দৃষ্টিপাত ডেস্ক ॥ হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, গণহত্যা চলছে, মধ্যযুগীয় কায়দায় আর বর্বরতার শেষ ধাপকে অতিক্রম করে ইসরাইল বাহিনী জোমদ্বুতের ভুমিকায় অবতীর্ণ। তাদের প্রতিমুহুর্তের হামলায় গাজা এক অন্ধকর, বিচ্ছিন্ন, লাশের শহর পরিনত হয়েছে। তবে কম নয় হামাস যোদ্ধারা তারা বীর বিক্রমে দখলদার হামলাকারী ইসরাইলি বাহিনীকে প্রতিহত করছে। প্রতিদিনই হামাসের হামলায় নির্মম ভাবে নিহত হচ্ছে দখলদার বাহিনীর সেনারা। ইতিমধ্যে হামাসের হামলায় সহস্রাধীক ইসরাইল সেনার মৃত্যু ঘটেছে, খান ইউনিসে দখলদার সেনাদের করুন পরিনতি, পিছু হটাও হত্যার শিকার শক্তিশালী ইসরাইলি বাহিনীর অহংকার দুমড়ে মুচড়ে পড়েছে। ইসরাইলিদের ঐতিহ্য আর মর্যাদার ধারক ট্রাঙ্ক গুলো একের পর এক হামাস যোদ্ধাদের হামলায় জ্বলছে তো জলছেই। গতকাল প্রত্যুষে ইসরাইলি বিমান বাহিনীর বিমান গুলো শক্তিশালী বোমা হামলা চালিয়ে গাজার, দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি ভবনে। গাজার দক্ষিন এলাকার কুওয়াইতি হাসপাতাল সংলগ্ন আবাসিক ভবন গুলোতে বিমান হামলায় ঘটনা স্থলেই বিশ জন সাধারন ইসরাইলির নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এবং উক্ত হামলায় অন্তত পঞ্চাশ জন মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছে। একই সময়ে দখলদার বাহিনী গাজার মাখাজি নামক একটি শরনার্থী শিবিরে বিমান হামলা পরিচালনা করেছে। ইসরাইল বাহিনী গাজার দক্ষিন এলাকাতে গতকাল হামাস যোদ্ধাদের দ্বারা ব্যাপক ভাবে প্রতিরোধের মুখে পড়লে সেই সময়ে অর্থাৎ তাৎক্ষনিক ভাবে তারা বিমান হামলা পরিচালনা করে। হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেড জানিয়েছে হামাস যোদ্ধারা সুরক্ষিত সুড়ঙ্গের অভ্যন্তরে অবস্থান নিয়ে দখলদার বাহিনীকে প্রতিহত করে চলেছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তাদের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস করা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ জন্য মাথাদের সেনাদের ক্ষয়ক্ষতি মেনে নিতে হচ্ছে। এদিকে অতি সম্প্রতি ইসরাইল জাতিসংঘের কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারিকে ইসরাইল সফরের অনুমতি দেবেনা এবং এ জন্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটির পক্ষ হতে বলা হয়েছে ইসরাইল ইস্যুতে অতি দ্রুত জাতিসংঘের সাধারন অধিবেশন আহবান করা হবে। হামাস এর পক্ষ নিয়ে জাতিসংঘ তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ ভাবে অস্বীকার করে জাতিসংঘ বলেছে যেহেতু জাতিসংঘ একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার দিয়ে তাকে বিধায় ইসরাইলের নির্বিচারে বিমান হামলা ও গাজার নিরস্ত্র ফিলিস্তীনিদের হত্যাকান্ড আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি কোন ভাবেই মেনেনিতে পারে না বরঞ্চ সমস্যা সমাধানে আগ্রহী। গতকাল ইসরাইল বাহিনী মিশরে সংলগ্ন রাফাহ সীমান্তে ব্যাপক ভাবে হামলা চালিয়েছে। মিশরের সাথে ফিলিস্তীনিদের যাতায়াত ও যোগাযোগ বন্ধে এই হামলা বলে ধারনা করছে হামাস। জাতিসংঘ গতকাল নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে গাজার কেন্দ্রস্থলে ঢুকে পড়েছে ইসরাইলি সেনারা আর এ কারনে হাজার হাজার ফিলিস্তীনির জীবন হানীর সম্ভাবনা উকি মারছে। ইসরাইলি ট্রাঙ্ক ও সাজোয়া খান বুরেইজ, নুসেইরাত ও মাখাজি শরনার্থী শিবিরের এদিকে এগিয়ে আসছে। ইসরাইল বাহিনী ইতিমধ্যে এক ঘোষনায় বলেছে উল্লেখিত এলাকা হতে অধিবাসিদেরকে সরে যেতে হবে। জাতিসংঘ হুশিয়ারী উচ্চারন করে বলেছে যে অসহায় ফিলিস্তিনীদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। গতকালও হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা ইসরাইলের ভূ-খন্ডে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইসরাইল গত সপ্তাহে অন্তত তিনবার লেবাননের অভ্যন্তরে হামলা পরিচালনা করে এবং দুই হিজবুল্লাহ যোদ্ধাকে হত্যা করে লেবানন তার সেনা হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষনা দেওয়ার পর থেকে ইসরাইলের অভ্যন্তরে প্রতিদিনই ক্ষেপনাস্ত্র ও রকেট হামলা পরিচালনা করে ইসরাইলকে অস্থির করে তুলছে, এদিকে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গতকাল স্বীকার করেছে গাজা যুদ্ধে এ যাবৎ পর্যন্ত তাদের পাঁচশত একজন সেনা নিহত হয়েছে অবশ্য হামাস বলছে গত তিরাশি দিনে দখলদার বাহিনীর সহস্রাধীক সেনা তাদের হাতে নিহত হয়েছে। হামাস যোদ্ধারা বিগত দিনগুলোতে কোন দিনে কত সেনা নিহত হয়েছে তা প্রকাশ করে বলেছে হামাস মরবে অথবা মারবে কোন ভাবেই নিজেদের ভূমি হতে নিজেদেরকে গুটিয়ে নেবে না। ইসরাইলের দুর্ধর্ষ সেনা বিগ্রেড হিসেবে পরিচিত গোলানী ও নবাহার ব্রিগেডের শতাধীক সেনাকে হত্যা করেছে ইসরাইল। পঁচিশ জন প্যারাট্রপার ও ছাব্বিশ জন কমান্ডার হামাসের হাতে নিহত হয়েছে এদিকে লোহিত ও ভূ মধ্যসাগরে হুতি বিদ্রোহী অবস্থান পরবর্তি সশরীরে আবার কোন কোন সময় ড্রোন হামলা পরিচালনা করলে তাদের বোধকরার সক্ষমতা দৃশ্যতঃ দেখা যাচ্ছে না। হুতি বিদ্রোহীদের এক ঘোষনায় বলা হয়েছে যে, তারা লোহিত সাগরে আবারও ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দাবী করেছে তারা উক্ত ক্ষেপনাস্ত্র হামলা প্রতিহত করেছে। গাজায় জাতিসংঘ পরিচালিত ত্রান তৎপরতা চলছে তবে ইসরাইলি সেনা বাহিনীর বাঁধার কারনে সর্বত্র ত্রানবাহী গাড়ী ঢুকতে পারছে না। যে কারনে গাজার অধিবাসিদের এক অংশ প্রতিদিনই ক্ষুধার্থ থাকছে। গতকালও সড়কে, হাসপাতালেও ধ্বংস স্তুপে থাকা ফিলিস্তীনিদের মৃত দেহ উদ্ধার করছে রেডক্রসের সদস্যরা।