জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ চলতি সপ্তাহের যেকোন দিন ঘোষণা করা হতে পারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। তফসিল ঘোষনার জন্য যত ধরণের প্রস্তুতি দরকার; সবই সম্পন্ন। সোমবারে পর যেকোন দিন ঘোষণা হবে ভোটের তফসিল। কারণ ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সিডিউল কর্মসূচি রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের। ১৩ নভেম্বর খুলনার জনসভায় ভাষন দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এর পর ১৪ নভেম্বর গণভবন থেকে ভাচ্যুয়ালি কিছু প্রকেল্পের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এই আনুষ্ঠানিতার পর ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষনার সম্ভাবনাই বেশি। কমিশন থেকেও এমন আভাস পাওয়া গেছে। সর্বশেষ তফসিলের সম্মতি শেষ করে এসেছে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের মাধ্যমে। এর পরও কয়েকটি ইস্যুতে আটকে আছে দ্বাদশ নির্বাচনের তফসিলের কার্যক্রম বলে সিইসির বিভিন্ন সময়ে দেয়া বক্তব্যে ও ইসির বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে। এর মধ্যে সরকার প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নেওয়া উন্নয়ন ও নতুন প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন কার্যক্রম, বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর নির্বাচন থেকে দূরে সরে থাকা এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন নির্বাচন ইস্যুতে নানা পরামর্শ প্রদান। এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর চাওয়া-পাওয়াগুলোকে পর্যবেক্ষণ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রতিদিনই বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে দূতিয়ালি চালাচ্ছে ভারতসহ মোড়ল রাষ্ট্রগুলো। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ৯ নভেম্বর সাক্ষাতের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, তফসিল ঘোষণার জন্য আমরা দ্রুত বসব। সেটিও গণমাধ্যমকে জানিয়ে ঘোষণা করা হবে। তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। এর আগে গত ৪ নভেম্বর সর্বশেষ সংলাপেও অংশ না নেওয়া বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে প্রধান নিবাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আপনারা নিবাচনে এসে সফল হোন আপনাদের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে শুভকামনা। আমাদের রাজনীতিতে এসে নির্বাচন নিয়ে বিদেশিরা অনেক পরামর্শ দিচ্ছেন। অথচ আপনারা দিতে পারছেন না। আপনারাও তো রাজনৈতিক নেতা হিসেবে এই দায়িত্বগুলো নিতে পারতেন। বারংবার চেষ্টা করতে পারতেন। নিজেদের মধ্যে সংলাপ করে একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারতেন। এদিকে, নিরপক্ষে সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে হরতাল, অবরোধ ও ঝটিকা মিছিলের মধ্যে কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। স্পর্শকাতর দিনগুলোতে স্থগিত রাখছে অবরোধের কর্মসূচি। তবে তফসিল না হওয়া পর্যন্ত দলটি এই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা রয়েছে। অপরদিকে বিএনপির সুরে কথা বলছে সমমনা ইসলামী দলগুলো। ‘দেশের স্বার্থে’ কমিশনকে তফসিল ঘোষণা না করার আহ্বান জানিয়েছে পাঁচ দলীয় রাজনৈতিক মোর্চা ‘সমমনা ইসলামি দলসমূহ’। তারা বলেছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি উপেক্ষা ও অবজ্ঞা করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হতে পারে। বৃহস্পতিবার রাতে পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমমনা ইসলামি দলসমূহের বৈঠকে এই অভিমত জানানো হয়। শুক্রবার বিকেলে বিবৃতি দিয়ে এই অভিমত গণমাধ্যমকে জানানো হয়। পাঁচ দলীয় রাজনৈতিক মোর্চার শরিক দলগুলো হলো বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, মুসলিম লীগ (বদরুদ্দোজা আহমেদ-কাজী আবুল খায়ের) ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। এর মধ্যে মুসলিম লীগ ছাড়া বাকি চারটি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। এছাড়া নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় আখ্যা দিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক সভা হয়েছে। তবে দু’পক্ষের মধ্যে এ ইস্যুতে ঐক্যমত হয়নি বলে কূটনীতিক সূত্রগুলো মন্তব্য করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরিই বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় বলে মন্তব্য করে আসছে। তা ছাড়া বাংলাদেশের ‘সংবিধান অনুযায়ী’ আসন্ন নির্বাচন দেখতে চায় বলে রাষ্ট্রদূত ওয়েন। তার এ মন্তব্যের জবাবে বিএনপি একটা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তাতে বলেছে, চীনা রাষ্ট্রদূত যা বলেছেন তা জনগণের ইচ্ছা বা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন নয়। এ বিষয়ে একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছে দলটি। দেশীয় রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে চাপ এবং বিদেশীয় রাষ্ট্রের নানা ধরণের আহবান সত্ত্বেও সংবিধানের মধ্যে থেকে নির্বাচন করার পক্ষে ইসি। নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান বলেছেন, তাঁরা এমন একটা নির্বাচন উপহার দেবেন, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। এদিকে, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে শনিবার প্রশাসন-পুলিশের সঙ্গে ইসির প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। এ প্রশিক্ষণেও যেকোন মূল্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার উপরে তাগিদ এসেছে। জন-নিরাপত্তা বিভাগের সচিব এবং জন-প্রশাসন সচিব উভয়ই সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না হলেও তাদের দু-ধরণের প্রস্তুুতি নিয়ে কাজ করা বিষয়ে অঙ্গীকার করেছে ওই প্রশিক্ষণে। তারা বলেছেন, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার আলোকে যেকোন মূল্যে নির্বাচন করা হবে। নির্বাচনের সহিংসতা বা যেকোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনার উদ্ভব হলে সেটা মোকাবেলায় পুলিশ ও প্রশাসন ইসির চাওয়া অনুযায়ী সার্বিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছেন। ইসি সূত্র বলছে, অমোচনীয় কালির কলম ও স্ট্যাম্প প্যাড ছাড়া নির্বাচনের অন্যান্য সামগ্রী জেলা পর্যায়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে এ দুটি সামগ্রী পৌছা মাত্রই স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকায় চলে যাবে বলে। এছাড়াও আগামী নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে কারা দায়িত্ব পালন করবেন, তা এখনো ঘোষণা করেনি ইসি। সাধারণত জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হয়। গত বছর ইসির সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে বিশিষ্টজনদের অনেকে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ নিয়ে কমিশনের ভেতর মতভিন্নতা রয়েছে।