দৃষ্টিপাত ডেস্ক ॥ হামাস ইসরাইল যুদ্ধ বিরতির চুক্তি এবং তা কার্যকর হতে চলেছে গাজায় গণহত্যা বন্ধ হতে যাচ্ছে। নিরীহ, নিরপরাধ ফিলিস্তিনিরা বাস্তহারা হতে রক্ষা পাচ্ছে। গাজা উপত্যকায় ক্ষুধা দুর্ভিক্ষ এবং মানবিক বিপর্যয় রোধ হবে এমন আশা আর প্রত্যাশা বিশ্ববাসী তথা বিশ্বের শত শত কোটি মানুষের মাঝে আশার সঞ্চার ঘটতে চলছিল কিন্তু সেই যুদ্ধবিরতি, শান্তি, গণহত্যা কেবল আলোচনাতেই থাকলো। দখলদার ইসরাইল হামাস কর্তৃক প্রস্তাবিত ও সমর্থিত যুদ্ধ বিরতিকে প্রত্যাখান করেছে। গতকাল পশ্চিমা মিডিয়া আলজাজিরা ও রয়টার্স পরিবেশিত খবরে বলা হয়েছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হামাসের প্রস্তাবকে প্রত্যাখান করে বলেছে হামাসের প্রস্তাব মেনে যুদ্ধ বিরতি কার্যকর হবে না। হামাস অযৌক্তিক ও অনধিকার দাবী উত্থাপন করেছে। পশ্চিমা বিশ্ব ইসরাইলের হামাসের প্রস্তাবকে প্রত্যাখান করায় উদ্বিগ্ন এবং অখুশি। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রকাশ্যে ইসরাইলের সমালোচনা করে বলেছে ইসরাইল মানবতা বিরোধী অবস্থানে থাকতে চাইছে আর এ জন্য তারা যুদ্ধ বিরতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। উল্লেখ্য গত সাত অক্টোবরের পর থেকে ইসরাইল গাজায় যে গণহত্যা পরিচালনা করে আসছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দৃশ্যতঃ তাতে সমর্থন করে আসছিলো, কিন্তু বিশ্ব শান্তি রক্ষায় গণহত্যা বন্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ বিরতির পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে আরব দেশ গুলোর অব্যাহত চাপে ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজায় হামলার বিপক্ষে। বুধবার দিনব্যাপী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্র সহ শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক শেষে মার্কিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এক রোখা নীতির কারনে যুদ্ধ বিরতি হচ্ছে না। তিনি বলেন গাজার বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা কান্ডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উৎসাহিত করতে পারে না। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন বলেছেন নেতানিয়াহু একজন অযোগ্য প্রধানমন্ত্রী তাকে অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। হিলারী ক্লিনটন ও চাইছে গাজায় যুদ্ধ বিরতি কার্যকর হোক। দৃশ্যতঃ যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের মধ্যে সম্পর্কের দারুন অবনতি ঘটতে চলেছে। আল জাজিরা টেলিভিশন জানিয়েছে ইসরাইল ও আরবদেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধের সময়গুলোতে যে মুহুর্তে ইসরাইল পরাজিত হতে বলে সেই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন ইসরাইলের পক্ষ হয়ে আরব দেশগুলোর উপর হামলা পরিচালনা করলে সেই যুদ্ধে ইসরাইল জয়ী হয়। আর তাই বলা যায় ইসরাইল নামক রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্র একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবদান সবার উচ্চ বর্তমান সময়ে সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে গাজা যুদ্ধ বিরতি নিয়ে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক চরম অবনতির দিকেই ধাবিত হতে চলেছে। এদিকে ইসরাইলের বিমান হামলা চলছে তো চলছেই। গতকালও ইসরাইলের বিমান বাহিনীর বিমান গুলো গাজার রাফা শহরের বিভিন্ন এলাকাতে অবিরাম বিমান হামলা পরিচালনা করে উপত্যকার মধ্য অঞ্চলগুলোতে যে সকল এলাকাতে দখলদার বাহিনীর সেনারা প্রত্যাহার হয়েছিল এবং হামাস নেতৃত্বাধীন প্রশাসন কাজ পরিচালনা করেছিল এবং ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিল। গতকাল উক্ত ছেড়ে যাওয়া এলাকাগুলোতে আবারও ইসরাইলি বিমান বাহিনীর বিমান গুলো বিমান হামলা পরিচালনা করছে। ফিলিস্তিনি সরকার মধ্যগাজায় পুনঃগঠনের কাজ শুরু করা থমকে গেছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে গতকাল পর্যন্ত গাজায় ইসরাইলের বিমান হামলায় সাতাশ হাজার নিরীহ বেসামরিক ফিলিস্তিনির নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি হামলায় নিহতের তালিকায় দেখছে এবং বর্তমান ও থাকছে মহিলা ও শিশুরা। গাজায় ত্রানবাহী যানবাহন প্রবেশের ক্ষেত্রে পুর্বের ন্যায় বর্তমান সময়েও দখলদার বাহিনীর সদস্যরা বাধা প্রদান করছে। গতকালও বিমান হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী, শুধু মাত্র রাফা শহরে বিমান হামলায় নিহত হয়েছে শতাধিক। এদিকে হামাসের পক্ষ হতে বিশেষ করে তাদের সশস্ত্র শাখা আর কাসেম ব্রিগেড জানিয়েছে কোন অবস্থাতেই হামাস দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করবে না। হিজবুল্লাহ গোরিলারা পুর্বের অপেক্ষায় বর্তমান সময়ে হামলার ধরন ও প্রকৃতি আরও অধিকতর বৃদ্ধি করেছে। গত দুই দিনে তারা ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিব সহ অপরাপর শহরগুলোতে দশটি ক্ষেপনাস্ত্র ও শতাধিক রকেট হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলের অভ্যন্তরে বিক্ষোবের শেষ নেয়। গতকাল দেশটির পার্লামেন্ট ভবনের সামনে অন্তত লক্ষাধীক ইহুদীরা বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভ কারীদের এতোদিনে একটাই দাবী ছিল যে ইসরাইলী বন্দীদেরকে হামাসের কবল হতে মুক্ত করা এবারের বিক্ষোভে যোগ হয়েচে দেশটির প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা খর্ব করার প্রতিবাদে। হুতি যোদ্ধারা গতকালও লোহিত ও ভূমধ্যসাগরে ড্রোন হামলা পরিচালনা করেছে। প্রতিটি হামলায় ইসরাইলী সংশ্লিষ্ট জাহাজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। গাজার মাটিতে কেবল লাশের গন্ধ নয়, প্রতিটি প্রান্তে আহতদের আর্তনাদ ছড়িয়ে পড়েছে। একই সাথে ক্ষুধার্থ মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে খাদ্যের অভাব মেটাতে পশুখাদ্য এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক পশু জবাই দিয়ে সেই মাংস রান্না করে খাচ্ছে। বিশ্বের একমাত্র মানব জাতি যারা আহারে এবং দখলদারদের গুলিতে কেবল মৃত্যুর পথে অগ্রসর হচ্ছে।