বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আশাশুনিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় কমপক্ষে ২০টি বাড়ি ভাঙচুর করাসহ হামলায় আহত হয়েছে ৫ জন। আহতদের মধ্যে ২ জনকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পৃথক এসব সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ এ পর্যন্ত ১৪ জনকে আটক করেছে। মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার সকালে এসব ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ঘটে। এদিকে, এ সহিংসতার খবর পেয়ে জেলা পুলিশ সুপার মতিউর রহমান সিদ্দিকী বুধবার সকালে খাজরা ও বড়দল ইউনিয়নের বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি এসব ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সাথে কথা বলেন। পরিদর্শনকালে থানার অফিসার ইনচার্জ বিশ্বজিৎ কুমার অধিকারী, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর গৌরাঙ্গ কুমার, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম, পারজিত প্রার্থী আলহাজ্ব শাহ নেওয়াজ ডালিমসহ পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ ও থানার অফিসারবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা পরিদর্শন নির্বাচনে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহ নেওয়াজ ডালিম জানান, বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী পিরোজপুর গ্রামের মিলন পারভেজের নেতৃত্বে মঙ্গলবার রাতে একই গ্রামের রিপন হোসেনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। পরে একই গ্রামের আনোয়ারুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম এর বাড়িসহ কমপক্ষে ৫টি বাড়ি ভাংচুর করে তারা। এছাড়াও বুধবার সকালে বিচ্ছিন্ন হামলায় ভাঙচুর করা হয় গোয়ালডাঙ্গা গ্রামের আনোয়ারুল ইসলাম, কাদাকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দীপঙ্কর সরকার দ্বীপ, তেঁতুলিয়া গ্রামের সাইফুর রহমান, লিটন সরদার, প্রতাপনগরের আব্দুস সামাদ এর বাড়িসহ কমপক্ষে ২০জনের বাড়ি। এছাড়াও সহিংসতায় আহত হয়েছে চেউটিয়া গ্রামের আনিসুর রহমান ও তুয়ারডাঙ্গা গ্রামের ইমরান হোসেনসহ কমপক্ষে ৫ জন। বিজয়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এবিএম মোস্তাকিম জানান, এটা নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা নয়, এটি আসলে মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তিনি আরও জানান, ডালিমের কর্মী-সমর্থকরা গুনাকরকাটি গ্রামের মোশাররফ হোসেন, গদাইপুর গ্রামের আব্দুস সামাদ ও বড়দল ইউপি চেয়ারম্যান জগদীশ সানার বামনডাঙ্গাস্থ বাড়ি ভাঙচুর করেছে। আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ বিশ্বজিৎ কুমার অধিকারী জানান, বিভিন্নস্থানে সহিংসতার অভিযোগে অভিযান পরিচালনাকালে নাছিমাবাদ গ্রামের আনারুল ফকিরের ছেলে আরাফাত হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে থানায় ১৩(৫)২৪ নং মামলা রুজু করা হয়েছে। খরিয়াটি গ্রামের মৃত সাকাউদ্দীন গাজীর ছেলে মোঃ সাত্তার গাজী (৪৮) ও মোঃ আক্তার গাজীর ছেলে আকবর গাজী (৩৩)কে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে থানায় ১৪(৫)২৪ নং মামলা রুজু করা হয়েছে। এছাড়াও পিরোজপুর গ্রামের মৃত ইব্রাহিম সরদারের ছেলে মোঃ আব্দুর রহমান (৫৫), মৃত ফজলে গাজীর ছেলে মোঃ জাহাঙ্গীর গাজী (৪৪), মোঃ আলমগীর গাজী (৩৮), মোঃ মনিরুল গাজী (২৫) ও মোঃ জাহাঙ্গীর গাজীর ছেলে মোঃ ইব্রাহিম গাজী (২০), খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার মৌখালী গ্রামের আজগর গাজীর ছেলে মোঃ আবু হামজা (২৪), মোঃ মোজাফফর মোল্যার ছেলে মোঃ সোহেল মোল্যা (৩৪), মোঃ জাবের গাজীর ছেলে মোঃ আজগর গাজী (৫৫), কয়রা উপজেলার নাকসা গ্রামের মৃত গফুর সরদারের ছেলে মোঃ আরিফুল ইসলাম (৩০), দূর্গাপুর গ্রামের মৃত রাজেন্দ্র নাথের ছেলে ভবেন মন্ডল (৬৫), মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মোঃ আবুল কালাম আজাদ (৫৫)কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে থানায় পৃথক পৃথক ১৫(৫)২৪, ১৬(৫)২৪, ১৭(৫)২৪ ও ১৮(৫)২৪ নং মামলা রুজু করা হয়েছে। তিনি আর জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীদের বুধবার দুপুরে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মতিউর রহমান সিদ্দিকী জানান, আমি ঘনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এসব সহিংসতার ঘটনায় ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে।