দৃষ্টিপাত রিপোর্ট ॥ আবহাওয়া দপ্তর যেমনই আশঙ্কা করেছিল তেমনই পরিপূর্ণ শক্তি আর সক্ষমতা, সামর্থ নিয়ে ঘূর্ণিঝড় রিমাল দেশের উপকুলীয় জনপদে তার হিংস্র তা ও তান্ডব চালিয়েছে। শুক্রবার রাত ব্যাপী কোন সময় একনাগাড়ে আবার কোন কোন সময়ে থেমে থেমে তার আগ্রাসী রুপের বুিহঃপ্রকাশ ঘটায়। এরপূর্বে গত কয়েকদিন যাবৎ ঘুর্ণিঝড় রিমালের আগমনী বার্তা ও ভয়ঙ্কর তান্ডব ঘটানোর খবর প্রকাশ ও প্রচার হতে থাকে। জনমনে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও শিক্ষা বিরাজ করতে থাকে। সরকারি ভাবে সর্বাত্মক প্রস্তুতিতে গ্রহণ করা হয়। রাবিবার সকালে সূর্যের আলো লুকোচুরি খেলতে থাকে দুপুর পর্যন্ত সাতক্ষীরা সহ অন্যতমজেলা গুলোতে এমনই অবস্থার বিরাজ করতে থাকে। আবহাওয়া দপ্তর সকাল এগারটার দিকে মংলা ও পায়রা বন্দরে দশনং মহা বিপদ সংকেত ঘোষনা করলে জনসধারন বিশেষ প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এরপূর্বে কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে। আজ রাত নয়টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় সতাক্ষীরা সদর উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেও দেবহাটা, আশাশুনি কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। জেলায় লাখ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় জীবন যাপন করছ। উল্লেখিত উপজেলা গুলোতে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তান্ডবে বিদ্যুতের খুটি উপড়ে পড়া সহ বিদ্যুতের তাপে গাছ ও গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ার ঘটনা ঘটে। শুক্রবার বিকাল হতে শুরু হয় বৃষ্টিপাত এবং দমকা ও ঝড়ো হাওয়া, সাতটার পর হতে বাতাসের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। দশটা পর্যন্ত কখণও থেমে থেমে আবার কোন কোন সময় একনাগাড়ে দমকা হাওয়া চলমান থাকে। রাত যতই গভীলহতে থাকে ঝড়ের তীব্রতা ততোই বৃদ্ধি পেতে থাকে। আবহাওয়া দপ্তরের বুলেটিনে বলা হয়েছিল রাত দশটায় রিমালের তান্ডব হ্রাস পাবে। যে কারনে জনসধারনের ভরসা ছিল দশটা এগারটার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় শেষ হবে, কিন্তুবাস্তবতদা হলো রাক্ষুসে ঘুর্ণিঝড়ের আগ্রাসী তান্ডব আর রুদ্ররোষে বাড়তে থাকে। অজানা আশাঙ্কায় বিনীন্দ্র রজনী পার করে আতঙ্কিত, উদ্বিগ্ন উপকুলীয় বাসি। এভাবেই শুক্রবার দিবাগত বারটা, একটা, দুইটা তারপর রাত চারটার দিকে শান্ত হয় রিমাল। ইতিমধ্যে ধ্বংসস্তুপে পরিনতহয় উপকুলীয় জনপদ। বুক পেতে মহাবিপর্যয় এর কবল হতে জনজীবন তথা উপকুলীয় এলাকা কে রক্ষা করে সুন্দরবন। ততোক্ষনে হাজা রহাজার চিংড়ী ঘেরের চিংড়ী, সাদা মাছ ঘের তলিয়ে সাদা প্রজাতিরমাছ ভেসে গেছে। বসতঘর ভেঙ্গে পড়েছে। ঘরবাড়ীতে লবনাক্ত পানি বিধৌত ঘটেছে। গাছপালা উপড়ে যাতায়াত যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপন্ন হয়েছে। ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এবং জ্বলোচ্ছাসের কল্যানে নদীর পানি জনপদে প্রবেশ করেছে। বিশেষ করে আশাশুনীর খোলপেটুয়া নদীল ভেড়িবাধের কয়েক পয়েন্টে ভেঙ্গেছে এবং ভেড়িবাঁধ উপচিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। খোলপেটুয়া নদীর পানি চরম বিপদসীমায় অতিক্রম করছে। শ্যামনগরের বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হয়েছে। দ্বীপ ইউনিয়ন খ্যাত গাবুরার পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। গাবুরা রক্ষা বাধে ঢসও ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। কোন কোন ফাটল দিয়ে লবনাক্ত পানির অনুপ্রবেশ এবং বাঁধ উপচিয়ে পানি প্রবেশের গটনাও ঘটেছে। গাবুরার ন্যঅয় নাপিতখালী পদ্ম পুকুরেও ঘূর্ণিঝড় রিমাল ্ও তার তান্ডব রেখে গেছে। সুন্দরবনের এক অংশ জ্বলোচ্ছ্বাসের পানিতে তলিয়ে গেছে। বাগের হাটের স্মরনখোলা, মোল্লার হাট, খুলনার পাইকগাছা, কয়লা, পটুয়াখালীর বিস্তীর্ণ উপকুলেীয় এলাকার জনপদ রিমালের আগ্রাসী তান্ডবে লণ্ড ভন্ড, ছয় জেলায় এগারজনের নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সাতক্ষীলার শ্যামনগরে একজনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে হৃদযন্ত্রক্রীয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরন করেছেন। এদিকে ঘূর্ণিঝড় চলাকালীন