এফএনএস: বাংলাদেশিদের জন্য সৌদি আরবের ভিসা সহজীকরণের অনুরোধ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ অনুরোধ জানান। গতকাল বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এ তথ্য জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের শতভাগ ভিসা দেওয়ার অনুরোধ করেছি। আমাদের আশা, শতভাগ ভিসা অনুমোদন হবে। এছাড়াও ভিসা সহজীকরণের জন্য বলেছি। বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য সৌদি আরবের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহŸান জানিয়েছি বলেও জানান আবদুল মোমেন। তিনি আরও বলেন, সৌদি আরব ৫০ বিলিয়ন বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা এ উদ্যোগে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছি। এ কে আবদুল মোমেন বলেন, প্রতিবছর ২৬৫ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে স্কলারশিপ দেয় সৌদি আরব। তবে, মাত্র ৮০ জন শিক্ষার্থী যায়। কোটা কেন পূরণ হয় না, সেটা আমাদের দেখতে হবে। অপরদিকে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি মনে করি, বলার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ভবিষ্যৎ অভীষ্টে পৌছানোর জন্য আমরা একে অপরের সাথে খুবই সম্পৃক্ত। আমরা নিজেদের অঞ্চলের ও বৈশ্বিক স¤প্রদায়ের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় এবং বহুপক্ষীয় মঞ্চে একযোগে কাজ করায় বিশ্বাসী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে সৌদি আরবের ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক নিয়ে তারা গর্বিত। এই সম্পর্কের ভবিষ্যত নিয়েও তার দেশ দারুণ আশাবাদী। আমাদের অংশীদারিত্বকে আরও বিস্তৃত কীভাবে করা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি আমরা। ঐতিহাসিকভাবে আমাদের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে এবং ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক নিয়ে আমরা নিবিড়ভাবে কাজ করছি। সৌদি আরবে বাংলাদেশের প্রায় ২৫ লাখ নাগরিকের কাজ করা এবং সেখানকার উন্নয়নযাত্রায় অবদান রাখার কথা উলেখ করেন প্রিন্স ফয়সাল। বাংলাদেশে সৌদি কোম্পানির বিনিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ নিয়ে কিছু সৌদি কোম্পানি ইতোমধ্যে বাংলাদেশে কাজ করছে। বিনিয়োগের এই ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আমরা দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্বকে আরও বিস্তৃত করতে চাই। আমরা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের বিষয়ে খুবই আশাবাদী। আমরা দেখতে পাচ্ছি, আরও অনেক সৌদি কোম্পানি বাংলাদেশে আসতে চায় এবং দুই দেশের সহযোগিতার সম্ভাবনাকে সামনে রেখে আমরা আমাদের অংশীদারদের একযোগে কাজ করছি। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুই দেশের ‘আরও অনেক কিছু’ করার আছে। এ ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য ‘সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা’ ঠিক করার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সাথে ‘মতৈক্যে পৌঁছেছেন’ তিনি। অন্যদিকে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ বলেন, জ¦ালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেবে সৌদি আরব। তেল সরবরাহ নিয়ে কোনো ধরনের উদ্বেগ নেই। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে জ¦ালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেবে সৌদি আরব। তেল সরবরাহ নিয়ে কোনো ধরনের উদ্বেগ নেই, সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হবে না। তিনি আরও জানান, নিরাপত্তা ইস্যুতে আমরা একযোগে কাজ করবো। বাংলাদেশে এসে তিনি আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ এবং ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানের শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেওয়ার কথাও বলেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বৈঠক করেন। গত মঙ্গলবার দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ড. এ কে আবদুল মোমেনের আমন্ত্রণে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরে এসেছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন।