শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৩ পূর্বাহ্ন

হারিছ চৌধুরীর ডিএনএ টেস্ট নিয়ে যা বলছে পুলিশ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ২০ মার্চ, ২০২২

এফএনএস: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। স্বজনরা বলছেন, তিনি যুক্তরাজ্যে মারা গেছেন। তবে মেয়ে সামিরার ভাষ্য, ঢাকায় মারা গেছেন। এজন্য সামিরা প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষার পক্ষেও মত দিয়েছেন। অবশ্য আইনানুগভাবে নির্দেশ পেলে সেক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মাহাবুবুর রহমান বলেন, ডিএনএ পরীক্ষার সুনির্দিষ্ট আইন আছে। ওই আইন মেনে কেউ আবেদন করলে অবশ্যই ডিএনএ পরীক্ষা করা যেতে পারে। তবে হারিছ চৌধুরীর বিষয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আবেদন আমরা পাইনি। তার পরিবার আইনানুগ ব্যবস্থা নিলে অবশ্যই সেক্ষেত্রে পরীক্ষা হতে পারে। জানা গেছে, চলতি বছর ঢাকায় ১৪ বছর আত্মগোপনে থেকে মাহমুদুর রহমান নাম ধারণ করে হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন বলে খবর প্রকাশ হয়। মারা যাওয়ার খবর হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই আশিক চৌধুরী নিশ্চিত করেন। তিনি যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তার ফুসফুসে সংক্রমণ ছিল। অবশ্য এ খবর প্রচার হতে থাকলে একটি গণমাধ্যম হারিছ চৌধুরীর অপর মেয়ে সামিরা চৌধুরীর বরাত দিয়ে জানায়, ঢাকায়ই তিনি মারা গেছেন। তিনি মূলত করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে সামিরা নিজেই বাবার মৃত্যু নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছেন। সামিরা তার চিঠিতে বলেন, ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তার সম্মতি রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু শনাক্ত করতে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে, তিনি সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্যও প্রস্তুত রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, ওয়ান ইলেভেনের পট-পরিবর্তনে গা ঢাকা দেন এক সময়ের প্রভাবশালী হারিছ চৌধুরী। তাকে খুঁজতে বিভিন্ন স্থানে ওই সময় অভিযান পরিচালনা করে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। তবে তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে হারিছ চৌধুরী দীর্ঘ ১৪ বছর ঢাকায় ছিলেন বলে একটি গণমাধ্যম বলছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, দীর্ঘ সময় তিনি পান্থপথের একটি বহুতল ভবনের আলিশান ফ্ল্যাটে ছিলেন। বাইরে বেশি ঘোরাফেরা না করলেও মুখে লম্বা দাঁড়ি রাখেন নিজেকে লুকাতে। নিয়মিত নামাজ এবং কোরআন শরীফ পড়তেন। বাসা থেকে বেশি বের হতেন না। হাঁটাহাঁটিও করতেন ওই ভবনের নির্দিষ্ট জায়গায়। বাজার করতেন তারই নিয়োগ করা একজন কেয়ারটেকার। এ সময় তিনি নাম পরিবর্তন করে রাখেন মাহমুদুর রহমান। এ নামে তিনি করেন জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট। মারা যাওয়ার পর অতি গোপনে করা হয় দাফন। সাভারের একটি এতিমখানায় ৫ লাখ টাকার অনুদান দিয়ে সেখানেই তাকে কবর দেওয়া হয়। কবর দেওয়ার সময় ৩ লাখ এবং পরে আরো ২ লাখ টাকা দেওয়া হয় বলে এতিমখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তবে তারা হারিছ চৌধুরী নয়, পরিচয়পত্রের সূত্র ধরে মাহমুদুর রহমানরে দাফন করেন বলে জানিয়েছে। তাহলে এতদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে হারিছ চৌধুরী কীভাবে ছিলেন- সেটা নিয়েও ওই প্রতিবেদনে বিভিন্ন প্রশ্ন তোলা হয়। উলে­খ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে গ্রেনেড হামলা মামলার একজন পলাতক আসামি ছিলেন হারিছ চৌধুরী। বিচার শেষে আদালত এ মামলায় তাকে যাবজ্জীবন দন্ড দেন। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের সাজা এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী ও চাঞ্চল্যকর শাহ এ এমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার পলাতক আসামি ছিলেন তিনি। মূলত আইনি এসব দন্ড মোকাবিলা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে আত্মগোপনে ছিলেন বিএনপির ডাকসাইটের এই নেতা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com