জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধিন পাঁচ সদস্যের কমিশন শুরুতেই নিজেদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে সুপারিশ জানাতে শুরু করেছেন। দায়িত্বে বসার পর একমাস না যেতেই জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির প্রথম সুপারিশ পেয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (ইসি)। এ সুপারিশ পেয়েই অনেকটা বিব্রত ইসি সচিবালয়। জানা গেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনারগণ সরকারের সিনিয়র সচিব, সচিব ও সচিব পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিরা মাসে যে জ্বালানি খরচ সরকার থেকে পেয়ে থাকেন, একই বরাদ্দ সাংবিধানিক এসব ব্যক্তিদের জন্যও। এর আলোকে জন-প্রশাসন থেকে সর্বশেষ জ্বালানির প্রাধিকারে মাসে ২৫০ লিটার জ্বালানি নির্ধারণ আছে। এতো অল্প জ্বালানিতে নতুন কমিশনের মাস চলবে না, – এমন বার্তা সচিবালয়কে দিয়ে বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়। সূত্র বলছে, এর আগে সাবেক সিইসিসহ কমিশনারদের থেকে বরাদ্দের বাইরে জ্বালানি চেয়ে ইসি সচিবালয়কে তাগিদ দেয়া হয়নি। নতুন কমিশন থেকে প্রস্তাব পেয়ে আইন বিধি ঘেঁটে বরাদ্দের বাইরে কোথায় জ্বালানি পাওয়ার প্রাধিকার বিষয়ে কিছু খুঁজে পায়নি ইসি সচিবালয়। ফলে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়াতে জন-প্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। মূলত দুইজন কমিশনার জ্বালানি তেলের বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল। এ বিষয়ে সিইসি ও কমিশনারদের কাছ থেকে মতামত নিতে প্রস্তাব উঠালে তারা তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। বরাদ্দকৃত চাহিদা সংকুলান না হলে বিকল্পভাবে জ্বালানি পূরণ করা হবে এমন আভাস পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনালে (অব.) আহসান হাবিব মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছ্ইু জানি না; আমাকে কেউ বলেনি। তবে, সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ও নির্বাচন কমিশনার রাশেদা খাতুন ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য নেয়া যায়নি। আর বিগত কমিশনাররা এ বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি। বলেন, আমরা সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে যেহেতু কোনো প্রস্তাব করেনি এবং বিগত কমিশনের কারো সুযোগ-সুবিধা বাতিল করেনি, -এ ইস্যুতে মন্তব্য করে কারো বিরাগভাজন হতে চাই না, যোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সাবেক কমিশন। তবে, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বিধি ও প্রাধিকারে কি বলা আছে সেটা দেখে তার আলোকে সুযোগ বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়াই শ্রেয়। তবে এতো তাড়িতাড়ি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আগ্রহী হওয়া শুভলক্ষণ নয়। তবে, জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ানোর বিষয়টি ইন্টারেন্টিং। নাম প্রকাশে অনিচছুক ইসির একজন কর্মকর্তা বলেন, মাসে নির্বাচন কমিশনারগণ ২৫০ লিটার জ্বালানি পেয়ে থাকেন। এ জ্বালানি তেল তাদের কাজের কর্ম-পরিধি অনুযায়ী বরাদ্দ খুবই কম বলে তারা মনে করছেন। তাই বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য তাদের থেকে আমরা একটি নিদের্শনা পেয়েছি। এর আলোকে জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য কমিশনের