জাহাঙ্গীর আলম কবীর
কিনোয়া ও চিয়া সীড চাষ করে সাড়া ফেলেছেন সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের দিগরডাঙ্গা গ্রামের তিন ভাই বোন। বোন ডাক্তার আমিনা খাতুন রুনার পরামর্শে বড় ভাই কৃষিবিদ জামিল হোসেন ও ছোট ভাই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ইবনে সউদ এক বিঘা জমিতে এই দুটি সুপার ফুড সীডের চাষ করেছেন। অর্ধেকের জমিতে কিনোয়া এবং বাকি অর্ধেক জমিতে চিয়া সীড। উৎসুক জনতারা দেখতে আসছেন তাদের ফসলের ক্ষেত। ডাক্তার আমেনা খাতুন জানান, কিনোয়া ও চিয়া সীডের অভূতপূর্ব গুনাগুন সম্পর্কে জানতে পেরে তিনি তার ভাইদের চাষে উদ্বুদ্ধ করেন। অনলাইনে অর্ডার করে বীজ এনে দেন রাজশাহী থেকে। জমি চাষ ও বীজ বোনেন তার দুই ভাই। জমি পরিচর্যা করেও থাকেন তারা। ইঞ্জিনিয়ার ইবনে সউদ বলেন, সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই কিনোয়া ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা যাবে। চিয়া সংগ্রহ করতে আরো ১০-১৫ দিন সময় লাগবে। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, কিনোয়া ও চিয়া সীডে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ওমেগা থ্রি, আয়রন ও ফাইবার সহ গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল রয়েছে। এছাড়াও কিনোয়ায় রয়েছে কপার, জিংক, ফসফরাস, অ্যামাইনো এসিড ও ভিটামিন ই। সবচেয়ে বড় কথা ভিটামিন সি ছাড়া সকল পদার্থ পাওয়া যায় এতে। চিয়া সীডে ফ্যাটি অ্যাসিড, কোয়েরসেটিন, এন্টিঅক্সিডেন্ট ও বিভিন্ন ধরনের খনিজ লবণ। এসব মানব শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী। ডায়াবেটিস ও ব্লাড প্রেসারের রোগীদের জন্য উৎকৃষ্ট খাদ্য। কমপ্লিট প্রোটিন থাকায় কিনোয়া ব্যথা বেদনাতে কাজ করে। এই সুপার ফুড দুটি হজমের জন্যও ভালো। চিয়া সীড অত্যন্ত শক্তিদায়ক, সুগার নিয়ন্ত্রক। এসিডিটি ও ওজন কমাতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ও ক্লোরেস্টল কমায়। হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ উপকারী। মলাশায়ের কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। শরীরের টক্সিন বের করে দিয়ে ক্যান্সার রোধ করে। ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর রাখে। কিনোয়া ভাত, পোলাও ও খিচুড়ি করে খাওয়া যায়। বীজ পাউডার করে ময়দার মত রুটি বানানো যায়। চারা গাছ শাক হিসেবেও খাওয়া হয়। চিয়া সীড ভিজিয়ে খাওয়া যায়। সালাত থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের খাবারে যোগ করা যায়। স্যালাইন শরবতের মতো ড্রিংকসেও ব্যবহার করা হয়। নভোচারীদের জন্য উৎকৃষ্ট খাবার। কিনোয়া ( ছঁরহড়ধ) এমরেনথেনিয়া পরিবারভুক্ত উদ্ভিদ। উত্তর আমেরিকার জর্জিয়ার ফসল। পেরু, কানাডা, বলিভিয়া, ইকুডোয়া ও চিলিতে বেশি পাওয়া যায়। লাল, কালো ও হলুদ রঙের হয়। সহজেই বৈরি পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে। তিল গাছের মতো বীজ বুনে খরা প্রবন ও লবণাক্ত এই দুই ধরনের জমিতে চাষ করা যায়। সার প্রয়োগ ছাড়া চাষ করা যায়। পোকা লাগে কম। তাই পরিচর্যা খরচ কম। কীটনাশক ও আগাছানাশকের দরকার হয় না। ৮৫ থেকে ৯০ দিনে কিনোয়া জমি থেকে ঘরে তোলা যায়। চিয়া (ঈযরধ) সীডের বৈজ্ঞানিক নাম সালিভিয়া সিপানিকা এল। এটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। মধ্য আমেরিকার মেক্সিকান এর ফসল। চিয়া সীড সাদা ও কালো রঙের এবং তিলের মত ছোট সাইজের হয়। মাঝারি তাপ মাত্রায় দোআশ জমিতে ভালো হয়। রোগ বালাই খুব কম হয়। ১০০ থেকে ১১০ দিনে ফসল ঘরে ওঠে। কৃষিবিদ জামিল হোসেন বলেন, এবছর আমরা প্রথম কিনোয়া এবং চিয়া সীড চাষ করেছি। একবার মাত্র সেচ দিয়েছি। ফসল ভালো হয়েছে এ কথা বলা যাবেনা। তবে খারাপও হয়নি। প্রচুর অভিজ্ঞতাও হয়েছে।