বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আশাশুনি উপজেলার চাম্পাফুল আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র বিদ্যাপীঠে নব বর্ষের বই উৎসব তুমুল সংঘর্ষ ও বাদানুবাদের মধ্যদিয়ে পন্ড হয়ে গেছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল খায়ের মুকুলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং শিক্ষক জুলফিকরকে আটক করে থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী, উভয় পক্ষ ও ভিডিও ফুটেজ দেখে জানাগেছে, প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিমকে সাময়িক বহিস্কার করা, রাতের আঁধারে স্কুলের মালামাল বিক্রী করা, শতবর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতিমুলক কার্যক্রম এবং দীর্ঘদিনের বিরোধের জের ধরে স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক, বিদ্যোৎসাহী ব্যাক্তিবর্গ ও কমিটির নতুন পুরাতন সদস্যদের মধ্যে বিভেদ, পরস্পর বিরোধী কার্যক্রম ও হতাশাজনক পরিবেশ বিরাজ করে আসছে। এরই বহিঃ প্রকাশ পহেলা জানুয়ারী বই বিতরণ, নবীণবরন ও পানির প্লান্ট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দু’পক্ষ ও বহিরাগতদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ, হানাহানি। পরিস্থিতি এতটা নাজুক হয়ে পড়ে যে, স্কুল ক্যাম্পাসে কেউই নিরাপদ ছিলনা। কোমলমতি ছাত্রছাত্রিরা জীবন বাঁচাতে দিকবিদিক ছুটোছুটি করতে থাকে। সংঘর্ষ পুরে ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ ক্লাসরুম ও অফিস কক্ষে আশ্রয় নিলেও সেখানে হামলা চালান হয়। স্টেজের কাছে কয়েকজন আক্রমন চালালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রক্তাক্ত জখম হন। উভয় পক্ষের সমর্থকরা তুমুল আক্রমনে জড়িয়ে পড়েন। খবর পেয়ে আশাশুনি থানা থেকে পৃলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু আক্রমণে জড়িয়ে পড়া দু’পক্ষ যেন থামতে নারাজ। শেষ পর্যন্ত পুলিশ কঠোর অবস্থান গ্রহনের মাধ্যমে শিক্ষক জুলফিকরকে আটক করে ঝটিকা পদক্ষেপ নিলে আক্রমনে জড়িতরা গা ঢাকা দিতে বাধ্য হয়। এসময় বই বিতরণ বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের স্কুল ত্যাগের ঘোষণা দিলে স্কুল ফাঁকা হয়ে যায়। আহত শিক্ষককে আশাশুনি স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে ভর্তি করা হয়েছে। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল লতিফ মোড়ল জানান, প্রধান শিক্ষক আঃ হাকিম স্কুলের আয় ব্যয়ের হিসাব না দেওয়া, কমিটির সদস্যদের সাথে আসদাচরণ করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাকে গত ১৬/১০/২৩ তাং সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। এতে তারা সংক্ষুব্দ হয়ে নানা ষড়যন্ত্র করে আসছিলেন। এমনকি সাসপেন্ড প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিলে আমি থানায় জিডি করি। নতুন বই বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি স্টেজের কাছে পৌছেন। সেখানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, কমিটির সদস্য মিজানুর, আলাউল, আজিজুল মেম্বারসহ অনেকে ছিলেন। এসময় প্রতিপক্ষরা হামলা চালিয়ে হুলুস্থুল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল খায়ের মুকুলকে রক্তাক্ত জখম করা হয়। আমি শিক্ষক রুমে আশ্রয় নিলে সেখানেও আক্রমনের চেষ্টা করা হয়। আজকে সারা দেশের শিক্ষার্থীরা বই পেলেও আমাদের শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা হলো। প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার ১০.৩০ টার দিকে স্কুলের মধ্যে থাকা শিক্ষার্থীদের পুরনো খেলনা, দোলনাসহ বিভিন্ন সামগ্রী ভ্যানযোগে বাইরে নেওয়া হচ্ছিল। জানতে পেরে স্থানীয়রা বাধা দিলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পুরনো কমিটির একটি রেজুলেশন দেখিয়ে বিক্রয়ের অনুমোদন আছে বলতে চান। তখন শিক্ষক জুলফিকর উপস্থিত হয়ে বলেন, আমি বিক্রয় কমিটির প্রধান, আমার অজ্ঞাতে মালামাল বিক্রয় কি ভাবে সম্ভব। তাছাড়া রাতের আঁধারে মালপত্র সরানোর ঘটনার প্রতিবাদ করেন উপস্থিত অনেকে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ ঘটনাস্থানে পৌছে মালামাল ভ্যান থেকে নামিয়ে স্কুলে রাখার ব্যবস্থা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। আজ বই বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতি ঢোকার সময় বহিরাগতদের সাথে আনায় স্থানীয়রা প্রশ্ন তুললে বাদানুবাদ ও ঠেলাঠেলি হয়। তখন ছাত্রছাত্র, শিক্ষক ও কমিটির সদস্য ব্যতীত সকলকে বাইরে যেতে বলা হলেও গ্রাহ্য করা হয়নি। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন। আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিশ্বজিত অধিকারী জানান, এখনো কোন লিখিত অভিযোগ আসেনি, শিক্ষক জুলফিকরকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।