রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০৬:৫০ পূর্বাহ্ন

কলারোয়ায় গ্রাম বাংলার এককালের ঐতিহ্য গরুর গাড়ি বিলুপ্তির পথে

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৩

কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি ॥ ‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে, ধুতুর, ধুতুর, ধুতুর ধুর সানাই বাজিয়ে, যাবো তোমায় শ্বশুর বাড়ি নিয়ে’ সাতক্ষীরা কলারোয়াতে এক সময়ের গ্রামীণ জনপদে চলাচলের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত ঐতিহ্য‘গরুর গাড়ি’নিয়ে রচিত গানে প্রমাণ মিলে জনপ্রিয়তার। সভ্যতার প্রায় উন্মেষকাল থেকেই বাংলাদেশের সর্বত্রই যাতায়াত ও পরিবহনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ যানবাহন হিসেবে পরিচিত ছিল‘গরুর গাড়ি’। কিন্তু আধুনিক সভ্যতার বিবর্তনের মেশিনারি যন্ত্রচালিত লাঙল বা পাওয়ার টিলার এবং নানা যন্ত্রযানের তৈরির ফলে আজ বিলুপ্তির পথে ‘গরুর গাড়ি’। তবে এখনও গরুর গাড়ির ঐতিহ্য টিকে রয়েছে নানারকম লোকসংস্কৃতি ও তাকে ভিত্তি করে নানা মেলা-অনুষ্ঠানের আয়োজন চলে। দুই চাকা বিশিষ্ট গরু বা বলদে টানা এক প্রকার বিশেষ যানবাহন গরুর গাড়ি। এ যানে সাধারণত একটি মাত্র অক্ষের সঙ্গে চাকা দুটি যুক্ত থাকে। গাড়ির সামনের দিকে একটি জোয়ালের সঙ্গে দুটি গরু বা বলদ জুটি মিলে গাড়ি টেনে নিয়ে চলে। দুটি গরু দিয়ে দৈনিক এক থেকে দুই বিঘা জমি চাষ করা যেতে পারে। জানা যায়, গরুর গাড়ির ইতিহাস সুপ্রাচীন। খ্রিস্টজন্মের প্রায়(১৬০০)বছর আগেই সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল, যা সেখান থেকে ক্রমে ক্রমে দক্ষিণেও ছড়িয়ে পড়ে। গ্রাম বাংলায় এ ঐতিহ্য, যা আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। কালের পরিক্রমায় আধুনিকতার স্পর্শে সাতক্ষীরা কলারোয়ায় ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি এখন শুধুই অতীতের প্রতিচ্ছবির মতো। গ্রামগঞ্চের আঁকাবাঁকা মেঠো পথে ধীরে ধীরে বয়ে চলা গরুর গাড়ি এখন আর চোখে পড়ে না। রোববার (১৯ নভেম্বর) সকালে এমন এক দৃশ্য দেখা গেছে, অতীত সেই বাহন। উপজেলার কামারালী গ্রামের মৃত াজিয়ার খাঁর ছেলে মশিয়ার খা (৬২) ও সোনাবাড়িয়া গ্রামের মৃত ইছাক মোড়লের ছেলে মজিবর মোড়ল (৬৫) বলেন, মাত্র প্রায় দুই থেকে আড়াই যুগ আগেও পণ্য পরিবহন হাল চাষ ছাড়াও বিয়ের অনুষ্ঠানে বর-কনে বহনের বিকল্প কোনও বাহন কল্পনাই করা যেত না। সময় অতিবাহিত হবার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের ধারক-বাহক অনেক বাহনেরই আমূল পরিবর্তন-আধুনিকায়ন হয়েছে। শহরের ছেলেমেয়েরা তো দূরে কথা, গ্রামের ছেলেমেয়েরাও গরুর গাড়ির সঙ্গে খুব একটা পরিচিত না। মজিবর মোড়ল বলেন, বর্তমানে আমার পরিবারের তিন সদস্য আছে, আমরা দুজন আর আমার মৃত ছেলের রেখে যাওয়া মেয়ে,তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহের জন্য আমার এই বয়েসে এই গরুর গাড়ি বহন করে আমার সংসার চালাতে হয়। আমার পরিবারে আর কেউ আয়ের লোক নাই। যদি এটা বিলুপ্তি হয়ে যায় তাহলে আমি এই বয়েসে কি করে চলবো। এটা দিয়ে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা রোজগার হয়। আবার কোন দিন ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা আয় হয়, তাতে করে আমার সুন্দর ভাবে সংসার চলে যায়। বছরে দুই থেকে তিন মাস বাদ দিয়ে বাকি সব সময় চলে এ গাড়ি। আর বর্তমানে আমার এলাকায় এই বাহনটি আর কারোও নাই। তাই ঐতিহ্যের স্বার্থেই এ বিষয়ে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার আছে বলে এলাকা বাসি মনে করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com