##ব্যানার-পোস্টার অপসারণে আইজিপি’কে চিঠি
## বৈধ প্রার্থীর মৃত্যু হলে ভোট বাতিল
জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ নির্বাচনী এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, ক্ষমতার দাপট বিস্তার করে চাঁদাবাজীর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি এবং উঠতি মাস্তানদের দৌরত্ন্যে কমিয়ে তাদের আটকে কঠোর অবস্থানে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সব রিটার্নিং কর্মকর্তাদের (আরও) এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে পত্র দিয়েছে। সেখানে তালিকা ধরে ধরে এসব অপতৎপরতাকারী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধিন কমিশনের লক্ষ্য একটাই তফসিল ঘোষিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা। পাশাপাশি, – বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন থেকে বিরত থাকা এবং বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারেও কার্যকরী ব্যবস্থা নিতেও তাগিদ দেয়া হয়েছে সাংবিধানিক সংস্থার পক্ষ থেকে। এদিকে, দায়িত্ব সূচারুভাবে দায়িত্ব পালন করা, কোনো ধরণের পক্ষপাতমূলক আচরণ না করা এবং সব দল ও প্রার্থীর সঙ্গে নিরপেক্ষ আচরণ করার উপরে জোর দিয়েছে কমিশন। এ বিষয়ে সর্তক থাকার জন্য ইসির পক্ষ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া ইতিমধ্যে আগাম প্রচারের অংশ হিসেবে দেয়ালে সাঁটানো ব্যানার-পোস্টার অপসারণের জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি)’কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মাঠ প্রশাসনকে রাজনৈতিক দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) বদলির ইসির সিদ্ধান্তে প্রশাসনজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কার উপরে কোন দোষে বদলির খড়গ নামে এ নিয়েই তটস্থ পুলিশ থেকে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, বদলি করা হচ্ছে মাঠ প্রশাসনে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য। এখানে ইচ্ছাকৃত কাউকে বদলি করা হবে না। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে এবং সেটি সুস্পষ্ট তাকেই বদলি করা হবে। সে রিটার্নিং কর্মকর্তা হতে পারে, এসপি হতে পারে, ইউএনও ও ওসিরা রয়েছে। বলেন, ভোটের আগের পর্যন্ত বদলি হতে পারে। ইসি সূত্রগুলো জানায়, আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাস্তানদের তালিকা করে গ্রেফতারের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিপত্র জারি করেছে ইসি। রবিবার (৩ ডিসেম্বর) তিনশ সংসদীয় আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ওই পরিপত্র পাঠানো হয়েছে। ইসি সচিবালয়ের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত পরিপত্রে সুনির্দিষ্ট পাঁচটি বিষয় নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়েছে, সব শ্রেণীর ভোটার যাতে তাদের ভোটাধিকার অবাধ ও নির্ভয়ে প্রয়োগ করতে পারেন, তার নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও স্থানীয় আস্থাভাজন কর্মীদের সঙ্গে সত্বর একটি এবং প্রয়োজনবোধে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আইন ও বিধিগত দিক উল্লেখপূর্বক সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করতে হবে। কারও কোনো অভিযোগ থাকলে তা অবিলম্বে তদন্তপূর্বক প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ভোটকেন্দ্র এবং ভোটকক্ষের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাসহ সব বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার পরিচালনা জোরদার করতে হবে। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের তালিকা প্রণয়নপূর্বক চাঁদাবাজ, মাস্তান ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করতে হবে। পর্যাপ্ত সংখ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভোটকেন্দ্রে মোতায়েনসহ চিহ্নিত গোলযোগপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে বেশি সংখ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের ব্যবস্থা করতে হবে। সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। এতে জনগণের কাছে হেয় প্রতিপন্ন বা পক্ষপাতদুষ্ট হয় এমন কোন কাজ না করাতে সব রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। বলা হয়েছে, এমন কাজ করবেন না, যার দ্বারা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয় জনগণের নিকট হেয় প্রতিপন্ন হতে হয় এবং তারা যে প্রতিপন্ন পক্ষপাতদুষ্ট এমন ধারণা সৃষ্টি না হয়। তা নিশ্চিত করতে আইন ও বিধি অনুযায়ী কাজ করতে হবে। বলা হয়, ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ও স্বচ্ছন্দে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন সেই উদ্দেশ্যে নিশ্চয়তামূলক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী ভ্রাম্যমাণ ইউনিটগুলোকে নিবিড় টহলদানের ব্যবস্থা, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। আর ভোটকেন্দ্রের তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর ভোটকেন্দ্রের অবস্থান সম্পর্কে নির্বাচনের পূর্বে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী এলাকায় সকল প্রকার নির্বাচনী প্রচারণা সামগ্রী অপসারণ করতে পুলিশের মহাপরিদর্শক’কে চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক-৬ শাখা। এর আগে, গত ১৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখা থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইন ও বিধি অনুযায়ী সারাদেশ থেকে পোস্টার, ব্যানার, গেইট, তোরণ ইত্যাদি প্রচার সামগ্রী অপসারণের জন্য পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরো করা হলো। দেশের জনগণের কাছে নিজেদের নিরপেক্ষতা দৃশ্যমান করতে ভিজিল্যান্স ও অবজারভেশন টিম গঠন করছে ইসি। নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে এই টিম জেলা পর্যায় ও মেট্রোপলিটন এলাকায় কাজ করবে। বলা হেেয়েেছ, ভিজিল্যান্স ও অবজারভেশন টিমকে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ হয়েছে কিনা, অথবা ভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কিনা, বা নির্বাচনী প্রচারণা ও নির্বাচনী ব্যয় বাবদ নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ব্যয় করেছে কিনা, অথবা অন্যান্য বিধি-বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালন করছে কিনা, তা সরেজমিনে পরিদর্শন করতে নির্দেশ দেবেন। ইসি সূত্র জানায়, ভিজিল্যান্স ও অবজারভেশন টিমের সদস্যসহ সকল প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলকে এবং তাদের নির্বাচনি এজেন্টকে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এর সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিধান রয়েছে। এই বিধান ভঙ্গের দায়ে প্রদেয় শাস্তি বিশেষ করে আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলকরণের বিষয় অবগত করানো নিশ্চিত করতে হবে।