কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি ॥ গ্রাম বাংলার শীতের আলাদা ঐতিহ্য রয়েছে। আর দেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান গ্রামীণ সংস্কৃতির পিঠাপুলি। শীত এলেই পিঠাপুলি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। সেই পিঠাপুলির মধুর ঘ্রাণেই মুখরিত হলো সাতক্ষীরার কলারোয়া সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ। বৃহস্পতিবার কলারোয়া সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রথমবারের মতো এ পিঠা উৎসবের আয়োজন করে। কলেজে অধ্যয়নরত বিভিন্ন শ্রেণি ও বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে ৯টি স্টলে নানান ধরণের শীতকালীন ৩৮ প্রকারের পিঠা শোভা পায়। এরমধ্যে ভাজা কুলি পিঠা, ফুল পিঠ, পাকান পিঠা, সুজির পিঠা, পার্টি সাপ্টা পিঠা, নকশী পিঠা, জামাই পিঠা, ভিজাফুল পিঠা, আতা পিঠা, কুমড়ো পিঠা, ডিম পিঠা, রসের পিঠা, ডালিয়া পিঠা, নকশী পিঠা, সবজি পিঠা, হৃদয় হরন পিঠা, মোমো পিঠা, সন্দেশ পিঠা, সরু পিঠা, ছিটা রুটি পিঠা, সাদা বিস্কুট পিঠা, দুধে ভিজানো তেলের পিঠা, দুধকলি পিঠা, মসুর ডাউলের পিঠা, মাছ পিঠা, ভাপা পিঠা, ছাঁচের পিঠা, দুধ পাকন পিঠা, গোলাপ পিঠা, সেমাই পিঠা, ঝাল পুলি পিঠা, ডালিয়া পাকন পিঠা, শুকনো বিস্কুট পিঠা, ডিম সুন্দরী পিঠা, ঝিনুক পিঠা, চিরুনি পিঠা, পুলি পিঠা, দুধ পুলি, পাটিসাপটা, নকশি পিঠা, ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, জামাই পিঠা, গোকুল পিঠা, নারকেল পিঠা, রসের পিঠাসহ হরেক রকমের পিঠা শোভা পায়। স্টলগুলোর নামও নজরকাড়া। যেমন: পৌষালি পার্বণ, হাও মাও খাও, পিঠাপ্রেমী, পিঠা বিলাস, লবঙ্গলতিকা, কাজললতা, রসব্যঞ্জন, পিঠা সরোবর প্রভৃতি। বাহারি পিঠা স্টলে উপচে পড়া ভিড় ও দর্শনার্থীদের আগ্রহ এক ভিন্ন মাত্রা পায়। সবমিলিয়ে পিঠা উৎসব এক প্রাণের মেলায় রূপ নেয়। লোকসংগীতের মুর্ছনার সঙ্গে বর্ণিল বেলুন আর শান্তির পায়রা উড়িয়ে দিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কৃষ্ণা রায়। পিঠা উৎসবের আয়োজনের ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এসএম আনোয়ারুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের মাঝে গ্রাম বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য তুলে ধরতে কলারোয়া সরকারি কলেজে এবারই প্রথম পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। কালের বিবর্তনে শীতের পিঠা পুলির ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথে। নানা ধরনের পিঠাপুলির সাথে এ প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়াই এই পিঠা উৎসবের মূল উদ্দেশ্য। আগামি বছর আরো বড় পরিসরে পিঠা উৎসব আয়োজনের কথা বলেন তিনি। পিঠা উৎসবের উদ্বোধনকালে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম, নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যের সহধর্মিণী কাজীরহাট কলেজের সহকারী অধ্যাপক সুরাইয়া ইয়াসমিন রত্না, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নাহিদ হাসান শাহিনসহ কলেজের শিক্ষকমন্ডলী ও সুধীবৃন্দ। এমপি পত্নী রত্না বলেন, পিঠা-পুলি আমাদের লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতির-ই প্রকাশ। শহর কেন্দ্রীয় জীবন জীবিকার কারণে এই দেশজ উৎসব কমে গেছে। পিঠা উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাঙালির নানা রকমের পিঠার সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। বাঙালির পিঠা উৎসব কে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়েও পালন করার পরামর্শ দেন তিনি। সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সোহানা বলেন, আমি আগে জানতাম না বাঙ্গালীদের এত প্রকার পিঠার কথা। আমাদের কলেজ থেকে এমন একটা পিঠা উৎসব আয়োজন করেছে, আমি খুব খুশি। চেষ্টা করবো আগামিতে আমি সকল প্রকার পিঠা বানানোর জন্য।