এম এম নুর আলম ॥ আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে ভেজাল সরিষা তেলে ছেয়ে গেছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা স্বল্প সময়ে অধিক লাভের জন্য এ ধরনের ভেজাল এর সাথে যুক্ত হয়েছেন। যার জেরে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারণ মানুষ। রীতিমতো উপজেলার বুধহাটা বাজারের অধিকাংশ সরিষা ভাঙানো কারখানার ভিতরে প্রকাশ্যেই চলছে ভেজালের কারবার। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব গোডাউনে এই ভেজাল সরিষা তেল তৈরির কারবার রমরমিয়ে চললেও প্রশাসন যেন নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন এই সকল মিল ও গোডাউন থেকে কয়েকশ লিটার ভেজাল সরিষার তেল উৎপাদন হচ্ছে। যা আশাশুনির প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ আশ পাশের বিভিন্ন উপজেলা গুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। গোপন সূত্রে জানাগেছে, এসব কারখানায় কম দামের নিম্ন মানের তেল ও পাম ওয়েল জাতীয় তেলের মধ্যে সরিষার তেলের রং আনতে ব্যবহার করা হচ্ছে এক ধরনের ক্ষতিকারক রাসায়নিক তরল পদার্থ। এক টিন সাদা বা পাম তেলে এক ড্রপার বা কয়েক এমএল রাসায়নিক সেই বিষাক্ত তরল ব্যবহার করে মিশ্রণ করলেই কমদামী তেল সরিষার তেলের রং ধারণ করছে। কোথাও সাদা বা পাম তেলের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে সামান্য খাঁটি সরিষার তেলও। এছাড়াও এক টিন তেলে খাঁটি সরিষার তেলের ঝাঁঝ আনতে ব্যবহার করা হচ্ছে অপর এক প্রকার বিষাক্ত দম বন্ধ করা ঝাঁঝ যুক্ত তরল পদার্থ। তেলে ঝাঁঝ আনতে এই বিষাক্ত ঝাঁঝ যুক্ত তরল এক টিনে এক ফোঁটা মেশানো মাত্রই কমদামী সাদা তেল ও পাম তেল খাঁটি সরিষা তেলের মত ঝাঁঝ বিশিষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে, সাধারণ মানুষের বোঝার উপায় থাকছে না, যে এই বিষাক্ত তেল খাঁটি না কমদামী নামমাত্র সরিষার তেল। ফলে খাঁটি সরিষার তেলের তুলনায় একই রকম দেখতে এই কম দামের ভেজাল সরিষার তেল নিজেদের অজান্তেই কিনছেন সাধারণ মানুষ। জানাগেছে, এসব কারখানা থেকে শহর ও গ্রাম-গঞ্জের হাটে বাজারের দোকানদাররা যে দামে বলবেন সেই দামের তেলের টিন তৈরি করে দিচ্ছেন এই সকল অসাধু ভেজাল তেল কারখানা কর্তৃপক্ষ। তারপর খাঁটি সরিষার তেলের তুলনায় এক টিন ভেজাল সরিষার তেল কিছুটা কম দামে বিক্রি করছেন অসাধু পাইকারী ব্যবসায়ীরা। টিন প্রতি কম দামে খাঁটি সরিষার তেলের মত ঝাঁঝ যুক্ত ভেজাল তেল, খাঁটি সরিষার তেল বলে বেশি লাভের আশায় হাটে বাজারে কেজি বা লিটার হিসেবে বিক্রি করছেন সাধারণ খুচরা দোকানদাররা। সেকারণে এই সকল ভেজাল সরিষার তেল শহর থেকে গ্রাম-গঞ্জের গৃহস্থ বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে, বিষাক্ত রাসায়নিক তরল সাধারণ মানুষ থেকে ছাত্র ছাত্রীদের শরীরে দিনের পর দিন নিজেদের অজান্তেই প্রবেশ করছে। যার ফলস্বরূপ যে কোনও দিন খাদ্যে বিষক্রিয়ায় খবর পাওয়ারও সম্ভাবনা দেখছেন সচেতন মহল। আশাশুনির বুধহাটা এলাকার বেশীর ভাগ তেল মিল গুলোতে ভেজাল সরিষা তেল তৈরির কারবার চললেও তারা যেন কোন এক ভাবে প্রশাসনের ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যায়। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, বাজারে মোবাইল কোর্ট চালাতে আসলেই এক শ্রেনির দোকানদার ও তেল মিলে অফিসারদের অভিযান চালানোর খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেজাল তেল উৎপাদনকারীরা সেই সময়ের জন্য নিজেদের তেল মিল ও গোডাউনের মেন গেটে তালা মেরে উৎপাদন সাময়িক ভাবে বন্ধ রেখে দেন। অফিসাররা চলে যাওয়ার পর থেকেই ফের ভেজাল তেল তৈরির রমরমা কার্যক্রম শুরু হয়ে যায় ঐ সকল মিল ও গোডাউনে। এলাকাবাসীর দাবি, সমস্ত ভেজাল তেল মিল ও ভেজাল মাল বিক্রয় দোকান গুলিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক সাথে অভিযান পরিচালনা করা হোক। যাতে ভেজাল তেলে ও ভেজাল দ্রব্য বিক্রয়কারি অসাধু ব্যক্তিরা নিজ নিজ মিলের প্রধান গেটে ও দোকানে তালা মারার সুযোগ না পান। তবেই সমস্যা সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভেজাল সরিষা তেলের এক কারবারি জানান, উপর মহল থেকে নিচ মহল পর্যন্ত ‘সেটিং’ করেই এই ব্যবসা চলছে। উপর মহল থেকে নিচ মহল পর্যন্ত কারা এই তালিকায় রয়েছে ও কি সেটিং রয়েছে? ওই ব্যবসায়ীকে প্রশ্ন করা হলে সে ব্যবসার খাতিরে কোনও উত্তর দেননি। ব্যবসায়ীদের মধ্যেই প্রচলিত একটি কথা রয়েছে,‘‘বছর পাঁচেক চুটিয়ে এই ভেজাল তেল ও ভেজাল মালের কারবার চালাতে পারলে সারা জীবন কোনও কাজ না করে ঘরে বসে থেকে খেলেও লাভের টাকা শেষ হবেনা।’’ ফলে, নিজের আখের গুছাতে গিয়ে শিশু থেকে সাধারণ মানুষের শরীরে বিষাক্ত রাসায়নিক ঢুকিয়ে তিল তিল করে মৃত্যুর কোলে ফেলে দেওয়া এই সকল ভেজাল তেল ও খাদ্যদ্রব্য তৈরির কারবারিরা কি শাস্তি পাবে? নাকি এই ভাবেই আশাশুনির ভেজাল তেল ও ভেজাল খাদ্যদ্রব্য এর কারবার রমরমিয়ে চলতে থাকবে? তিলে তিলে মৃত্যুর হাত থেকে কবে মুক্তি পাবে আশাশুনির সাধারণ মানুষ? এই সব প্রশ্ন এখন ঘোরাফেরা করছে আশাশুনির সাধারণ মানুষের মুখে মুখে।