শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:২৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে গেছে হাসিনার স্বৈরতন্ত্র: কূটনীতিকদের ইউনূস ভারতে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা চিকিৎসকদের নলতা আহসানিয়া মিশন রেসিডেনসিয়াল কলেজের অধ্যক্ষের দুর্নীতি ॥ উত্তাল নলতা ॥ শিক্ষক কর্মচারীরা মতবিনিময় করলেন ডাঃ শহিদুল আলম ও চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের সাথে মহামারীর দ্বারপ্রান্তে গাজা আলোচনায় থাইল্যান্ড ॥ বন্দী থাকসিন মুক্ত হরিনগর বাজারে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদের মাঝে নগদ অর্থ প্রদান পাইকগাছায় একটি বাঁশের সাঁকো পারাপারে এলাকাবাসীর চরম ভোগান্তি মাথাভারি হচ্ছে প্রশাসনের ॥ বাড়ছে সরকারের দু:চিন্তা ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ এর পদত্যাগ দাবীতে-মানববন্ধন চাম্পাফুল ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত

গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের মধুবৃক্ষ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২৪

এম এম নুর আলম ॥ উত্তরের হিমেল হাওয়া হেমন্তকে বিদায় জানিয়ে গুটি গুটি পায়ে বাংলার প্রকৃতিতে নিয়ে আসে শীতের আগমনী বার্তা। শীতকাল ষড়ঋতুর পঞ্চম ঋতু। পৌষ-মাঘ মিলেই প্রকৃতি ও জীবনের শরীরে সৃষ্টি করে শীতের অন্যরকম এক মোহনীয় সৌন্দর্য। তবে শীতকালের একটি বড় আকর্ষণ যা সবার মন জয় করে নেয় সেটা হল খেজুরের রস, রস থেকে বানানো গুড়-পাটালি আর নলেন গুড়ের সন্দেশ। গুড় দিয়ে যে সন্দেশ তৈরি হয় তা অনেকেরই অজানা। আর সে সন্দেশ একবার যদি কেউ চেখে দেখে তাহলে সারা জীবন তার স্বাদ মুখে লেগে থাকবে। তবে খেজুরের গুড়-পাটালিও কম স্বাদের নয়। তাই খেজুর গাছকে মধুবৃক্ষ বললে অত্যুক্তি হবে না। শীতকালে বাংলার প্রতিটি গ্রাম খেজুর রসের পিঠা-পায়েসের উৎসবে মেতে ওঠে। দূরদূরান্ত থেকে মেয়ে-জামাই শামিল হয় সেই উৎসবে। শহরে থাকা ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিরা গ্রামে ফিরতে ভুল করে না। কবে কখন বাঙালির সত্বার সঙ্গে খেজুর রসের পিঠা-পায়েস মিলেমিশে একাকার হয়েছে তা আজ আর কেউ খুঁজে দেখে না। বাংলার ঐতিহ্য পিঠা-পায়েসের আনন্দটাই এখন মুখ্য হয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শহর ছেড়ে একটু ভেতরে গেলেই চোখে পড়বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা খেজুর গাছের সারি। গাছের মাথায় বাঁধা রয়েছে কলস অথবা হাঁড়ি। টপ টপ করে রস পড়ছে। কোনো তৃষ্ণার্ত পাখি নলের ওপর বসে সুমিষ্ট এই রস মজা করে পান করছে। আবার গাছ জড়িয়ে ধরে গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের হা করে রস খাওয়ার অপূর্ব দৃশ্য অহরহ চোখে পড়ে। খেজুর গাছের মিষ্টি রস পেতে গাছের উপরিভাগের নরম অংশ কেটে সেখানে বসিয়ে দেয়া হয় বাঁশের তৈরি নল। গাছের কাটা অংশ থেকে চুইয়ে চুইয়ে নল দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় রস জমা হয় কলসিতে। রাতভর জমা হওয়া রস কাকভোরে সংগ্রহ করতে উপস্থিত হয় গাছি। কুয়াশায় মোড়ানো শীতের সকালে বাঁক কাঁধে বিস্তীর্ণ মাঠের সরুপথ দিয়ে গাছির বাড়ি ফেরার দৃশ্য যে কোনো প্রকৃতি প্রেমীকে মুগ্ধ করবে। রস সংগ্রহ শেষে আগুনে জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় গুড়-পাটালি। খেজুর রসের জনপ্রিয়তা থাকলেও অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে বাদুড় দ্বারা সংক্রমিত নিপা ভাইরাস থেকে। জ্বাল দিয়ে ফোটানো খেজুরের রস সবাই যেন খায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খেজুর গাছের জন্যই অষ্টাদশ শতাব্দীতে গ্রামগঞ্জে গড়ে উঠেছিল গুড় তৈরির হাজারো কারখানা। বাংলার ঐতিহ্যের অহংকার মধুবৃক্ষ আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। আশপাশে, রাস্তার দুধারে, ফসলি জমির আলে আগের মতো খেজুর গাছ দেখা যায় না। মূল্য কম আর যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা বৈধ-অবৈধ ইটভাটায় খেজুর গাছের চাহিদা থাকার কারণে অনেকেই অপ্রয়োজনীয় গাছ বলে বিক্রি করে দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ শুধু শীত মৌসুমে রস পাওয়ার আশা না করে অধিক লাভবান হওয়ার আশায় খেজুর গাছ বিক্রি করে সেখানে রোপণ করছে বিদেশি প্রজাতির গাছ, যা আমাদের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। একবার দেশি প্রজাতির বাগান ধ্বংস হয়ে গেলে সেখানে কৃত্রিমভাবে বাগান তৈরি করা যায় ঠিকই কিন্তু তা কখনই মূল দেশি প্রজাতির বাগান হয় না। বাঙালির ঐতিহ্যের অহংকার খেজুর গাছ আজ অসচেতনতা, অবহেলাসহ বিভিন্ন কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে। খেজুরগাছ হারিয়ে গেলে খেজুরের রসও হারিয়ে যাবে। তাহলে কী বাঙালির অহংকার খেজুর রসের পিঠা-পায়েসের উৎসব আমরা ধরে রাখতে পারব না?

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com