শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২১ পূর্বাহ্ন

বিপুলসংখ্যক উন্নয়ন প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ার শঙ্কা রয়েছে

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২২ মার্চ, ২০২২

এফএনএস : নির্ধারিত সময়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় ও অপচয় বাড়ছে। তারপরও প্রতি অর্থবছরই নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর তৎপরতা বেশ কম। পরিকল্পনা কমিশন চলতি অর্থবছরের (জুন পর্যন্ত) মধ্যেই ৩৭৮টি উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন করার জন্য সময় নির্ধারণ করেছে। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) ওই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। তবে ওসব প্রকল্পের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কতগুলো বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) যে লক্ষ্য ছিল মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো সেখান থেকে সরে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিশ্র“তি দিয়েও প্রকল্প শেষ করতে না পারায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। পরিকল্পনা কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি (২০২১-২২) অর্থবছরের শুরুতেই ৩৫৫টি প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তার মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৩২১টি, কারিগরি সহায়তার ৩০টি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অর্থায়নের ৪টি। তবে মাঝপথে এসে ২৩টি প্রকল্প কমিয়ে আরএডিপিতে ৩৭৮টি প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তার মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৩২২টি, কারিগরি সহায়তার ৩৭টি ও নিজস্ব অর্থায়নের ১৯টি। চলতি অর্থবছরের সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে খাতভিত্তিক বিনিয়োগ প্রকল্প হচ্ছে সাধারণ সরকারি সেবা খাতের ৭টি প্রকল্প। তাছাড়া প্রতিরক্ষা খাতের দুটি, জনশৃঙ্খলা খাতের ১৯টি, শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সেবা খাতের ১৮টি, কৃষি খাতের ৩১টি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২৫টি এবং পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতের সর্বোচ্চ ৬০টি প্রকল্প। আরো আছে স্থানীয় সরকার ও পল­ী উন্নয়ন খাতে ২২টি, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতে ২০টি, গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলিতে ৫২টি, স্বাস্থ্যে ১২টি, ধর্ম-সংস্কৃতি ও বিনোদনে ২২টি, শিক্ষায় ১৩টি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ৬টি এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১৩টি প্রকল্প রয়েছে। সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে ৪৩৯টি উন্নয়ন প্রকল্প সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল। তার মধ্যে অর্থবছরে শেষ হয়েছে ২৩৬টি প্রকল্প। বাকি ২০৩টি প্রকল্প চলতি অর্থবছরের এডিপিতে যোগ হয়েছে। তবে তালিকার বাইরে থাকা ২৮টিসহ এ অর্থবছরের মোট ২৬৪টি প্রকল্প শেষ হয়। তবে সেগুলোর মধ্যেও আবার জটিলতা রয়েছে। অর্থাৎ পুরোপুরি শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে ১৪০টি প্রকল্প। কিছু কাজ বাকি থাকলেও ১২৪টি প্রকল্পের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে শেষ করা হয়েছে। তাছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল ৩০৫টি প্রকল্প। কিন্তু সমাপ্ত হয়েছে ১৪১টি প্রকল্প। বাকি ১৬৪টি প্রকল্প চলতে থাকে। লক্ষ্যের বাইরে ৪১টিসহ এ অর্থবছরের মোট সমাপ্ত হওয়া প্রকল্প হচ্ছে ১৮২টি। তবে শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৯০টি। একইভাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল ৩৪৬টি উন্নয়ন প্রকল্প। তার মধ্যে শেষ হয়েছে ২৪৫টি। তাছাড়া লক্ষ্যমাত্রার বাইরে থাকা ৬৭টিসহ মোট শেষ হয় ৩১২টি প্রকল্প। এর মধ্যে মাত্র ১৫৫টি প্রকল্পের শতভাগ কাজ শেষ হয়। সূত্র আরো জানায়, চলতি অর্থবছরের শেষ করার জন্য নির্ধারিত উলে­খযোগ্য কয়েকটি প্রকল্প হচ্ছে- গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন এবং আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত সমবায়ভিত্তিক বহুতল ভবন বিশিষ্ট পল­ী জনপদ নির্মাণ, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ২৫টি উপজেলা সদরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংযোগ সড়ক ও আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ, মিরসরাই ১৫০ মেগাওয়াট ডুয়েলফুয়েল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, ন্যাশনাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট এবং মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ারড পাওয়ার প্রকল্প। এদিকে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ না হওয়া প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদদের অভিমত, নির্ধারিত সময়ে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় অপচয় বাড়ছে। সময়মতো প্রকল্প শেষ না হওয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দু’ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে অর্থনীতি। নির্ধারিত মেয়াদে প্রকল্প শেষ না হওয়ায় পরিচালন ব্যয়সহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যায়। আবার প্রকল্প থেকে যে সুবিধা পাওয়ার (আউটকাম) কথা তা দেরিতে পাওয়া যায়। ফলে আগে সুবিধা পেলে যে লাভ হতো সেটি আর হয় না। এখানে একটা বড় ক্ষতি হয়ে যায়। প্রকল্প শুরু করতে যতোটা আগ্রহ থাকে শেষ করতে ততোটাই অনীহা দেখা যায়। কারণ নতুন প্রকল্প শুরু হলে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা গাড়ি পায়, বিভিন্ন ভাতা, বিদেশ ভ্রমণ, লোক নিয়োগের নামে অর্থ ও আত্মীয়-স্বজনদের কর্মসংস্থান করতে পারে। ওসব যখন হয়ে যায় তখন প্রকল্প শেষ করার কথা মনে থাকে না। আর শেষ হলে তো সুযোগ-সুবিধাও শেষ হয়ে যায়। পাশাপাশি শেষ করতে না পারলে তিরস্কার বা শেষ করলে পুরস্কারের কোনো ব্যবস্থা নেই। কাজেই এমন অবস্থা চলতেই থাকবে। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া দরকার। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী জানান, প্রতিশ্র“তি দিয়েও প্রকল্প শেষ করতে না পারার অন্যতম কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়, প্রকল্প গ্রহণকারী ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। তাছাড়া মন্ত্রণালয়গুলোর অ্যাকশন প্ল্যান এবং রোডম্যাপের মধ্যে দুর্বলতা থাকে। ওসব কারণে দেখা যায় শেষ পর্যন্ত লক্ষ্য পূরণ করতে পারে না। তবে কেন প্রকল্প শেষ হলো না সেজন্য সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়। মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বিভাগের আন্তঃমন্ত্রণালয় প্রোগ্রামিং কমিটির সভায় তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। এমনকি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকেও উপস্থাপন করা হয়। ফলে সংশ্লিষ্টরা এক ধরনের চাপের মধ্যে পড়ে যায়। এভাবে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com