শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন

ইসরাইলি হামলায় ইতিহাসের ভয়াবহ হত্যাকান্ড গাজায়

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

জাতিসংঘ মহাসচিবের নিরাপত্তা পরিষদের সভার আহবান ঃ যুদ্ধ ইসরাইল উত্তরের পর দক্ষিন ও পশ্চিম গাজায় হামলা ও হত্যা ঃ নির্মম হত্যাকান্ড নারী ও শিশুরা ঃ হিজবুল্লাহ ও হুযিদের ক্ষেপনাস্ত্র হামলা ঃ দক্ষিন গাজায় হামাস ইসরাইল মুখোমুখি যুদ্ধ চিকিৎসা বিহীন আহত ফিলিস্তীনিরা ঃ বিকৃত লাশ সংগ্রহ ও গণ কবরে দাফন
দৃষ্টিপাত ডেস্ক ॥ ইতিহাসের ভয়াবহ মুহুর্ত অতিক্রম করছে ঐতিহাসিক গাজা উপত্যকা। মৃত্য যেখানে অতি স্বাভাবিক বিষয়, সর্বত্র লাশ যেন প্রতিমুহুর্তের ঘটনা। জ্বলছে তো জ্বলছেই গাজা, অসহায়, নিরস্ত্র ফিলিস্তীনি জনগোষ্ঠী মৃত্যুর প্রহর গুনছে এবং মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে চলেছে। আঠাশ লক্ষ জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত গাজা বর্তমান সময়ে এক শ্মশানে পরিনত হয়েছে। মৃত্যুই যেন শেষ কথা গাজাবাসির বিদ্যালয় বন্ধ, হাসপাতাল গুলো ধ্বংস্তুপে পরিনত হয়েছে। শরনার্থী শিবির গুলোতে ফিলিস্তীনিরা মৃত্যু যন্ত্রণার কারনে থাকতে পারছে না। দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর হামলা থেকে পালিয়েও বাঁচতে পারছে না ফিলিস্তীনিরা, দিনে দিনে যেন সবই শেষ হচ্ছে গাজার। ফিলিস্তীনি মুক্তি সংগ্রামের অকুতোভয় দেশ প্রেমিক হামাস যোদ্ধারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে লড়াই করে যাচ্ছে দখলদার ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে। গতকালও দক্ষিন ও পশ্চিম গাজার বিভিন্ন এলাকাতে হামাস যোদ্ধারা ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ করেছে। হামাসের সশস্ত্র শাখা কসেম ব্রিগেড যোদ্ধাদেরকে জীবন বাজি রেখে ফিলিস্তীনিদের রক্ষা করতে হামলা চালানোর যে পদ্ধতি গ্রহণ করেছে তাতে ইসরাইলি বাহিনী বিশেষ বিপদজনক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে পড়েছে। এদিকে ইসরাইলের গনহত্যা ও যুদ্ধবন্ধে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুটারেস জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভা আহবান জানিয়েছেন। আর এ নিয়ে ইসরাইল জাতিসংঘের মহাসচিবের উপর অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিবের নিজস্ব ক্ষমতাবলে জাতিসংঘের ৯৯ ধারা প্রয়োগের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বিরতির বিষয়ে আলোচনার জন্য সভা আহবান করেছেন। আর এতেই যুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ইসরাইল বলেছে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুটারেস বিশ্ব শাস্তির জন্য বিপদ। জাতিসংঘ মহাসচিব নিরাপত্তা পরিষদকে লেখা এক চিঠিতে বলেন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রতি হুমকি মনে করলে মহাসচিব যে কোন বিষয়ের প্রতি নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে পারে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেলে হুজারিক বলেন, গাজা এবং ইসরাইলে অতিঅল্প সময়ে মানুষের জীবন হানীর মাত্রার কারনে জাতিসংঘ এ পদক্ষেপটি গ্রহন করেছেন। উল্লেখ্য জাতিসংঘ মহাসচিব ইতিপূর্বে একাধিক বার ইসরাইলের হামলাকে নিন্দা জানিয়েছেন এবং ফিলিস্তিনীদের নির্বিচারে গণহত্যা বন্ধের আহবান জানান। ইতিপূর্বে জাতিসংঘ মহাসচিব সাত অক্টোবর ইসরাইলের অভ্যন্তরে হামাসের হামলার বিষয়ে উক্তি করেছিলেন হামাসের হামলা একদিনে যেমন হইনি অনুুরুপ হামাস এক দিনে সৃষ্টি হইনি। জাতিসংঘের মহাসচিবের এমন বক্তব্য সে সময়ে ও ইসরাইলের পক্ষ হতে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। এদিকে পশ্চিম তীরে গণহত্যা আর ব্যাপক ধ্বংস যজ্ঞের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইহুদী বসতির যারা হামলা ও হত্যা কান্ড চালিয়েছে তাদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে পশ্চিমা মিডিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চাইছে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি হোক। অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইসরাইলের হামলায় ফিলিস্তীনি নারী এবং শিশুদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে। ইতিমধ্যে বর্বরতায় সতের হাজার ফিলিস্তীনির নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা সর্বাধিক। গতকাল ও গাজার ধ্বংস স্তুপের নিচ থেকে, সড়ক থেকে ও হাসপাতালের অভ্যন্তর থেকে নিহত ফিলিস্তীনিদের বিকৃত মরদেহ উদ্ধার করতে দেখা যায় এবং লাশগুলো গণকবরে সমাহিত করতে দেখাগেছে। ইসরাইলি বাহিনীর হামলা আর হত্যার অন্যতম লক্ষবস্তুতে পরিনত হয়েছে সাংবাদিকরা। এ যাবৎ পর্যন্ত অন্তত সত্তর জন বিদেশী সাংবাদিককে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। তাদের লক্ষ্য সাংবাদিকরা হওয়ার কারন সাংবাদিকরাই বিশ্বময় তাদের হত্যাকান্ড আর ধ্বংস স্তুপের খবর ও ছবি প্রকাশ করছে। ইসরাইলি বাহিনীর সর্বাধিক ক্ষোভ কাতার ভিত্তিক আল জাজিরা টেলিভিশন ও তার সাংবাদিকদের উপর। গতকাল গাজায় অবস্থানরত আল জাজিরার সাংবাদিক মোয়ামেল আল শরফি সহ তার পরিবারের বাইশ সদস্যকে বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে। এর পূর্বে গত পঁচিশ অক্টোবর ইসরাইল বাহিনীর বোমা হামলায় ওয়ায়েল দাহদুহ তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে হারায়। আরব বিশ্বের পাশাপাশি এবার ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলো ফিলিস্তীনিদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ইসরাইলের হামলায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বিশেষ করে ফ্রান্স ও জার্মানি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। ইরান তুরস্ক, রাশিয়া, চিন পুর্ব থেকেই হামরার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। হিজবুল্লাহ ও হুতি যোদ্ধাদের মুহুর মুহুর ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় অনেকটা বেকায় দায় পড়েছে ইসরাইলী কর্তৃপক্ষ। সাধারণ ইসরাইলিরা ইসরাঈল সরকার কে দোষারোপ করছে তাদের নিরাপত্তা বাহিনী তার জন্য, একই সাথে অধিকাংশ ইসরাইলি জনগোষ্ঠী ফিলিস্তীনিদের নির্বিচারে হত্যা ও ধ্বংসলীলা সাধনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com