এফএনএস: নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর চর সৈয়দপুর আল আমিন নগর এলাকায় কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনায় নিখোঁজ সেই স্কুলশিক্ষিকার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ৮ জনের মৃত্যু হলো। গতকাল সোমবার দুপুর সোয়া একটার দিকে লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার স্থান থেকে লাশটি উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। পরে তারা লাশটি ফায়ার সার্ভিসের কাছে হস্তান্তর করেন। নিহত উম্মে খায়রুন ফাতেমা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের বৈদ্যরবাজার হারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এর আগে ভোর ৫টায় উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ডুবে যাওয়া লঞ্চটিকে নদীর তীরে টেনে তুললেও ভিতরে কোনো লাশ পাওয়া যায়নি। নিখোঁজদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট কাজ করছে। গতকাল সোমবার ভোরে লঞ্চটি উদ্ধার করে বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’। উদ্ধার কাজে অংশ নেয় ফায়ার সার্ভিস, নৌ-পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ’র ডুবুরি দল, কোস্ট গার্ডসহ একাধিক সংস্থা। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের নারায়ণগঞ্জের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুলাহ আল আরেফীন জানান, ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধার করা হয়েছে, ভেতরে প্রাথমিকভাবে আমরা কোনো লাশ পায়নি। উদ্ধার ৮ মরদেহের পরিচয়- সোনারগাঁও হরিয়ান প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা উম্মে খাইরুন ফাতিমা (৪০), মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার উত্তর ইসলামপুর এলাকার জয়নাল ভ‚ঁইয়া (৫০), রমজানবেগ এলাকার আরিফা (৩৫), তার শিশু সন্তান সাফায়েত হোসেন (দেড় বছর), গজারিয়া উপজেলার ইসমানিরচর এলাকার জয়রাজ বংশীর ছেলে সৃতি রানী বর্মণ, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের আজিজের মেয়ে সালমা (৩৩), একই এলাকার ইউনুস খলিফার মেয়ে ফাতেমা (৭) ও একজন অজ্ঞাত। নিখোঁজ চারজন হলেন- ঢাকা ডেমরার আব্দুলাহ আল যাবের আদনান (৩২), মুন্সিগঞ্জের মোসলেম উদ্দিন হাতেম (৫৫), আরোহী ও জোবায়ের হোসেন। লঞ্চডুবির ঘটনায় জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রিট মো. শামীম বেপারী বলেন, কার্গো জাহাজের চালক এবং লঞ্চের চালক দু’জনেই বেপরোয়া গতিতে ছিলেন। আশা করি এবার আমরা জোরালো পদক্ষেপ নিতে পারবো। গতকাল সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর চর সৈয়দপুর আল আমিন নগর এলাকায় কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চ ডুবির ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি দু’জনেই বেপরোয়া গতির চালক ছিলেন। এরপর আমরা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে বিস্তারিত জানাতে পারবো। এরআগে, গত রোববার দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর কয়লাঘাট অংশে রুপসী-৯ নামে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় মুন্সিগঞ্জগামী লঞ্চ ‘এমভি আশরাফ উদ্দিন’ ডুবে যায়। এ সময় লঞ্চটিতে প্রায় ৭০ জনের মতো যাত্রী ছিলো বলে লঞ্চে থাকা বেঁচে ফেরা কয়েকজন দাবি করেছেন। এদিকে লঞ্চডুবির ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএ পৃথক দুটি মামলা করেছে। গতকাল সোমবার দুপুরে মামলা দুটি করা হয়। যার একটি নৌ থানায়। অপরটি নৌ আদালতে। বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মাসুদ কামাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নৌ নিরাপত্তা উপপরিচালক বাবু লাল বৌদ্ধ বাদী হয়ে মামলা দুটি করেছে। মামলায় আটজনকে আসামি করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ থানা ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বিআইডব্লিউটিএ থানায় একটি মামলা করেছে। মামলার পর লঞ্চে ধাক্কা দেওয়া কার্গো জাহাজের আটক মাস্টার-ড্রাইভার গ্রিজার ইঞ্জিনিয়ারসহ আটজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাদের বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।