এফএনএস স্পোর্টস: ম্যাচের প্রথম বলেই আউট দিলারা আক্তার। পরের ওভারে একই পথের পথিক সোবহানা মোস্তারি। বাংলাদেশের সামনে তখন আরেকটি ব্যাটিং ধসের চোখরাঙানি। তবে অধিনায়ক নিগার সুলতানার দৃঢ়তায় এবার বিপর্যয় এড়ানো গেল। দলের রানও পেরিয়ে গেল একশর সীমানা। প্রাপ্তি বলতে ওইটুকুই। ম্যাচের ফলে তা প্রভাব ফেলল না মোটেও। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে বাংলাদেশের পুঁজিকে পাত্তাই দিল না অস্ট্রেলিয়া। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ১০ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে রোববার বাংলাদেশ ২০ ওভারে তোলে ৪ উইকেটে ১২৬ রান। ৭ চারে ৬৪ বলে ৬৩ রানে অপরাজিত থাকেন নিগার সুলতানা। মুর্শিদা খাতুন ও ফাহিমা খাতুনের সঙ্গে তিনি গড়েন দুটি অর্ধশত রানের জুটি। ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচে একশর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার পর একটু স্বস্তি হয়ে আসে টি-টোয়েন্টির এই স্কোর। তবে প্রতাপশালী অস্ট্রেলিয়া এই চ্যালেঞ্জ উড়িয়ে দেয় তুড়ি বাজিয়ে। অ্যালিসা হিলি ও বেথ মুনির স্ট্রোকের ফোয়ারায় জিতে যায় তারা স্রেফ ১৩ ওভারেই। টি-টোয়েন্টিতে আগে কেবল একবারই ১০ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ, গত বছর বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের শুরুটাই হয় ধাক্কা খেয়ে। ম্যাচের প্রথম বলেই সোফি মলিনিউকে কাট করে পয়েন্টে ধরা পড়েন দিলার আক্তার। পরের ওভারে আরেকটি আঘাত। চোট কাটিয়ে তিন বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা টায়লা ভ্যালেমিকের গতিময় ডেলিভারির কোনো জবাব পাননি সোবহানা মোস্তারি। দুই রানে দুই উইকেট হারানো দলের সামনে তখন আরেকবার ব্যাটিং বিপর্যয়ের শঙ্কা। কিন্তু এবার তা হতে দেননি নিগার সুলতানা ও মুর্শিদা খাতুন। ভ্যালেমিকের বলেই দারুণ কাভার ড্রাইভে ম্যাচের প্রথম বাউন্ডারি মারেন নিগার। এই পেসারের ফুল টসে ফ্লিক করে চার মারেন মুর্শিদা। উইকেট আঁকড়ে রাখার পাশাপাশি রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন দুজন। প্রথম ওভারে মেডেন উইকেট নেওয়া মলিনিউয়ের দ্বিতীয় ওভারে দুটি চার আসে নিগারের ব্যাট থেকে। দুজনের এই জুটি থামে ৫৭ রানে। লেগ স্পিনার জর্জিয়া ওয়্যারহ্যামকে সুইপ করার চেষ্টায় আউট হন ২০ রান করা মুর্শিদা। সুইপ শটেই প্রথম বলে বাউন্ডারিতে শুরু করেন ফাহিমা। পরে গ্রেস হ্যারিসের অফ স্পিনে ছক্কায় উড়িয়ে দেন তিনি বোলারের মাথার দিয়ে। গোটা ওয়ানডে সিরিজ ছক্কাবিহীন থাকার পর টি-টোয়েন্টিতে এসে হাওয়ায় ভাসিয়ে বল সীমানা ছাড়া করতে পারলেন বাংলাদেশের কোনো ব্যাটার। পরের বলেই চার মারেন তিনি সুইপ খেলে। নিগার ৩৮ রানে বেঁচে যান ক্যাচ দিয়ে। অ্যাশলি গার্ডনারকে চার মেরে ফিফটিতে পা রাখেন তিনি ১৯তম ওভারে। ২১ বলে ২৭ রান করে ফাহিমা আউট হন শেষ ওভারে। নিগার ইনিংস শেষ করেন শেষ বলের বাউন্ডারিতে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আগে দুটি টি-টোয়েন্টি খেলে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ছিল ১০৭। এবারের ১২৬ রানকে তাই বেশ উন্নতিই ধরা যায়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপকে চাপে ফেলার মতো পুঁজি যে এটা নয়, তা প্রমাণ হয়ে যায় দ্রুতই। রান তাড়ায় প্রথম ওভারটিই কেবল একটু সতর্কতায় খেলে অস্ট্রেলিয়া। এরপর বাংলাদেশের পেস-স্পিন সবকিছুই মাড়িয়ে দ্রুততায় এগিয়ে যান অ্যালিসা হিলি ও বেথ মুনি। ওয়ানডে সিরিজে মন্থর ও টার্নিং উইকেটে হিলির আগ্রাসী রূপ সেভাবে দেখা যায়নি। এই ম্যাচে উইকেট একটু ব্যাটিং সহায়ক পেয়ে ঝড় তোলেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক। আরেকপাশে তাল মিলিয়ে ছুটতে থাকেন মুনি। পাওয়ার প্লেতেই অস্ট্রেলিয়া তুলে ফেলে ৫৪ রান। পরের সময়টাতেও রানের গতি ধরে রাখেন দুজন। বাংলাদেশের কোনো বোলারই তাদেরকে কোনোরকম অস্বস্তিতে ফেলতে পারেনি। দলের সেরা বোলার নাহিদা আক্তারের ওপর দিয়েই বেশি ঝড় বইয়ে দেন দুজন। ২০২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৫১ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন হিলি ও মুনি। এবার ১২৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দুজন শেষ করে দেন ম্যাচ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এই নিয়ে চতুর্থবার ১০ উইকেটের জয় পেল তারা। ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৪২ বলে ৬৫ রানে অপরাজিত থাকেন হিলি। ম্যাচের সেরা তিনিই। ৯ চরে ৩৬ বলে অপরাজিত ৫৫ করেন মুনি। সিরিজের পরের দুই ম্যাচ মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার। সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১২৬/৪ (দিলারা ০, মুর্শিদা ২০, সোবহানা ০, নিগার ৬২*, ফাহিমা ২৭, স্বর্ণা ১*; মলিনিউ ৪-১-২৫-২, ভ্যালেমিক ৪-০-২৯-১, গার্ডনার ৪-০-২১-০, ওয়্যারহ্যাম ৪-০-২১-১, সাদারল্যান্ড ২-০-১২-০, হ্যারিস ২-০-১৮-০)। অস্ট্রেলিয়া: ১৩ ওভারে ১২৭/০ (হিলি ৬৫*, মুনি ৫৫*; মারুফা ৩-০-১৯-০, নাহিদা ৩-০-৩৫-০, সুলতানা ২-০-১৩-০, রাবেয়া ২-০-১৯-০, ফাহিমা ১-০-১১-০, শরিফা ১-০-১১-০, স্বর্ণা ১-০-১২-০)। ফল: অস্ট্রেলিয়া ১০ উইকেটে জয়ী। সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে। প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: অ্যালিসা হিলি।