এফএনএস: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার মনে করেছে নির্বাচনের পর সংকট উতরে গেছে। কিন্তু সংকট উতরে যায়নি, আরও বেড়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি। মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর আসন্ন ঢাকা সফর প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, কে এলো তাতে ইন্টারেস্ট (আগ্রহ) নেই। জনগণই বিএনপির শক্তি। সরকার মনে করছে নির্বাচনের পর সংকট উতরে গেছে। কিন্তু সংকট আরও বেড়েছে। ফখরুল বলেন, নির্বাচনের আগে বিএনপির বহু নেতা-কর্মীকে একতরফা সাজা দিয়েছে আদালত। এর তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছে বিএনপি। বিনা শুনানিতেও সাজা দিয়েছে সরকার। এখনো গুরুত্বপূর্ণ নেতা কারাগারে রয়েছেন। চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে সাজা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিরাজনীতিকরণ করতে দুই হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দল যেন না থাকে। মানুষের সর্বশেষ আশা ভরসার জায়গা হচ্ছে কোর্ট, কিন্তু সেখানেও কেউ কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। দেশে প্রবেশের সময় আমদানি পণ্যের মান যাচাই করা উচিত মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের ম্যান্ডেটহীন সরকার তা করবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান। এ সরকারের কোনো জবাবদিহি নেই, কোনো ম্যান্ডেট নেই। তাদের ভেতরে দম্ভ কাজ করছে। কারণ তাদের জনগণের কোনো দরকার নেই। সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র, সরকার পরিকল্পিতভাবে এ দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, এটি অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। একটি রাষ্ট্র তখনই ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়, যখন অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে যায়, রাজনীতির পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। গোটা রাষ্ট্র একটি নৈরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না। তাও আবার ক্ষমতাসীন দলের ছাড়া সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, এটি বললে আওয়ামী লীগের গায়ে জ্বালা ধরে যায়। কিন্তু এটি ট্রু (সত্য)। এদিকে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা সব পণ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাজারে ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংস্থা র্যাপিড অ্যালার্ট সিস্টেম ফর ফুড অ্যান্ড ফিড (আরএএসএফএফ) গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলেছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রফতানি করা ৫২৭টি ভারতীয় পণ্যে ক্যানসার উপযোগী উপাদান পাওয়া গেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আরএএসএফএফ জানিয়েছে, ৫২৭টি পণ্যের মধ্যে ৩৩২টি খাবার পণ্যের উৎস ভারতে। বাকি পণ্যগুলো সরাসরি ভারতের না হলেও সেগুলোতে ভারতের ট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। এসব ভোগ্যপণ্যের মধ্যে রয়েছে বাদাম, তিল বীজ, ভেষজ, মসলা, ডায়াবেটিক জাতীয় খাবার। এসব পণ্যের মধ্যে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান ইতিলিন অক্সাইড শনাক্ত করা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই রাসায়নিক উপাদান মানবদেহে প্রবেশ করলে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি লিম্ফোমা এবং লিকোমিয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। এই রিপোর্ট প্রকাশের পর ভারতের ৮৭টি পণ্যের চালান ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে স্থায়ী কমিটি মনে করে, জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশেরও উচিত দেশে আমদানি করা প্রতিটি পণ্য বাজারে ছাড়ার আগে যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মান যাচাই করে নেওয়া। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) কিংবা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্য বাজারে ছাড়া উচিত নয়। বিএনপি মহাসচিব উল্লেখ করেন, দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বর্তমান তাঁবেদার সরকার আমদানি করা খাদ্যপণ্য যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে কিনা এ বিষয়ে জনগণ যথেষ্ট সন্দিহান। মির্জা ফখরুল বলেন, আমদানি করা পণ্য যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়া গেলে প্রতিটি নাগরিককে নিজের এবং পরিবারের সবার স্বাস্থ্য রক্ষায় নিজ উদ্যোগেই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। স্বাস্থ্য নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমদানি করে বাজারে ছেড়ে দেওয়া ক্যানসারের উপাদানযুক্ত সব পণ্য পরিহার করতে হবে। জলবায়ু তহবিলের টাকা লুটপাটকারী সরকারের ওপর ভরসা না করে নিজেই সাধ্যমতো নিজের এবং পরিবারের স্বাস্থ্য রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।