বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে গেছে হাসিনার স্বৈরতন্ত্র: কূটনীতিকদের ইউনূস ভারতে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা চিকিৎসকদের নলতা আহসানিয়া মিশন রেসিডেনসিয়াল কলেজের অধ্যক্ষের দুর্নীতি ॥ উত্তাল নলতা ॥ শিক্ষক কর্মচারীরা মতবিনিময় করলেন ডাঃ শহিদুল আলম ও চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের সাথে মহামারীর দ্বারপ্রান্তে গাজা আলোচনায় থাইল্যান্ড ॥ বন্দী থাকসিন মুক্ত হরিনগর বাজারে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদের মাঝে নগদ অর্থ প্রদান পাইকগাছায় একটি বাঁশের সাঁকো পারাপারে এলাকাবাসীর চরম ভোগান্তি মাথাভারি হচ্ছে প্রশাসনের ॥ বাড়ছে সরকারের দু:চিন্তা ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ এর পদত্যাগ দাবীতে-মানববন্ধন চাম্পাফুল ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত

সংক্রমণ যতোটা ঊর্ধ্বমুখী, সচেতনতা ততোটাই নিম্নমুখী

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২২

এফএনএস : বিশ্বকে গ্রাস করছে করোনার ভয়াল রাহু। চিতাবাঘের মতো ক্ষিপ্র গতিতে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বাংলাদেশেও। সংক্রমণ দিক দিয়ে দেশে তৈরি হচ্ছে নতুন রেকর্ড। কেননা দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ভয়ানক হারে বেড়ে গেছে। করোনার এই দ্রুততা দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে দেশকে। ইতমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৪০ তম বিসিএস ভাইবা, ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল বর্ষের পরীক্ষা। করোনার এই ক্ষিপ্রতাকে মোটেও ভয় পাচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে এ দেশের মানুষ। সব জায়গায় বিপুল জনসমাগম যেমন দেখা যাচ্ছে, তেমনি দেখা যাচ্ছে শারীরিক দূরত্ব না মানার প্রবণতা। মাস্ক ব্যবহার করছেন না অনেকেই। ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে সরকারের ১১ দফা নির্দেশনা কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে মানুষের মধ্যে যেমন নেই সচেতনতা, তেমনি স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন তেমন ভ‚মিকা রাখছে না। রাজধানী, শহর কিংবা গ্রাম-সর্বত্রই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত। মানুষ চলাফেরা করছে নিজের ইচ্ছেমাফিক। স্বাস্থ্যবিধি না মানার কুফল সম্পর্কে অনেক আগে থেকেই সতর্ক করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের সেই সতর্কবার্তার প্রতিফলনই এখন দেখা যাচ্ছে। করোনার সংক্রমণ এখন লাগামছাড়া। কিন্তু তবুও লাগাম পরানো যাচ্ছে না সাধারণ মানুষকে। বিশেষজ্ঞরা এখনো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আকুতি-মিনতি জানিয়ে যাচ্ছেন। নিরাপদ থাকতে টিকা গ্রহণ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেশবাসীর প্রতি আহŸান জানিয়ে তাঁরা বলছেন, শুধু মাস্ক ব্যবহার করেই ৯০ ভাগ নিরাপদ থাকা যায়। কিন্তু অনেকেই মাস্ক পরছেন না, স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। অফিস-আদালত, বাজার-ঘাট, যানবাহনে চলাচল, রেস্টুরেন্ট, দোকানপাট, বাস, ট্রেন, মসজিদ- সব জায়গাতেই মাস্ক পরার নির্দেশনা আছে। কিন্তু বাস্তবে তা মানছেন খুব কম লোকই। স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোয়। সংক্রমণ যেমন ঊর্ধ্বমুখী, জন সচেতনতা ততোটাই নিম্নমুখী। তাই জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানলে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আর স্বাস্থ্যবিধি না মানলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর বড় প্রভাব পড়বে। ডাক্তার-নার্সদের আক্রান্তের হার দ্বিগুণ হারে বাড়বে। এ কারণে অনেকে চিকিৎসা সেবা পাবে না। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের দায়িত্ব যাদের তাদের অধিকাংশই যথাযথভাবে সেই দায়িত্ব পালন করছেন না। অথচ তারাও কোভিড থেকে নিরাপদ থাকতে পারবেন না। এমন পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। দিন দিন বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে। বাংলাদেশ ঠিক যখন উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হলো, তখন করোনার আঘাত এসে লাগল অন্যান্য জায়গার মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও। তবে করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি যতটা বিপর্যস্ত হবার কথা ছিল, বাহ্যত ততটা হয়নি। বাংলাদেশ সরকার ২০২২ সালে অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৮.২ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে গত অর্থবছরের ২০১৯-২০২০ সালে জিডিপি বৃদ্ধি ৫.১৪ শতাংশ অর্জন করেছে। যদিও বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের অনুমানের সঙ্গে কিছুটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়, তবে সামগ্রিকভাবে তা খুব বড় কিছু নয়। বাংলাদেশ রেমিটেন্স প্রবাহ পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখিয়েছে, তবে বাংলাদেশের মতো একটি দেশের প্রবাসী কর্মীদের কাছ থেকে রেমিটেন্স কমার যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে। কেননা, বিদেশে অর্থনৈতিক সঙ্কোচন এবং নতুন নতুন অভিবাসন নীতি বাংলাদেশের প্রবাসীদের কিছুটা কোণঠাসা করতে পারে, যার ফলে কমে যেতে পারে রেমিটেন্স প্রবাহ। যদিও এখন পর্যন্ত রেমিটেন্স প্রবাহ তেমন কমেনি। বিশ্বব্যাংক ধারণা করছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার আরও ৫.৯ শতাংশ উন্নীত হতে পারে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মতে, ২০২১ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার হবে ৬.৮ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির হার হবে ৫.৫ শতাংশ। গত বছরের মার্চ থেকে আঘাত হানা করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থমকে যায়, লন্ডভন্ড হয়ে যায় আমাদের অনেক অর্জন। এ বছর আবারও জানুয়ারির শুরু থেকে করোনা প্রচন্ডভাবে আঘাত হেনেছে দেশে। অর্থনীতি যখন ঘুরতে শুরু করেছে, তখন করোনার তৃতীয় ঢেউ শঙ্কা জাগাচ্ছে। সাধারণ মানুষ যদি স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে এভাবেই উদাসীন থাকে তাহলে বাংলাদেশের জন্য বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যান্য দেশের চেয়ে, বলতে গেলে উন্নত দেশের চেয়েও বাংলাদেশ করোনার প্রথম ধাক্কা সামলে নিয়েছিল। কিন্তু প্রথম ধাক্কা কাটতে না কাটতেই দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয় ঢেউয়ে বড় রকমের দুর্যোগ হয়েছিল। করোনার ধাক্কার রেশ এখনও চলমান। ফলে দেশের অর্থনীতিতে একটা বড় মাত্রায় অভিঘাত আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছর নির্ধারণ করেছে, তা অর্জন করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পিপিআরসি ব্র্যাকের স¤প্রতিক এক জরিপে বলা হয়েছে, কোভিডের আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এই নতুন দরিদ্র শ্রেণীর সংখ্যা জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত যা ছিল ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ। করোনার এই আঘাত ছাড়াও আমাদের দেশে অনেক দিন ধরেই ক্রমান্বয়ে আয় বৈষম্য বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে আয়বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পাবে। এটি স্পষ্ট যে, করোনার এই সা¤প্রতিক ধাক্কা আগের ধাক্কার চেয়ে বেশ জোরালো। হতে পারে এটিই হয়তো শেষ ধাক্কা, এজন্যই তাঁর আঘাতটা বেশ কঠিন। স্বাস্থ্যবিদদের কণ্ঠেও এমন সুর শোনা যাচ্ছে। তাঁরা বলছেন, ওমিক্রনের কারণে বর্তমানে এমন কোন লোক নেই, যার ঘরে করোনা আক্রান্ত রোগী নেই। অর্থাৎ ঘরে ঘরে করোনা রোগী। অতীতে করোনার অন্য কোন ভ্যারিয়েন্টে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। তারপরও জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে পারছে না প্রশাসন। এ ক্ষেত্রে গা-ছাড়া ভাব, মিডিয়াতে বক্তব্য প্রদানের মধ্যেই যেন প্রশাসনের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ। অথচ তারা করোনা নিয়ন্ত্রণে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন। মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রেক্ষিতে করোনা ব্যাপক হারে বাড়লে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। যেহেতু মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, তাই এখন সরকারের উচিত করোনা টেস্ট বাড়ানো এবং রোগীর সংখ্যার প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করা, যাতে জনগণ ভয় পেয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com