কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি ॥ সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আগামী ২৯ মে রোজ বুধবার অনুষ্ঠিত হবে। আর মাত্র বাকি ৬ দিন । এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জনসহ মোট ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে তারা সকলেই আওয়ামী লীগ পরিবারের। এদের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু (ঘোড়া প্রতীক), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও কেঁড়াগাছি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অস্টোলিয়া প্রবাসী এস এম আলতাফ হোসেন লাল্টু (আনারস প্রতীক) ও চন্দনপুর ইউনিয়নের কৃতি সন্তান আনারুল ইসলাম (মোটরসাইকেল প্রতীক)। ইতোমধ্যে কলারোয়ার মানুষের কাছে চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিনুল ইসলাম লাল্টু (দেশী লাল্টু) নামে পরিচিত আর এস এম আলতাফ হোসেন লাল্টু (বিদেশী লাল্টু) নামে পরিচিত। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য, কয়লা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ইমরান হোসেন (তালা প্রতীক), মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সেক্রেটারি মফিজুল ইসলাম লাভলু (উড়োজাহাজ প্রতীক), অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান খাঁন চৌধুরী (মাইক প্রতীক) ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আশিকুর রহমান মুন্না (বই প্রতীক)। তবে ব্যালটে থাকলেও মুন্না নির্বাচনের মাঠে নেই। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী শাহনাজ নাজনীন খুকু (হাঁস প্রতীক) ও সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মহিলা আ.লীগ নেত্রী সেলিনা আনোয়ার ময়না (কলস প্রতীক)। গত ১৩ মে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রার্থীরা তাদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক আর দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকিং প্রচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা উপজেলা। কলারোয়া পৌরসভাসহ ১২ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাট-বাজার, গ্রামগঞ্জের অলিগলি ছেয়ে গেছে সাদাকালো পোস্টার,প্লে-কাট, আর রঙিন ব্যানারে। সকল প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা স্ব-স্ব মার্কায় ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছেন। এমনকি ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনার সাথে দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। চায়ের দোকানে চলছে প্রার্থীদের নিয়ে সাধারণ ভোটাদের চুলচেরা বিশ্লেষন। সব মিলিয়ে জমে উঠেছে কলারোয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ইতোমধ্যে দুটি প্যানেল ঘোষণা করেছেন দুটি পক্ষ। এক প্যানেলে আছেন- বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু, মফিজুল ইসলাম লাভলু ও সেলিনা আনোয়ার ময়না। অপর প্যানেলে আছেন- এসএম আলতাফ হোসেন লাল্টু, শেখ ইমরান হোসেন ও শাহনাজ নাজনীন খুকু। দুই প্যানেলই খুবই শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। কেউ কারে ছাড়ে না, সমানে সমান। তবে কলারোয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের দীর্ঘদিনের প্রকাশ্য গ্রুপিং ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে চলে গেছে । একেক নেতা একেক দিকে। আবার তাদের একনিষ্ঠ কর্মী-সমর্থকরাও একেক দিকে। গ্রুপিংয়ের গ্যাড়াকলে পড়ে অনেক সাধারণ আওয়ামী ভোটাররাও দোদুল্যমান অবস্থানে। স্থানীয় পর্যায়ে ম্যান টু ম্যান সম্পর্কের কারণেও আওয়ামীলীগের অনেক ভোট এদিক-সেদিক হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। কলারোয়া বাজারের হাইস্কুল মার্কেটের এক চায়ের দোকানে গেলে কয়েকজন সাধারণ ভোটার বলেন, চেয়ারম্যান পদে দুই লাল্টুর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে হাড্ডাহাড্ডি। কারণ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দুই লাল্টুর পক্ষে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন। যেই