স্পোর্টস ডেস্ক ॥ জয়ে বিশ্বকাপ শুরুর পর টানা পাঁচ ম্যাচ হারল বাংলাদেশ। তিন বলের মধ্যে দুবার সুযোগ দিলেন স্কট এডওয়ার্ডস। দুবারই ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হলো বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। শূন্য রানে জীবন পেয়ে পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংস খেললেন নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক। লক্ষ্যটা তবু নাগালেই ছিল। কিন্তু ফের হতশ্রী ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনীতে আরেকটি হারের হতাশায় ডুবল সাকিব আল হাসানের দল। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে শনিবার ডাচদের কাছে ৮৭ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। ২৩০ রানের লক্ষ্যে তারা গুটিয়ে গেছে স্রেফ ১৪২ রানে। এই প্রথম বিশ্বকাপের এক আসরে দুটি জয় পেল নেদারল্যান্ডস। কিছুদিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে চমক দেখায় তারা। ওয়ানডের বিশ্ব মঞ্চে সব মিলিয়ে ২৬ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের চতুর্থ জয় এটি। ২০০৩ আসরে নামিবিয়া ও ২০০৭ আসরে স্কটল্যান্ডকে হারিয়েছিল তারা। বাংলাদেশ জয়ে চলতি আসর শুরুর পর হারের তেতো স্বাদ পেল টানা পাঁচ ম্যাচে। বিস্ময়করভাবে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে খেলে দুটিই হারল তারা। ২০১০ সালে দুই দলের প্রথম দেখায় ডাচদের জয়ের পর ২০১১ বিশ্বকাপে জিতেছিল বাংলাদেশ। নেদারল্যান্ডসের এবারের জয়ের নায়ক পল ফন মিকেরেন। বাংলাদেশকে অল্পে গুটিয়ে দিতে ৩০ বছর বয়সী পেসার ২৩ রানে নেন ৪ উইকেট। বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের হয়ে সেরা বোলিং এটি। ২০০৩ আসরে পার্লে ভারতের বিপক্ষে টিম ডে লেডের ৩৫ রানে ৪ উইকেট ছিল আগের সেরা। ব্যাটিংয়ে বড় অবদান রাখেন এডওয়ার্ডস। ৮৯ বলে ৬৮ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন তিনি ৬টি চারের সাহায্যে। ইডেনের কিছুটা মন্থর ও নিচু বাউন্সের উইকেটে বাংলাদেশের বোলাররাও ভালো বোলিং করেন এ দিন। দুই ম্যাচ পর ফেরা তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান ও শেখ মেহেদি হাসান, সবাই নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে নেন দুটি করে উইকেট। কিন্তু ব্যাটিংয়ে আবারও হতাশার পুরনো গল্পের পুনরাবৃত্তি। ব্যাটসম্যানরা দাঁড়াতেই পারেননি ডাচদের সামনে। লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমের কেউ যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। সর্বোচ্চ ৩৫ রান আসে মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাট থেকে। অথচ ম্যাচের শুরুটা বাংলাদেশের জন্য ছিল দারুণ। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা নেদারল্যান্ডসকে শুরুতেই বাংলাদেশ চেপে ধরে তাসকিন ও শরিফুলের দারুণ বোলিংয়ে। