মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:০২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
দেবহাটায় তারুণ্যের উৎসব উদ্বোধন সাতক্ষীরায় প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুনামেন্টের আলো ছড়ানো উদ্বোধন \ প্রথম খেলায় হাসলো দেবহাটা বালিকা দল দেবহাটায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী নিশি গ্রেফতার ডুমুরিয়ায় তারুণ্য উৎসবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা অনুষ্ঠিত ডুমুরিয়ায় তারুণ্যের উৎসব’২৫ উদযাপিত সাতক্ষীরায় পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট উদ্বোধন লস অ্যাঞ্জেলসে দাবানলে মৃত্যু ২৪ সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ না ফেরার দেশে চলে গেলেন সাংবাদিক মিজানুর আশাশুনি পানিতে ডুবে বৃদ্ধের মৃত্যু

খুলনা বিভাগের ইতিহাস ঐতিহ্য (২০)

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩

খুলনা প্রতিনিধি ॥ খান জাহান আলী মাজার খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান। হযরত খানজাহান আলী (রঃ) ছিলেন একজন ইসলাম ধর্ম প্রচারক । তিনি কবে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য দক্ষিণবঙ্গের উদ্দেশ্যে রওনা করেছিলেন তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না । তবে এটা জানা যায় যে, তিনি যখন বাংলার উদ্দেশ্যে রওনা করেন তখন আলাউদ্দিন মুহাম্মদ শাহ ছিলেন গৌড়ের সুলতান । তিনি প্রবল গঙ্গা নদী পেরিয়ে যশোর জেলায় উপস্থিত হন । তিনি বারোবাজার, মুরুলি কসবা, পয়োগ্রাম কসবা এবং খলিফাবাদ নামে চারটি গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন। তার প্রতিষ্ঠিত চারটি গ্রামের মধ্যে বারোবাজারে সর্বপ্রথম মানব বসতি গড়ে ওঠে। এখানে বসবাসকারী বারো জন সাধুর নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয় বারো বাজার। তিনি বহু বছর এই এলাকায় অবস্থান করে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। তার অংশ গ্রহণে গোরার মসজিদ, সাতগাছিয়া মসজিদ, ঘোপার টিপি কবরস্থান, নামাজের গাও কবরস্থান, মনোহর মসজিদ,জাহাজ ঘাটা,পাঠাগার মসজিদ,আদিনা মসজিদসহ অসংখ্য স্থাপনা তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে খানজাহান আলী বারোবাজার ত্যাগ করে যশোরের মুরলী কসবা নামক স্থানে চলে যান ইসলাম প্রচারের জন্য । সেখানে গরিব শাহ ও বেরাম শাহ নামে দুইজন ইসলাম প্রচারক ছিলেন। তারা ছিলেন খানজাহান আলীর অত্যন্ত আস্থাভাজন এবং বিশ্বস্ত । তিনি এই দুইজনকে রেখে তার একদল অনুসারী নিয়ে বাগেরহাট এবং একদল সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে রওনা করেন ইসলাম প্রচারের জন্য। বাগেরহাটে তিনি ২ স্ত্রির নাম অনুসারে সোনা মসজিদ ও বিবি বেগুনি মসজিদ নামে দুটি মসজিদ নির্মাণ করেন। তবে এতথ্য লোক মুখে সোনা যায়। হযরত খানজাহান আলী (রঃ) এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করার পর সর্বপ্রথম ঘোড়া দীঘি খনন করেন । ষাট গম্বুজ মসজিদের পাশে এই দীঘি খনন করা হয় । এই দিঘির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০০০ ফুট এবং প্রস্থ ১৮০০ ফুট । এই দিঘির আকার বিশাল এবং দেখতে অনেকটা হ্রদের মতো । প্রায় ৬০০ বছর আগে খনন করা হলেও বর্তমানে এই দিঘির পানি এখনো পানযোগ্য। দিঘীর নাম কেন ঘোড়া দিঘী হল তা নিয়ে কয়েকটি প্রবাদ রয়েছে । অনুমান করা হয় ৬০ গম্বুজ মসজিদের জায়গা উঁচু করার জন্য এবং সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ করার জন্য খানজাহান আলী একটি নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করেন। তিনি দুটি বলিষ্ঠ ঘোড়াকে দৌড় মুখী করে ছেড়ে দেন এবং ঘোড়া দুটি যেখানে গিয়ে থেমেছিল সেখান থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। তারা যতটুকু পথ অতিক্রম করেছিল ততটুকু এলাকা নিয়ে দিঘী খনন করা হয়েছিল বলে একে ঘোড়া দিঘি(এযড়ৎধ ফরমযর) বলে। আবার কেউ কেউ মনে করেন দিঘী খনন করার সময় হযরত খানজাহান আলী ঘোড়ায় চড়ে পরিদর্শন করতেন বলে একে ঘোড়া দিঘি বলা হয়। ঐতিহাসিকদের মতে, তৎকালীন সুলতানি শাসন আমলে খানজাহান আলী বাগেরহাটে খলিফাবাদ প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে তিনি একটি দিঘী খনন করেন। তিনি দিঘীতে দুটি কুমির ছাড়েন। একটির নাম কালা পাহাড় আর একটির নাম ধলা পাহাড়। পুরুষ কুমিরটির নাম কালাপাহাড় আর নারী কুমিরটির নাম ধলা পাহাড়। কুমির দুটি ছিল মিঠা পানির। হযরত খানজাহান আলী নিজে কুমির দুটির খাবার দিতেন। হযরত খানজাহান আলীর মৃত্যুর পরও মাজারের খাদেমরা কুমির দুটির খাবার দিতেন। খান জাহান আলীর মাজার (শযধহ লধযধহ ধষরৎ সধুধৎ) এর সাথে কুমির দুটির ইতিহাস ও ঐতিহ্য গভীরভাবে জড়িত। ১৯৯৩ সালে ইউনেস্কো ৬০ গম্বুজ মসজিদকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণা করলে এখানকার বিরল প্রজাতির কুমিরকে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। হযরত খানজাহান জন্মগ্রহণ করেন ১৩৫৯ খৃঃ। তার পিতার নাম আজর খান এবং মাতার নাম আম্বিয়া বিবি। ধারণা করা হয় তিনি তুরস্কের খাওয়ারিজমে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে যার নাম খিবা। ঐতিহাসিকদের মতে, খানজাহান আলীর বাল্য নাম ছিল কেশব খান। ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির বাংলা বিজয়ের পরে ১৪ শতকের গোড়ার দিকে খানজাহান আলী তার বাবা মায়ের সাথে গৌড়ে আগমন করেন। খানজাহান আলীর পিতা কোন বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন না। কিন্তু তিনি জ্ঞানী ছিলেন। গৌড়ের নবীপুর নামক স্থানে তিনি বসবাস করতেন। খানজাহানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য তিনি বিখ্যাত অলি হযরত নুর কুতুবুল আলমের মাদ্রাসায় ভর্তি করান । সেখানে তিনি কুরআন, হাদিস ও ফিকাহ শাস্ত্রের উপর গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। হযরত খানজাহান আলী ১৪৫৯, ২৫শে অক্টোবর ৬০ গম্বুজ মসজিদে নামাজরত অবস্থায় ৯০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com