প্যানেলই জিতুক তারা অল্প ভোটের ব্যবধানে জিতবে বলে তাদের ধারণা । তবে দেশী লাল্টুর প্যানেল বের হয়ে যাওয়ার সম্বাবনা বেশী। কারণ ভাসমান ভোটার দেখা যাচ্ছে তার বেশী। শেখ আমানুল্লাহ কলেজের সামনে মফিদুল ইসলামসহ কয়েকজন ভ্যান চালক, ইজিবাইক চালক বলেন, দলবল নির্বিশেষে সাধারণ ভোটাররা বেশীরভাগ বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টুর দিকে ঝুকছে । কারণ জানতে চাইলে জবাবে তিনি বলেন, বিগত নির্বাচনে দেশী লাল্টু যেসব প্রতিশ্রতি দিয়েছিল তার অধিকাংশ তিনি পুরুণ করেছেন। বিশেষ করে আমাদের নিকট থেকে রাস্তায় চাঁদা আদায় বন্ধ,এজাহারভুক্ত আসামী বাদে অন্যদের হয়রানী বন্ধ, বিরোধী দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের হয়রানীবন্ধ, অফিস- আদালতে দালালমুক্তসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রতি রেখেছেন। সব মিলিয়ে এখনো দেখা যাচ্ছে আমিনুল ইসলাম লাল্টুর প্যানেল প্রচার প্রচারনায় এগিয়ে আছেন বলে তাদের ধারনা। এদিকে সচেতন মহলদের মন্তব্য-ভোটের ফলাফল নির্ভর করবে জামাত-বিএনপি ঘরণার ভোটারদের রায়। দল দুটি কেন্দ্রীয়ভাবে উপজেলা নির্বাচন বর্জন করলেও স্থানীয় পর্যায়ে উৎসুক বি,সি.ডি গ্রেডসহ কর্মী সমর্থকরা ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে পারেন। কারণ কলারোয়ার প্রেক্ষাপট আলাদা। যদি তেমনটা হয় তবে তাদের অধিকাংশ ভোট ছোট লাল্টুর পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা। যেটি বিগত নির্বাচনে হয়েছিল। আর যদি সত্যিকার অর্থে বিএনপি-জামাত ভোট বর্জন করে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো তাহলে দুই লাল্টুর মধ্যে ভোট যুদ্ধ হবে হাড্ডাহাড্ডি। কারণ আওয়ামীলীগের দৃশ্যমান নেতাকর্মী বেশীরভাগ এস এম আলতাফ হোসেন লাল্টুর পক্ষে কাজ করছেন। কিন্তু ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে বিএনপি’র অধিকাংশ সাধারণ কর্মী সমর্থকরা ছোট লাল্টুর পক্ষে কাজ করছেন। অপর প্রার্থী আনারুল অল্প সংখ্যক ভোট পেতে পারেন বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।এদিকে সাধারণ ভোটারদের ভাষ্যমতে- পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে শেখ ইমরান ও লাভলুর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তবে জাহিদুর রহমান খাঁ চৌধুরীও বেশ ভোট পাবেন। আর সেই ভোটগুলো অধিকাংশ ইমরান হোসেনের। সেক্ষেত্রে ইমরানের সম্ভাব্যপ্রাপ্ত ভোট কমতে পারে। এমনটি হলে লাভলুর পাল্লাটি ভারি হতে পারে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী শাহনাজ নাজনীন খুকু (হাঁস প্রতীক) ও সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মহিলা আ.লীগ নেত্রী সেলিনা আনোয়ার ময়না (কলস প্রতীক)। তাদের দু’জনের মধ্যেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচন অফিসার ওয়াহিদ মুরাদ জানান, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করতে সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ প্রায় চূড়ান্ত। তিনি আরো জানান, কলারোয়া উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নের মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১২হাজার ৪২৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১লাখ ৫হাজার ৮৪৪ জন, মহিলা ভোটার ১লাখ ৬হাজার ৫৮২জন, আর হিজড়া ভোটার ১জন। মোট ভোট কেন্দ্র ৭৮টি। মোট বুথ তথা ভোট কক্ষের সংখ্যা ৫২৩টি। এর মধ্যে স্থায়ী বুথ ৪৮৮টি ও অস্থায়ী ৩৫টি। কলারোয়াা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোন ধরণের উল্লেখযোগ্য অপ্রীতকর ঘটনা ঘটেনি। কোন ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রও নেই। সার্বিক অবস্থা স্বাভাবিক। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত। আগামী ২৯ মে কলারোয়া উপজেলা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশক্রমে যার ভোট সেই দিতে পারবে। যাকে খুশি তাকে দিবেন। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করতে পারবেন ভোটাররা। কোন বাধাবিঘ্ন সৃষ্টি হবে না বলে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন।