দৃষ্টিপাত রিপোর্ট ॥ গ্রাম বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য এবং অতি স্বুসাদু কুমড়া বড়ি বা ডাল বড়ির সাথে পরিচিত নন বা সবজির সাথে রান্না করা বড়ির স্বাদ গ্রহন করেন নি এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। অতি পরিচিত কুমড়া বড়ি দৃশ্যতঃ শীত মৌসুমেই তৈরীর আয়োজন ও প্রস্তুতি চলে। বর্তমান শীত মৌসুম বিধায় গ্রামে গ্রামে কুমড়া বা ডাল বড়ি তৈরীর উৎসব চলছে। সাতক্ষীরার বাস্তবতায় গ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে শহরের মানুষের কাছে ও বিশেষ লোভনীয় এবং আকর্ষনের ক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে চাল কুমড়া, ডাল বড়ি। আর তাই গ্রামের সীমানা পেরিয়ে শহরের ইট কনক্রিট এর জৌলুস পরিবেশে ও তৈরী চলছে এই বড়ি। বড়ি তৈরীর কাজে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানাগেছে সময়ের ব্যবধানে বড়ি তৈরীর উপকরন কুমড়া পেষা, ডাল ভিজিয়ে মিহি করা কয়েক বছর আগেও পরিশ্রমের কাজ ছিল। চাল কুমড়া ও ডাল সিল নোড়ায় পিষিয়ে মিহি করা হতো কিন্তু বর্তমানে সেই পরিশ্রমের কাজ আধুনিক প্রযুক্তিই সারছে। ব্লালেন্ডারে দিয়ে মুহুর্তে মিহি করা হচ্ছে। পাতলা কাপড় শাড়ী বা থান কাপড়ের উপর গুটি গুটি মিশ্রিত ডাল ও কুমড়া একত্রিত করা, এবং কয়েকটি রৌদ্রে অর্থাৎ তিন/চার দিন রৌদ্রে শুকিয়ে তারপর রান্না করে খাওয়ার উপযোগী করা হয়। ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগে ডাল বড়ি রান্না করা হয়। কেউ সবজিতে দিয়ে রান্না করে আবার অনেকে তেলে ভেজে মসলা দিয়ে রান্না করে খেয়ে থাকে। ভিন্ন ধরনের স্বাদ এই বড়িকে বিশেষ প্রিয় করেছে। গ্রামের মা বোনদের ইচ্ছা এবং সখ ডাল বড়ি দেওয়া এবং তা রান্না করে খাওয়া। খোজ নিয়ে জানাগেছে অন্যান্য বছর অপেক্ষা এ বছর সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকাতে বেশী পরিমান বড়ি দিতে দেখা যাচ্ছে। অনুসন্ধানে জানাগেছে চলতি মৌসুমে কুমড়ার মূল্য অন্যান্য বছর অপেক্ষা অনেক কম হওয়ায় মা বোনেরা বেশী বেশী বড়ি তৈরীতে নেমেছে। পূর্বেকার বছর গুলোতে কুমড়ার কেজি দশ/পনের টাকা থাকলেও এবার কুমড়ার কেজি চার/পাঁচ টাকায় নেমেছে। ডাল প্রতিকেজি সত্তর/পঁচাত্তর টাকা। তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে যে সকল মা বোনেরা এই বড়ি তৈরী করতে পারে না বা উপকরন বিশেষ ভাবে কুমড়া ও ডাল পিষতে পারে না তারা মুজুরীর মাধ্যমে তা সম্পাদন করে থাকে। সাতক্ষীরার বড়ির সুনাম ও সুখ্যাতি জেলার সীমানা পেরিয়ে রাজদানী ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরে ছড়িয়েছে। আতিথয়েতায় ডাল বড়ি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। শহরে বা গ্রামের আত্মীয়জনদের ডাল বড়ি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। শহরে বা গ্রামের আত্মীয়স্বজনদের ডাল বড়ি দিয়ে খুশি করার প্রচলন দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছর গুলোতে বানিজ্যিক ভিত্তিতে ও কুমড়া বড়ির ব্যবসা শুরু হয়েছে। এই বড়ি তৈরী পরবর্তি বাজারজাত করন করা হচ্ছে। বাজারে ছোয়াবিন বড়ির আদলে রাজধানীর ব্যবসায়ীরা গ্রাম হতে বিশেষ করে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় বড়ি প্রস্তুত কারীদের হতে সংগ্রহ করে ব্যবসা করছে। ব্যাপক চাহিদা হওয়ায় বানিজ্যিক ভাবে তৈরী করায় এই ব্যবসায় বিপুল সংখ্যক মা বোনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং গ্রামীন অর্থনীতিতে সুবাতাস বইছে। সৌখিনতা আর স্বাদের অন্বেষনের কুমড়া বড়ি বানিজ্যিক পন্যে পরিনত হয়েছে যা সাতক্ষীরার অর্থনীতিকে বিশেষ করে গ্রামনি অর্থনীতিক এগিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনার ক্ষেত্র বিস্তৃত হয়েছে। সামান্য পুজি এবং অতি অল্প পরিশ্রমের মাধ্যমে বড়ি উৎপাদন বিধায় গ্রামীন জনপদের মান বোনদের উল্লেখযোগ্য অংশ ঝুকছে শীূত মৌসুমের খন্ডকালীন এই ব্যবসায়। দিনে দিনে অধিকতার চাহিদা যেমন বাড়ছে অনুরুপ অর্থনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচেছ। অর্থনীতির চাকায় বড়ি উৎপাদন তথা প্রস্তুত ব্যবসা ও বড় ধরনের পরিবর্তন তথা সমৃদ্ধি ও স্বাবলম্বিতার পাথেয় হতে পারে।