্তার পরামর্শে ও আর্থিক বাণিজ্য ও নানা অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতা খর্ব করে উপজেলা কর্মকর্তাদের বদলে কাজটি জেলাকে দেয়া হচ্ছে। এই কাজটির কারণে ভোটার মুদ্রুণে নানা জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। কারণ জেলাওয়ারী বিচেনায় কোন জেলায় ভোটার মুদ্রুণের জন্য ৪০ লাখ টাকার বরাদ্দ লাগতে পারে। আবার কোনো জেলায় ৩০, ২৫, ২০ অথবা ১৫ লাখ টাকাও ব্যয় নির্ধারণ হতে পারে। সরকারের পিপিআরে শর্তনুযায়ী, সরকারি কোনো কাজের ব্যয় ৩ লাখ টাকার উপরে লেগে সেটি কোটেশনের বদলে উন্মুক্ত দরপত্রে যেতে হবে ইসিকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তফসিলের আর সর্বসাক্কুলে সময় বাকি আছে ২০-২৫দিন। এ সময়ের আগে ভোটার তালিকা মুদ্রুণের কাজ শেষ করতে হবে। কারণ তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দরকার হয় ভোটার তালিকার সিডি ও মুদ্রিুত কপি। সম্ভাব্য প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল সবাইর জন্য এটি জরুরি একটি নির্বাচনী অনুষঙ্গ। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে থাকলে আইনের যেমন ব্যত্যয় ঘটবে না। একই ভাবে উন্মুক্ত দরপত্রের বদলে কোটেশনের আলোকে কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। শুধু তাই নয়। জেলা কর্মকর্তারা মুদ্রুণের কাজ করলেও ভোটার প্রত্যয়কারী কর্মকর্তা হিসেবে তাদের জনবল, ল্যাপটপসহ উপজেলা অফিস ফাঁকা করে জেলা কর্মকর্তার কার্যালয়ে সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকতে হবে। ভোটার যাচাইয়ের কাজটি নিশ্চিত করতে হবে ওই উপজেলা কর্মকর্তাকে। এতে দুই দিক থেকে সংকট তৈরি হবে ইসির বলে মনে করছের ক্ষমতা হারানো উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। উপজেলা কর্মকর্তার অনুপস্থিতি নির্বাচনের প্রয়োজনীয় অনেক কাজের স্তুপ উপজেলা অফিসে জমা হতে পারে। আর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও অফিস স্টাফদের অনুপস্থিতিতে মাঠের সঙ্গে ইসির কাজে দুরত্ব ও সমন্বয়হীনতা তৈরির আঙ্ককাতো রয়েছে। কারণ ইসির ৬৪ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার বিপরীতে সারাদেশে ৫১৭টি উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিস রয়েছে। কমিশনের এক ভুল সিদ্ধান্তে নির্বাচনী কর্মযজ্ঞে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে মনে করছেন ইসির উদ্ধর্তন কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির সারাদেশের উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, ভোটার মুদ্রুণের কাজ জেলাকে দায়িত্ব দেয়ায় ভোটার রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। ভোটার তালিকা তারাই করেন। কিন্তু মুদ্রুণের সময় তাদের ক্ষমতা খর্ব করে অন্যকে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে, যা দুংখজনক ও হতাশাজনক বলে আখ্যায়িত করেছেন তারা। বলেন, ভোটার মুদ্রুণের যাচাইকারী হিসেবে প্রত্যয়ন দেবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের সময় আমাদের বাইরে রাখা হচ্ছে। এটা কেনো করা হচ্ছে তা তাদের অজানা বলে ক্ষোভের সঙ্গে জানান তারা। বলেন, জেলায় আমাদের সংযুক্ত হয়ে কাজ করতে হবে। কিন্তু কাজটি আমাদের অধীনে থাকলে অফিসে বসে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে কাজটি করতে পারতাম। তবে এটাকে অগ্রহযোগ্য বলছেন সু-শাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, যার দায়িত্ব তাকে না দিয়ে করানোটা বর্তমানে একটা রেওয়াজে পরিণত হয়ে গেছে। এতে সঠিক ফল আসে না। কিন্তু এখন চলছে কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। কমিশনের শুভবুদ্ধির উদয় হোক এটাই দেশবাসীর একান্ত প্রত্যাশা হওয়া উচিত বলে মত দেন তিনি। উল্লেখ্য ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগে ভোটার মুদ্রুণের কাজটি প্রথম জেলাকে দেয়া হয়। এ নিয়ে তখন ক্ষোভ ও আপত্তি ছিল রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তাদের। অথচ পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের ভোট হলে সেখানে ভোটার মুদ্রুণের কাজটি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারাই করছেন। আর সংসদ নির্বাচন এলেই ইসির কাছে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েন এ নিয়েই ক্ষোভ-হাতাশা ও অসন্তোষ বলে তাদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে।