এফএনএস: মানবাধিকার সমুন্নত রেখে আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে বলে জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুলাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, সব ধরনের ব্যক্তিস্বার্থ, লোভ ও প্রতিহিংসার ঊর্ধ্বে থেকে র্যাব সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমার বিশ্বাস, করোনাকালীন র্যাব কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ অন্যান্যের কাছে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ‘র্যাব মেমোরিয়াল ডে’ উপলক্ষে কুর্মিটোলা র্যাব সদর দপ্তরের শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজাদ মেমোরিয়াল হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশ আমার অহংকার’ এই মূলমন্ত্রকে বুকে লালন করে আগামীতে আরও উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে আপনারা আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করবেন। আপনাদের সার্বিক সাফল্যে র্যাবের ভাবমূর্তি ও কর্মতৎপরতা অনেকগুণে বৃদ্ধি পাবে বলে আমি আশাবাদী। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারিতে আমাদের দেশও আক্রান্ত হয়। এই করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে র্যাব সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করে। এই যুদ্ধে র্যাবের সাত সদস্য আত্মত্যাগ করেন। যারা আইনশৃঙ্খলা সুরক্ষা ও দেশ প্রেমের সুমহান আদর্শে বলীয়ান হয়ে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগের এক অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। র্যাব করোনাকালীন দুর্যোগের সময় দেশের শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের সেবায় করোনাকালীন নিজেদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করে মানবসেবায় দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে। এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মবিকাশের লগ্ন থেকেই র্যাব তার কার্যসম্পাদনায় সচেতন কর্মদক্ষতা, সততা, নিষ্ঠা, নিরপেক্ষতা ও সাহসিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গত এক বছরে র্যাবের উলেখযোগ্য সাফল্য ছিল বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনকে জলদস্যু মুক্ত ঘোষণা। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন। ২০১৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত র্যাবের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তত্ত¡াবধানে সুন্দরবনের ৩২৮ জলদস্যু পুনর্বাসিত হয়েছেন। র্যাবের মাধ্যমে প্রদত্ত অনুদান প্রত্যেক জলদস্যুকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে। এ বছর আমরা তাদের ১০২টি ঘর, ৯০টি মুদিদোকান (মালামালসহ), ১২টি জাল ও মাছ ধরার নৌকা, ৮টি ইঞ্জিন চালিত নৌকা এবং ২২৮টি গবাদিপশু প্রদান করেছি, যোগ করেন চৌধুরী আবদুলাহ আল-মামুন। তিনি আরও বলেন, এছাড়াও এ পর্যন্ত ৩২টি জলদস্যু/বনদস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য ৪৬২টি অস্ত্র ও ২২ হাজার ৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদসহ র্যাবের নিকট আত্মসমর্পণ করেন। জলসদ্যুদের আত্মসমর্পণ করানোর মধ্যেই র্যাব ক্ষ্যান্ত যায়নি। বরং এদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করেছে। সুন্দরবনে আজ শান্তির সুবাতাস বইছে। এছাড়াও র্যাবের আহŸানে সাড়া দিয়ে কক্সবাজার ও মহেশখালী উপক‚লীয় অঞ্চলের ১৮টি বাহিনীর ৭৭ জন সদস্য ১৮৮টি অস্ত্র ও ৯ হাজার ৭০৩ রাউন্ড গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেন। এর মাধ্যমে আমরা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২৫ লাখ বনজীবীর জন্য স্বস্তির দুয়ার খুলে দিতে পেরেছি। এর সিংহভাগ কৃতিত্ব এলিট ফোর্স র্যাবের। র্যাব মহাপরিচালক বলেন, বিগত বছরগুলোতে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান ছিল র্যাবের জন্য অন্যতম একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে গুলিবিনিময়ে ১০০ জন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন। অভিযানে গুলিবিদ্ধ হন ছয় র্যাব সদস্য। অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের নিদর্শনস্বরূপ ২০২০ এবং ২০২১ সালে মোট ৬০ জন র্যাব সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী বিপিএম (সাহসিকতা) পদকে ভ‚ষিত করেছেন। আর এমনিভাবেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি জঙ্গি, চরমপন্থি ও সন্ত্রাস দমন, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা রোধ, ভেজালবিরোধী অভিযান, রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও গতিশীল রাখা এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা কর্মসূচিতে র্যাবের বীরত্বগাথা অবদান সব মহলে ভ‚য়সী প্রশংসা পেয়েছে। আপনারা জানেন, শুধু তাই নয়, আমি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, অপহরণকৃত ভিকটিম উদ্ধারে র্যাবই হলো মানুষের শেষ ভরসা স্থল। র্যাব ডিজি আরও বলেন, শুরুতে চারটি ব্যাটালিয়ন নিয়ে র্যাব গঠিত হলেও সময় ও পরিস্থতির দাবি মোতাবেক সর্বশেষ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা হওয়ায় বর্তমানে মোট ১৫টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। এর মাধ্যমে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় র্যাব গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করছে। তিনি বলেন, সব প্রকার সন্ত্রাসী-অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সমন্বিত পরিকল্পনা ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে সফল অভিযান পরিচালনা করে র্যাব আজ একটি সুসংগঠিত ও গতিশীল বাহিনী হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। র্যাবে কর্মরত সব সদস্যের আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, মেধা ও পরিশ্রমের ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে এটি সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। চৌধুরী আবদুলাহ আল-মামুন বলেন, গত দেড় যুগের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় র্যাবের কর্মকলেবর বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। নানা চ্যালেঞ্জ ও বৈচিত্র্য এসেছে অভিযানে, ফলে ভিন্নতা পেয়েছে শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার গতানুগতিক কার্যক্রমে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠায় র্যাবকে একটি আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা প্রতিরোধের মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠায় র্যাবের প্রতিটি ব্যাটালিয়ন তাদের নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে সদা তৎপর রয়েছে। তিনি বলেন, র্যাব ফোর্সেস দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই জনমানুষের অকুণ্ঠ আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। জঙ্গিবাদ দমন, চরমপন্থি দমন, জলদস্যু দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সর্বশেষ বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে মাদকবিরোধী অভিযানে রয়েছে উলেখযোগ্য ভ‚মিকা। র্যাবের বিশেষ উদ্যোগে র্যাব ডি-র্যাডিকালাইজেশন ও রি-হ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম ‘নবদিগন্তের পথে’ অত্যন্ত অভিনব ও যুগান্তকারী এই উদ্যোগ। অপরাধীর মনস্তাত্তি¡ক পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজের মূলধারায় আবার তাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা এর উদ্দেশ্য। আত্মসমর্পণকৃত ৪২১ জন সন্ত্রাসীর (জলদস্যু ও জঙ্গি) পুনর্বাসন প্রক্রিয়া যুক্ত রয়েছে। এভাবে অপরাধ দমনে বহুমুখী কর্মপন্থা নিয়ে র্যাব কাজ করছে। অপরাধ সমূলে উৎপাটনে র্যাবের এই বহুমুখী, অভিনব ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ শুধু দেশে নয় বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। মানবিকতা দিয়ে অপরাধ দমনের এ সাফল্য বিশ্বের বুকে নজিরবিহীন, যোগ করেন র্যাব মহাপরিচালক।