জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শতভাগ অনলাইনে প্রার্থীদের মনোনয়ন নিশ্চিতে হার্ড লাইনে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রথাগতভাবে ম্যানুয়ালি মনোনয়ন প্রক্রিয়াকে নিরুসাহিত করতে কমিশনের এই উদ্যোগ। বলছেন, কোনো অবস্থায় অনলাইনের বাইরে মনোনয়ন জমা তারা নিবেন না। এটা কঠোরভাবে অনুসরণ করার জন্য উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়পত্র প্রথা চালু করা হলেও বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ও তাদের সমর্থিত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কেউ ওই পথে হাঁটেননি। তিন হাজার প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ১০০ জন অনলাইনে আবেদন করেছিল। ফলে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে অনলাইন প্রথা চালু করায় ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তাই সংসদ নির্বাচনের পর পরই সমস্যা সমাধানে কোঁমর বেধে নেমে পড়ে কমিশনের আইসিটি শাখা। নানা প্রক্রিয়া ও তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর পুরোপুরি সিস্টেম চালু করার মাধ্যমে উপজেলায় এটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী ডিজিটাল যুগের পর স্মার্ট বাংলাদেশের অংশ হিসেবে এই প্রথম প্রার্থীরা উপজেলার মনোনয়ন ফরম অনলাইনে পূরণ করছেন। প্রার্থীদের কারিগরি সমস্যা সমাধানে আইসিটি শাখা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষন করছেন। জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিস্টেম ম্যানেজার আশরাফ হোসেন বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমরা কিছুটা হার্ডলাইন সিদ্ধান্ত অবলম্বন করেছি। কোন ধরণের ম্যানুয়ালি মনোনয়ন জমা দেয়া প্রক্রিয়া রাখেনি। পুরোটাই অনলাইনে জমা দিতে হবে। এবারই প্রথম কোনো নির্বাচনে ডিজিটালি পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে মনোনয়নপত্র জমা অনলাইনে চালু করা হলো। এতে প্রার্থীর যেমন সুবিধা রয়েছে। একই সুবিধা কাজে লাগিয়ে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। পেপারলেস এই পদ্ধতিটি ই-নথি বলা যায়। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী একটি চক্র এলাকায় ও ভোটারদের কাছে জনপ্রীয় কিন্তু মাশল পাওয়ার কম তাদের মনোনয়ন জমা আটকে দিতে নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ব্রাক্ষণবাড়ীয়াসহ কয়েকটি জেলায় এমন ঘটনা ঘটেছিল। ইসির হস্তক্ষেপে ওই যাত্রায় কিছু প্রার্থী পার পেয়েছিলেন। আগামী ওই ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে কমিশন অনলাইনে শতভাগ মনোনয়ন জমা দেয়ার কার্যক্রম তফসিল ঘোষিত উপজেলা থেকে শুরু করেছে। ইসির এই উদ্যোগ স্বাগত জানিয়েছেন সাতক্ষীরা, ভান্ডারিয়া ও যশোরসহ বেশ কিছু জেলার সম্ভাব্য উপজেলা প্রার্থীরা। তারা বলছেন, প্রযুক্তিতে ঘরে বসেই মনোনয়ন জমা দিতে পারছি এটা আনন্দের। শোডাউন বন্ধ হবে। অনলাইনে মনোনয়ন দাখিলের নির্দেশনায় বলা হয়েছে- অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য প্রথমে ইসির ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন লিংকে ক্লিক করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে; রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হলে যে মোবাইল নাম্বার দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে, সেই মোবাইল নাম্বারে ইউজার আইডি এবং এককালীন পাসওয়ার্ড পাঠানো হবে। ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড সতর্কতার সঙ্গে সংরক্ষণ করতে হবে; লগইন পেইজে দেওয়া ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লগইন করতে হবে। এরপর নতুন করে পাসওয়ার্ড রিসেট এবং নতুন পাসওয়ার্ডটি সংরক্ষণ করতে হবে; প্রার্থীর ড্যাশবোর্ডের বামপাশের মেনু হতে পর্যায়ক্রমে প্রার্থী মনোনয়ন, প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্যাদি, প্রার্থীর হলফনামা, নির্বাচনী ব্যয়, সম্পদ ও দায়, প্রার্থীর ফাইল সংযুক্তিকরণ, জামানত এবং চূড়ান্ত দাখিলের ধাপগুলো সম্পন্ন করতে হবে; তবে চূড়ান্ত দাখিলের আগে ‘মনোনয়নপত্র’ বাটনে ক্লিক করে প্রার্থীর পূরণকৃত মনোনয়নপত্র পিডিএফ ফরম্যাটে ডাউনলোড করে সব ঠিক আছে কিনা দেখে নিতে পারবেন; কোনো কিছু পরিবর্তন বা যোগ করতে হলে তা দাখিলের আগেই সম্পন্ন করতে হবে। দাখিল পরবর্তী পরিবর্তন করার সুযোগ নেই; সঠিকভাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হলে মোবাইলে বার্তার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে। প্রার্থীর মনোয়নপত্র দাখিলের পর, যাচাই-বাছাইয়ের প্রতিটি স্ট্যাটাস মোবাইলে বার্তার মাধ্যমে প্রার্থীকে জানানো হবে। যেসব ডকুমেন্টসের স্ক্যান কপি প্রয়োজন হবে: প্রার্থীর সদ্য তোলা রঙ্গীন পাসপোর্ট সাইজের ছবি (লঢ়বম/লঢ়ম ফরম্যাট); স্ট্যাম্প পেপারে যথাযথ স্থানে ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারী পাবলিকের স্বাক্ষরিত হলফনামা (প্রার্থীর মনোনয়ন সমাপ্তের পর হোম পেজ থেকে মনোনয়নপত্র ডাউনলোড করে স্ট্যাম্প পেপারে প্রিন্ট করতে হবে, পিডিএফ ফরম্যাট); রাজনৈতিক দলের প্রত্যয়নপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, পিডিএফ ফরম্যাট); আয়কর রিটার্নের কপি, সম্পদের বিবরণী ও সর্বশেষ আয়কর পরিশোধের প্রমাণপত্র বা রশিদ (পিডিএফ ফরম্যাট); সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার সত্যায়িত সনদপত্র (পিডিএফ ফরম্যাট); ইউটিলিটি বিল (পিডিএফ ফরম্যাট); ভোটার তালিকার সিডি কেনার রশিদ (পিডিএফ ফরম্যাট); অন্যান্য কাগজপত্র (পিডিএফ ফরম্যাট)। যেসব তথ্য হাতের কাছে রাখতে হবে: জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর; মোবাইল নম্বর; ইমেইল এড্রেস; টিআইএন নম্বর; প্রস্তাবকারী ব্যক্তি, তার এনআইডি ও ঠিকানা (অবশ্যই সংশি¬ষ্ট উপজেলার ভোটার হতে হবে); সমর্থনকারী ব্যক্তি, তার এনআইডি এবং তার ঠিকানা (অবশ্যই সংশি¬ষ্ট উপজেলার ভোটার হতে হবে); ভোটার তালিকায় প্রার্থীর ভোটার ক্রমিক নম্বর; ডকুমেন্টস স্ক্যানার; ক্যামেরা সুবিধাসহ ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ বা ট্যাব বা মমাবাইল; বর্তমান কর্মস্থলের নাম ও ঠিকানা; পিতা-মাতার তথ্য, স্বামী বাস্ত্রীর নাম, জন্মতারিখ, বয়স, জন্মস্থান; তাৎক্ষণিক যোগাযোগের জন্য টেলিফোন বা মোবাইল বা ইমেইল এড্রেস; সন্তানদের তথ্য; শিক্ষাগত যোগ্যতা; ফৌজদারি মামলা সংক্রান্ত তথ্য (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে); প্রার্থীর উপর নির্ভরশীলদের আয়ের উৎস, পরিসম্পদ ও দায় বিবরণী; প্রার্থীর দায় ও ঋণ সংক্রান্ত তথ্য; প্রার্থীর বাৎসরিক আয় ব্যয়ের বিবরণী; সদ্য তোলা রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ৩০০ী৩০০ পিক্সেলে স্ক্যান করা ছবি; রাজনৈতিক দলের (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) প্রত্যয়ন; আয়কর রিটার্নের কপি; সম্পদ বিবরণী; সর্বশেষ আয়কর পরিশোধের রশিদ; নির্বাচনের ব্যয় নির্বাহের জন্য ব্যবহৃতব্য ব্যাংকের নাম, একাউন্ট নম্বর এবং ব্যাংকের শাখঅর নাম; সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার সত্যায়িত সনদপত্র; এবং ভোটার তালিকার সিডি কেনার রশিদ। সবগুলো ডকুমেন্টস পিডিএফ আকারে রাখতে হবে। প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলায় ৮ মে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই ধাপের মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ ১৫ এপ্রিল। কারিগরি ও পদ্ধতিগত সুবিধার্থে শেষ দিনের অপেক্ষা না করে আগেই অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য ইতিমধ্যে প্রার্থীদের অনুরোধ জানিয়েছে কমিশন। ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে ২৩ মে ১৬৫, তৃতীয় ধাপে ২৯ মে ১১১ ও চতুর্থ ধাপে ৫ জুন ৫২টি উপজেলায় ভোট হবে। দেশে বর্তমানে ৪৯৫টি উপজেলা রয়েছে।