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে ভিক্রাম সিংকে ফিরিয়ে প্রথম সাফল্য এনে দেন তাসকিন। পরের ওভারে আরেক ওপেনার ম্যাক্স ও’ডাওডকে বিদায় করেন শরিফুল। পাওয়ার প্লে শেষের খানিক পর আবার জোড়া আঘাত। ওয়েসলি বারেসিকে মুস্তাফিজ ফেরানোর পরের ওভারে কলিন আকারম্যানকে ড্রেসিংরুমের পথ দেখান সাকিব। তখন ৬৩ রানে ৪ উইকেট নেই নেদারল্যান্ডসের। তাদের বিপদ আরও বাড়তে পারত। মুস্তাফিজের পরের ওভারে এডওয়ার্ডসকে ফেরানোর দুটি সুযোগ হাতছাড়া হয়। ক্যাচ নিতে পারেননি লিটন ও মুশফিক। সুযোগ পেয়ে তা দারুণভাবে কাজে লাগান ডাচ অধিনায়ক। পঞ্চম উইকেটে বাস ডে লেডের সঙ্গে ৪৪, এরপর ষষ্ঠ উইকেটে সাইব্রান্ড এঙ্গেলব্রেশটের সঙ্গে ৭৮ রানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন তিনি। মিরাজের হাতে জীবন পাওয়া এঙ্গেলব্রেশট করেন ৩৫ রান। এরপর লোগান ফন বিকের ১৬ বলে অপরাজিত ২৩ রানের সুবাদে লড়াইয়ের পুঁজি গড়ে ডাচরা। মাঝারি লক্ষ্য তাড়ায় সতর্ক শুরু করেন তানজিদ হাসান ও লিটন। এরপর স্কোর ১৯ রেখে বিদায় নেন দুজনই। রিভার্স সুইপের চেষ্টায় গ্লাভসে লেগে কট বিহাইন্ড হন লিটন। শর্ট বলে বিদায় নেন তানজিদ। অন্যরাও এরপর যোগ দেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। মিকেরেনের অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করে স্লিপে ধরা পড়েন শান্ত। একই বোলারের বাড়তি বাউন্সে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সাকিব। পরের দুই ওভারে আউট হয়ে যান তিনে নামা মিরাজ ও মুশফিকও। ৭০ রানে ৬ উইকেট হারানোর পরও হয়তো আশায় বুক বেঁধেছিল বাংলাদেশ। তখনও যে ক্রিজে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ! আগের ম্যাচে তিনি ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে করেছিলেন সেঞ্চুরি। এবার আর দলের মান বাঁচাতে পারেননি অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। মেহেদির সঙ্গে যদিও ৩৮ রানের জুটি গড়ে ফেলেন তিনি। মেহেদি এরপর রান আউটে বিদায় নেওয়ার পর ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মাহমুদউল্লাহও। মুস্তাফিজ ও তাসকিনের ২৯ রানের নবম উইকেট জুটিতে পরাজয়ের ব্যবধানই কমে শুধু। সংক্ষিপ্ত স্কোর: নেদারল্যান্ডস: ৫০ ওভারে ২২৯ (ভিক্রাম ৩, ও’ডাওড ০, বারেসি ৪১, আকারম্যান ১৫, এডওয়ার্ডস ৬৮, ডে লেডে ১৭, এঙ্গেলব্রেশট ৩৫, ফন বিক ২৩*, শারিজ ৬, আরিয়ান ৯, মিকেরেন ০; শরিফুল ১০-০-৫১-২, তাসকিন ৯-১-৪৩-২, সাকিব ১০-১-৩৭-১, মিরাজ ৪-১-১৭-০, মুস্তাফিজ ১৯-১-৩৬-২, মেহেদি ৭-০-৪০-২)। বাংলাদেশ: ৪২.২ ওভারে ১৪২ (লিটন ৩, তানজিদ ১৫, মিরাজ ৩৫, শান্ত ৯, সাকিব ৫, মুশফিক ১, মাহমুদউল্লাহ ২০, মেহেদি ১৭, তাসকিন ১১, মুস্তাফিজ ২০, শরিফুল ০*; আরিয়ান ১০-৩-২৬-১, ফন বিক ৯-১-৩০-১, আকারম্যান ৭-১-২৫-১, ফন মিকেরেন ৭.২-০-২৩-৪, ডে লেডে ৭-০-২৫-২, শারিজ ২-০-১৩-০)। ফল: নেদারল্যান্ডস ৮৭ রানে জয়ী। ম্যান অব দা ম্যাচ: পল ফন মিকেরেন।