সময়ে দীর্ঘদিন রোগশয্যায় থাকা দেবহাটার পারুলিয়অর গড়িয়াডাঙ্গার ফজলু গাজী ৮০ মৃত্যুবরন করেছে। সাতক্ষীরা খুলনা এবং বাগেরহাট জেলার চিংড়ী ঘেরের শতশত কোটি টাকার চিংড়ী ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি চিংড়ী ঘেরের ভেড়িবাঁধে ভেঙ্গে পড়েছে। ঘেরের বাসা বাড়ীগুলো উপচে পড়েছে। উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রবিশস্যের ক্ষেতগুলো পানিতেতলিয়ে গেছে। উপকুলীয় অন্যান্য জেলা গুলোর ন্যায় সাতক্ষীরার কৃষি উৎপাদনে ব্যঅপক ক্ষতি হয়েছে। সবুজ তরজতাজা সবজি ক্ষেতগুলো পানি তেতলিয়ে আছে। শুক্রবার সারারাত জেগে ঝড়ের রুদ্রমূর্তির সাথে পরিচিত হওয়া একাধিক ভুক্তভোগীরা দৃষ্টিপাতকে জানান পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় সর্বাধিক বাতাসের তীব্রতা ছিল বা থাকবে বলে জানানো হলেও সাতক্ষীরার আশাশুনি, দেবহাটা, কালিগঞ্জ শ্যামনগরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড় কোন অবস্থাতেই কম ছিল না। ঝড়ের তীব্রতা এমনই ছিল যে বসতবাড়ীর অভ্যন্তরের নারিকেল, আম, সুপারি, মেহগনি,কাঠাল সহ অন্যান্যগছ উপড়ে পড়ে। পাকা ইটের প্রাচীর ও রক্ষা পাইনি ঝড়ের তান্ডব থেকে।দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের একাধিক জেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। সাতক্ষীরায় কেবল বিদ্যুৎ বিচ্ছন্নতায় জনজীবন তা নয় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট বিপর্যয়ের মাঝ । কোন কোন সময় নেটওয়ার্ক ইন্টারনেট থাকছে আবার থাকছে আবার থাকছে না। বিদ্যুৎ হীনতার কারনে মোবাইল ফোনে চাজ দিতে পাচ্ছেনা। সাধারন মানুষরা নেটওয়ার্ক বিপর্যয় ও বিদ্যুৎ বিচিছন্ন তার কারনে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তান্ডবের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে পারছে না। সাতক্ষীরা খুলনা কালিগঞ্জ সবড়কের একাধিক এলাকাতে গাছ গাছালি উপড়ে পড়লে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ঘন্টা খানেকের মত অচলাবস্থার সৃষ্টি হলেও সকাল হতেই ফায়ারসার্ভিসের কর্মিরা সড়কের উপর পড়ে থাকাগাছ অপসারন করে। বারবার পচিরত্র পরিবর্তন করা ঘূর্ণিঝড় রিমাল ভোরচারটায় তার তান্ডবলিলা শেষ করলেও গতকাল সকাল থেকে পুনরায় দমকা বাতাস বইতে থাকে। অনেকটা জোরে সোরে বইতে থাকা ঝড়ো ও দমকা হাওয়ার পাশাপাশি কোন কোন সময় মুষলধারে আবর কোন কোন সময় থেমেথেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। এ রিপোর্ট লেখার সময় রাত নয়টায় সাতক্ষীরার উপকুলীয় জনপদগুলোতে জোরে সোরে দমকা বাতাস ও বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। মহা বিপদ সংকেত নেমে গেলেও গতকালে দিন ব্যাপী ঝড়ো হাওয়া এবং বৃষ্টিপাতেও ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে জনজীবন। শ্যামনগরের নাপিতখালী এলাকার ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে চিংড়ীঘের প্লাবিত হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে উপকুলীয় জনপদে প্রবেশ করা পানি না সরায় প্লাবিত এলাকাগুলোর জনসাধারন উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে আছে। গতকালের দিনব্যাপী বৃষ্টিপাতের কারনে চিংড়ীঘের, কৃষি উৎপাদনে ক্ষতির পরিমান আরও বৃদ্ধি করেছে। আবহাওয়ার খবরে বলা হয়েছে আজও দেশের উপকুলীয় এলাকাগুলোতে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। গতকাল বিকালে ঘূর্ণিঝড় রিমালের শেষ অংশ রাজধানী ঢাকা ত্যাগ করেছে। নিকট অতীতেও এমন শক্তি ময় ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হইনি উপকুলীয় জনপদ। বিপর্যয় কাটিয়ে জনজীবন আবারও ঘুরে দাঁড়াবে, ফিরবে প্রাণঞ্চাল্য সৃষ্টি হবে প্রাণের স্পন্দন। জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের ডিডি কৃষিবিদ মো: সাইফুল ইসলাম দৈনিক দৃষ্টিপাতকে জানান ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ জেলায় ৪০ হেক্টর জমির পাট, ১২৭ হেক্টর জমির আম এবং ৪৩৭ হেক্টর জমির শাকসবজি। তবে আওশের জন্য ব্যাপক উপকার হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় পাট ও শাকসবজির উপকার আসবে। ঘূর্ণিঝড়ে জেলায় যেমন ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল সেই হিসেবে ক্ষতি হয়নি।