সম্মতি চাওয়া হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব ও মো. আলমগীর এ প্রস্তাব করেছিল। পরে তারা তাদের অবস্থান বদলিয়েছেন। বিধি অনুযায়ী যে প্রাধিকার আছে সেটার মধ্যে থাকতে রাজি আছেন। তাই জন-প্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। তবে, বরাদ্দ চাহিদার বাইরে বিকল্পভাবে এ চাহিদা মেটানো হতে পারে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ২০২০ সালের ১৬ ফেব্র“য়ারি সার্বক্ষণিক গাড়ী প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারের সিনিয়র সচিব, সচিব এবং সচিব পদমর্যাদা সম্পন্ন কর্মকর্তাদের জন্য সরকার কর্তৃক বরাদ্বদকৃত গাড়ির বিপরীতে জ্বালানি তেল বা পাস্তুরিত তরল গ্যাস ( সিএনজি) এর প্রাপ্যতা সর্বোচ্চ ২৫০ লিটার পেট্রোল ও অকটেন অথবা ৩৫৮ ঘনমিটার সিএনজি পুননির্ধারিত করা হলো। এর আগে পর্যন্ত এ পদমর্যাদার ব্যক্তিদের জন্য মাসে জ্বালানি বরাদ্ধ ছিল ২০০ লিটার। কিন্তু কমিশনারদের জন্য আলাদা করে জ্বালানি সংক্রান্ত নিদের্শনা ও কোনো প্রজ্ঞাপন জারি নেই। সিনিয়র সচিব ও সচিবদের পদমর্যাদাধারীদের প্রাধিকার অনুযায়ী সাংবিধানিক পদধারী ব্যক্তিরা মাসে জ্বালানি তেল পেয়ে আসছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনারগণ ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী প্রতিমন্ত্রীর সমমান অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠান ও বা সভা-সেমিনারে মুখোমুখো বসে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম নিষ্পত্তি করতে পারবেন। আবার প্রাধিকারে বলা আছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)’র সুযোগ-সুবিধা আপিল বিভাগের বিচারপতির সমমান এবং নির্বাচন কমিশনারগণ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের সমতূল্য প্রাধিকার পেয়ে থাকেন। এ সংক্রান্ত প্রাধিকারে কোথাও উলেখ নেই জ্বালানি তেল প্রাপ্তিতে তাদের কথাটি। ইসির সংশ্লিস্টরা জানান, সম্প্রতি দুইজন নির্বাচন কমিশনার জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়াতে কমিশন সচিবালয়কে নিদের্শনা দেন। এর আলোকে জ্বালানি তেল প্রাপ্তিতে কমিশনের কি ধরণের বিধান আছে তা খোঁজা শুরু হয়। সব ধরণের বিধি-বিধান খুঁজে কোথাও এর লিখিত কোনো দাললিক প্রমাণ উদ্ধার করতে পারেনি। আবার বিগত কমিশনগুলোতে জ্বালানি তেলের চাহিদা নিয়ে কোনো চাহিদা না দেয়ায় নতুন চাহিদা পেয়ে কিছুটা বিব্রত হন তারা। তাদের মতে, কমিশনাররা সম্মানিত ব্যক্তি। তাদের কথা উপেক্ষিত করা যায় না। আবার বিধি-বিধানের বাইরে গিয়ে জ্বালানি তেল দেয়ারও সুযোগ নেই। ফলে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তও নিতে পারছে না ইসি সচিবালয়। এই পরিস্থিতিতে মাসে কমিশনারদের কতো লিটার জ্বালানি তেল দরকার এ নিয়ে সচিবালয় কোনো সিদ্ধান্ত না চাপিয়ে কমিশনারদের মতামতের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে, একটি সূত্র বলছে, অতিরিক্ত ১৫০ লিটার যোগ করে ৪০০ লিটারের প্রস্তাব জন-প্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু এ ইস্যুতে বিতর্ক তৈরি হতে পারে এবং জন-প্রশাসনে প্রস্তাবটি নাকচ হওয়ার আশঙ্কা থেকেই অবস্থান বদলিয়েছেন তারা। তবে, নতুন কমিশন যোগদানের পর একমাস অতিবাহিত না হওয়ার আগে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোয় মনোযোগ দেওয়ায় কমিশনে এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তবে, মুখফুটে কেউ কিছু বলতে রাজি হচ্ছেন না।