দৃষ্টিপাত ডেস্ক ॥ থেমে নেই দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর হামলা, মৃত্যুর মিছিল প্রতিদিনই দীর্ঘ হতে দীর্ঘায়িত হচ্ছে গাজা উপত্যকায়। প্রতিটি দিন শুরু হয়, সূর্য ওঠে নিরিহ ও নিরস্ত্র ফিলিস্তীনিদের লাশের মাধ্যমে। একদা ঐতিহ্যের ধারক গাজা দৃশ্যতঃ মৃত্যু পুরিতে পরিনত হয়েছে। গতকালও দখলদার ইসরাইলি বাহিনী গাজার দক্ষিন ও পশ্চিমাঞ্চালের কয়েকটি এলাকাতে বিমান হামলা চালিয়েছে। ইহুদী সেনাদের অন্যতম লক্ষ্য বস্তু হাসপাতাল ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলো তাদের লক্ষবস্তুতে দৃশ্যমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহ। গত চুরাশি দিনে ইসরাইলি সেনারা হামাস নির্মুলের নামে নিরীহ ও নিরস্ত্র ফিলিস্তীনিদেরকে হত্যা করে চলেছে। গতকাল পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে বাইশ হাজারের অধিক। ইসরাইল কেবল ফিলিস্তীনি ভূমিই নিশ্চিহৃ করতে চাইছে তা নয়, দখলদার বাহিনীর সদস্যরা উপত্যকার নারী ও শিশুদেরকেও নির্বিচারে হত্যা করছে আর নারী শিশু হত্যার মাধ্যমে তারা আগামী দিনের ফিলিস্তীনি প্রজন্মকে ধ্বংস করতে চাইছে। এদিকে খান ইউনিসে দখলদার সেনারা হামাস যোদ্ধাদের প্রতিরোধ হামলায় টিকতে না পেরে পিছিয়ে আসছিল গতকাল পশ্চিমা মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে ইসরাইলের সেনারা শক্তি সঞ্চয় করে অন্তত এক বিগ্রেড এর অধিক সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়ে সেই সাথে তাদের মর্যাদার প্রতিক ট্রাঙ্ক ও সাজোয়া যান নিয়ে খান ইউনিস অভিযানে যাত্রা শুরু করেছে। গত সপ্তাহের কয়েক দিনে হামাস যোদ্ধাদের হাতে অন্তত পঞ্চাশের অধিক ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে। নিহত সেনাদের মধ্যে একজন কমান্ডার ও অপর একজন ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে দায়িত্বপালন করছিলেন। খান ইউনিসে ইসরাইল বাহিনী তাদের সেনা হারানোর পাশাপাশি কয়েকটি অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক হারিয়েছে। দৃশ্যতঃ খান ইউনিসে হামাস যোদ্ধাদের বীর বিক্রমে যুদ্ধরত কে দখলদার বাহিনী হামাসের সক্ষমতা নিয়ে উৎকণ্ঠিত। আড়াই মাসের অধিক সময় যাবৎ ইসরাইল গাজায় প্রতিনিয়ত প্রতিমুহুর্তে বিমান হামলা পরিচালনা করলেও কোন ভাবেই হামাস যোদ্ধাদের নির্মূল করতে পারছে না। তারা যা পারছে বা করছে তা হলো নিরীহ এবং নিরস্ত্র ফিলিস্তীনিদেরকে একের পর এক হত্যা ও আহত করে চলেছে। গাজায় নির্বিচারে বিমান হামলা ও গণহত্যায় আবারও জাতিসংঘ নিন্দা জানিয়েছে। গতকাল জাতিসংঘের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং এ সংস্থাটি ইসরাইলের প্রতি কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারন করে বলেছে অবিলম্বে গাজায় বেসামরিক নাগরিক হত্যা বন্ধ করতে হবে। জাতিসংঘ একই ব্রিফিং এ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে এই অসম যুদ্ধ আর নির্বিচারে যদি হত্যাকান্ড পরিচালিত হয় তাহলে আগামী দিন গুলোতে গাজা যুদ্ধ পুরো মধ্যপ্রাচ্যব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে। আন্তর্জাতিক এই সংগঠনটি গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রথম থেকেই হামলা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থানে যে কারনে ইসরাইল শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘের কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ইসরাইল সফরের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবে গাজায় জাতিসংঘ পরিচালিত ত্রান তৎপরতা পরিচালনায় ইসরাইল বাঁধা দিচ্ছে না। তারা জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুল গুলোতে হামলা করছে একই সাথে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী গাজার আশ্রয় শিবির গুলোতে প্রতিনিয়ত বিমান হামলা চালাচ্ছে। গতকালও পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি আশ্রয় শিবিরে হামলা করে শতাধিক ফিলিস্তীনিকে হতাহত করেছে। মিশর সীমান্তের আল ফারাহ আশ্রয় শিবিরে ও ইসরাল বাহিনী হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলি বাহিনী এবার গাজায় ঐতিহাসিক চৌদ্দশত বছরের পুরাতন ওমারি মসজিদটি বিমান হামলায় উড়িয়ে দিয়েছে। গাজার মুসলিম সম্প্রদায়ের অত্যন্ত পবিত্রতম মসজিদটি উড়িয়ে দেওয়ায় মৃত্যু আতঙ্কের পাশাপাশি মসজিদ গুড়িয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে, এবার গাজায় যুদ্ধ বিরতির ভিন্ন ধরনের প্রস্তাব দিয়েছে মধ্যাহৃকারী দেশ কাতার, কাতার যে প্রস্তাব দিয়েছে তা হলো চল্লিশ পঞ্চাশ জন বন্দীর মুক্তির বিনিময়ে কয়েক সপ্তাহ যুদ্ধ বিরতি থাকবে এবং গাজা হতে ইসরাইলি সেনা সদস্যদেরকে প্রত্যাহার করা। তবে হামাস যোদ্ধারা কাতারের এই প্রস্তাবে রাজি কিনা তা জানা যাইনি। এবার গাজায় গণহত্যার বিচার চাইলো দক্ষিন আফ্রিকা, দেশটি ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করেছে, সদস্য দেশগুলো যে যার বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারে। পশ্চিমা মিডিয়াগুলোর খবরে বলা হয়েছে মার্কিন দক্ষিন আফ্রিকার পক্ষে অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই মামলার শুনানী করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এদিকে ইসরাইলের সেনা বাহিনী হিজবুল্লাহ অস্বস্তিতে আছে। গতকাল ও ব্যাপক হামলা চালিয়েছি লেবানন ভিত্তিক এই সশস্ত্র সংগঠনি। ইসরাইলিদের হামাসের হাত থেকে মুক্তির দাবীতে গতকাল ও সশস্ত্র ইসরাইল ব্যাপী বিক্ষোভ করেছে ইসরাইলিরা। গাজার সড়ক গুলোতে লাশের উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করে যাচ্ছে। আহতরা বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।