জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন না করার আওয়ামী লীগের ঘোষণায় দুচিন্তায় পড়েছে শরীক ১৪দল। শরীকরা বলছে, হঠাৎ কেনো এ ধরণের ঘোষনা তা জানি না। তবে, পরিস্থিতি বুঝে তা বিকল্প চিন্তা করবেন। আর এককভাবে নির্বাচন করার আওয়ামী লীগের ইচ্ছাকে ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করছে সুশীল সমাজের নাগরিকরা। তারা বলছেন, ভোটের আগে এসে আওয়ামী লীগ এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিলে তা তাদের জন্যই বুমেরং হতে পারে। শত্রুপক্ষরা সুযোগ নিতে পারে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে আবেদন জানিয়েছে ১৮টি রাজনৈতিক দল বা জোট। এর বাইরে আরও ৯টি দল নির্বাচনে আসার বিষয়ে ইতিবাচক বলে রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা রয়েছে। আলোচনায় থাকা সব দল এলে ৪৪টির মধ্যে নির্বাচনে অংশ নেয়া দলের সংখ্যা দাঁড়াবে ২৭টি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশির ভাগ দল নির্বাচনমুখী হওয়ায় এ সুযোগটাকে কাজে লাগাতে কৌশলী পথে হাটছে আওয়ামী লীগও। নিজ দলীয় ও ত্যাগী প্রার্থীদের আসনওয়ারী মনোনয়ন দিয়ে দলটির প্রতি আনুগত্য বাড়াতে ওই কৌশলী পথে হাটছে আওয়ামী লীগ। জোটভুক্ত না থেকে তিনশ আসনেই দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে এখন তৎপর। এর প্রতিফলন দেখতে পাওয়া গেছে শনিবার (২৫ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এক আচমকা বক্তব্য ইস্যুতে। বলা যায়, – নতুন এই সমীকরণের ঘোরটোপে এখন জোট ও জোটের ভবিষৎ এবং ব্রাকেটবন্দি রাজনীতির । সেখানে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলটি জোটবদ্ধ নাও থাকতে পারে বলেও আভাস দেয়া হয়েছে। হঠাৎ এমন বক্তব্যে ১৪দলীয় শরীক জোটগুলোও হতভম্ব। নীতি-নির্ধারণী নেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বলে কথা বলে মনে হয়েছে। বলছেন, নির্বাচন কমিশনে (ইসি) ক্ষমতাসীন দলটিই হলফনামা দিয়ে জোটভুক্ত নির্বাচনের কথা বলে এসেছে। বলছেন, – এখন যদি তারা ৩০০ সংসদীয় আসনে এককভাবে নির্বাচন করেন তাহলেও আমরাও পরিস্থিতি দেখে বিকল্প চিন্তা করব। কারণ রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। এদিকে, নির্বাচনমুখী বেশির ভাগ দল চলে আসায় চড়েচড়ে বসেছে খোদ আওয়ামী লীগ। যারা এতোদিন ১৪ দলীয় জোটের বাইরে ছোট ছোট দলগুলোকে নির্বাচনে আনতে নানা ধরণের টোপ দিয়ে আসছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন ইস্যুতে তৎপরতা কমে আসায় নির্বাচনে না আসার ঘোষণায় থাকা দলগুলোও নির্বাচনী উৎসবে শামিল হতে এখন সরব। এই মোক্ষম সুযোগে আওয়ামী লীগ চাইছে তিনশ আসনে নৌকার একক প্রার্থী দিতে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এখানে আমাদের প্রতিপক্ষ যদি একটা বড় জোট করে, সেখানে তার বিপরীতে আমাদের জোট হবে, তা ছাড়া আমাদের কেন অহেতুক জোট করতে হবে। প্রয়োজন না থাকলে তো জোট করব না। বলেন, জোট করব যাদের নিয়ে, তাদের তো গ্রহণযোগ্যতা মানুষের কাছে থাকতে হবে। আমি একটা দল করি, জোটে আছি, নির্বাচনে অংশ নিলেই জিতব, – এমন গ্যারান্টি তো নেই। এই বক্তব্যের পর খোদ শরীক দলীয় জোটের নেতারা নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছে। কারণ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (ইনু), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (দিলিপ বড়ুয়া) এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খানন মেনন নেতা হিসেবে বড় হলেও নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে বরাবরিই অনাগ্রহী। কারণ নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও তারা ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তাদের দলীয় মনোনীত প্রার্থীরাও নৌকা পেয়ে জয়ী হয়ে সংসদে এসেছেন। কিন্তু যারা নৌকা পাননি দেখা গেছে, প্রত্যেকটি প্রার্থীই ভোটে জামানত হারিয়েছেন। ফলে ১৪দলীয় জোটের বড় দল আওয়ামী লীগ; সবাই দলটির প্রতীকে নির্বাচনে বেশি স্বাচ্ছদ্য বোধ করেন। গণফোরামের বর্তমান এমপি সাবেক ছাত্রনেতা সুলতান মুনসুর ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে ‘নৌকা’ প্রতীক না পেলে তিনি এই নির্বাচনে অংশ নিবেন না। শুধু তারা নন ১৪ দলীয় জোটের শরীক অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীও আসন হারানোর শঙ্কায় পড়তে পারেন। ফলে ক্ষমতাসীন দল কারো সঙ্গে জোটবদ্ধ না হলে দুচিন্তা বাড়াবে ব্যাকেটবন্দি রাজনৈতিক দলগুলোর হেভিওয়েট থেকে মধ্যম সারির প্রার্থীদের। জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, মনোনয়নপত্র জমার ঠিক আগ-মুহুর্তে এসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের জোটভুক্ত না থাকার আভাসে আমরা হতবাক। যখন কোন দল নির্বাচনমুখী হচ্ছিল না; তখনও আমরা নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে যুগপথ আন্দোলন করে আসছি। এই সময়ে এ ধরণের বক্তব্য এটা জোটের জন্য দুচিন্তার কারণ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক মো জাকির হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, এটা মারাত্বক ভুল সিদ্ধান্ত। জোটবদ্ধ নির্বাচন করাই শ্রেয়। কেননা ১৪ দলীয় জোটের প্রত্যেকটি নেতাই মুক্তিযোদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি। ভোটের আগে এ ধরণের আত্নঘাতি সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের জন্য বুমেরং হতে পারে।