বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২৯ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
জয়নগরে মন্দির ভিত্তিক স্কুলের সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের সাথে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় শ্যামনগরে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির কর্মি টি এস অনুষ্ঠিত তালায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত সাতক্ষীরায় বিজয় দিবসে সদর উপজেলা বিএনপির র্যালি কলারোয়ায় টালি মালিক সমিতির নব—কমিটি গঠন সভাপতি গোষ্ট পাল ও সাধারণ সম্পাদক তুহিন সাতক্ষীরায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত আশাশুনি রিপোর্টার্স ক্লাব ও আশাশুনি থানার বিজয় দিবস প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ নুসরাতের নৃশংস হত্যাকারী জনির ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন আশাশুনি আশার উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সুস্থতায় সুপেয় পানি ও শুকনা খাবার নিশ্চিত জরুরি

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৯ মে, ২০২৪

জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ সদ্য বিদায় নেয়া রেমালের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের নানা ধরণের স্থাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা করছেন দেশের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সুপেয় পানির অভাবে পানিবাহিত রোগ থেকে শরীরে নানা ধরণের স্বাস্থ্যহানীকর রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে ডায়রিয়া, আমশয়া, জন্ডিস ও হেফাটাইসি বি-ভাইরাস ও জ্বর দেখা দিতে পারে। অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে পেটের পিড়ার লক্ষণ থেকে মারাত্বক জড়িল রোগ মানুষের শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। একই সঙ্গে – অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার কারণে ঠান্ডাজনিত সমস্যা থেকে নিউমোনিয়ার মতো কঠিন রোগ দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব রোগ থেকে সুরক্ষার জন্য সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা, দৈনিক বাসাবাড়ি ব্লিচিং পাউডার দিয়ে যাতে পরিস্কার রাখতে পারেন, – এ ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত উপকরণ পাঠানো এবং শুকনো খাবার ও পর্যাপ্ত স্যালাইন সরবরাহ করা। একই সঙ্গে উপকূলীয় এলাকার মানুষের দুর্যোগের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে পুর্নবাসন করা। এছাড়া দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে যেখানে যা প্রয়োজন তার আলোকে পদক্ষেপ নেয়া। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, দুর্যোগের পরে খাবার পানির যে নিরাপদ উৎসগুলো থাকে জলোচ্ছাসের কারণে লোকালয়ে পানি ঢুকে গিয়ে নিরাপদ সুপেয় পানির সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। এর কারণে পানিবাহিত রোগ, যেমন – ডায়রিয়া, আমশয়া, হেপাটাইসিস বি-ভাইরাস, জন্ডিস, টাইফাইড জ্বর ও খাবারে বিষক্রিয়া এগুলোকে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। অন্যদিকে, লবণাক্ত পানির কারণে চর্মরোগ বেড়ে যায়। বলেন, যেটা আমরা সচরাচর আমলে নেয় না; তার মধ্যে রেমাল আসার আগেই যে একটা ভয়াবহ মানষিক চাপ এবং ঝড়ের সময় তাণ্ডব এ দুই মিলে শিশু-কিশোর এবং কৌমলমতি মানুষের উপরে প্রচন্ড মানষিক চাপ তৈরি হয়। এই চাপের কারণে পরবর্তী সময় ঝড়ের প্রভাব কমে গেলেও এক ধরণের মানষিক অস্থিরতা তৈরি হয়। এটাকে চিকিৎসকের ভাষায় ‘পোস্ট ড্রামিস্টিক স্টেজ সিনটম’ বলি। আমরা জানি যে, – এ সময়ের বৃষ্টির পানি ও জলোচ্ছাস এসবের কারণে খাদ্যের অনেকগুলো উৎসের সঙ্গে পানিবাহিত দূষণসহ আরও কিছু দূষণ মিশে যায়। ফলে খাবারের বিশুদ্ধতা নষ্ট হয়। অনেক নিরাপদ খাবার অনিরাপদ হয়ে যায়। এগুলো একটা কারণ। আর লবণাক্ত পানির কারণে চর্মরোগটা বেশি হয়। যার ফলে একদিনে রোগ ও অপরদিকে পুষ্টির যে মান সেটা বিঘ্নিত হয়। করণীয় কি জানতে চাইলে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, এই রেমালের দুর্যোগের কারণে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে যেখানে যা করণীয় সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং খাদ্য সাহায্য দেয়া। বলেন, দীর্ঘমেয়াদী দুর্যোগ পরবর্তী স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য একটা মানসম্মত পদ্ধতিগত কাঠামো ব্যবস্থা রাখা; যা আমাদের এখানে দেখা যায় না। ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক সৈয়দ সফি আহমেদ মোয়াজ বলেন, দুর্যোগের পর সবচেয়ে বড় যে সমস্যায় পড়বে উপকূলীয় বা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ তা হচ্ছে পানিবাহিত রোগ। বলেন, ডায়রিয়া পানি থেকে আসে কিন্তু বিশুদ্ধ পানি পাবে না। পানিবাহিত রোগ থেকে তাদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। কিন্ত এতো পানি কোথা থেকে পাবে। যেই পানি আছে তাতে ফিটক্্ির মিশিয়ে বিশুদ্ধ করে তা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আর দুই নং সমস্যা চর্মরোগ বাড়বে। অর্থাৎ পাংগাশ ইনফেকশন যেমন – পায়ে ফুসকুড়ি উঠার মতো ক্ষত দেখা দিবে। এসব থেকে সুরক্ষার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষকে অবশ্যই যতদূর সম্ভব খালি পায়ে না হাটার চেষ্টা করতে হবে। বলেন, ঘরের ভিতরে সম্ভব হলে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পরিস্কার করা। আর বিশুদ্ধ খাবার খাওয়ানোর জন্য ড্রাইফুড সরবরাহ করা। ছোট বাচ্চাদের যতদুর সম্ভব বুকের দুধ খাওয়ানো পাশাপাশি অন্যখাবার দেয়া। আর বয়স্কদের দিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে এই জন্য যে, ঠান্ডাজনিত সমস্যা থেকে নিউমোনিয়া দেখা যেতে পারে। তাই উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থায় বিশুদ্ধ পানির সংকট থাকে, আর দুর্যোগ এলে আরও দুর্ভোগ বেড়ে যায়। তাই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের দিকে সরকারের মনোযোগ বেশি দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। একই সঙ্গে দুর্যোগে বেঁড়িবাধে অবস্থান নেয়া অসহায় মানুষের মধ্যে বেশি বেশি স্যালাইন পৌছানোর ব্যবস্থা করা। পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ সিপিআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুদোহা বলেন, দুর্যোগের কারণে অনেক মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। আমরা মূলত এটা নিয়েই গবেষনা করি। তবে এবার ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে জোয়ারের পানির উচ্চতা ১০ফুট বেড়ে যাওয়ায় সুন্দরবন ও উপকূলীয় এলাকা তলিয়ে গেছে। এ ধরণের দুর্যোগের পর সবচেয়ে বড় যে সমস্যা হয়, পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হয় না; বছরের পর বছর এভাবেই চলতে থাকে। সমস্যা যেটা আমাদের অবকাঠামো ও রুলস রেগুলেশন ঠিক নেই ও পরিকল্পনা মাফিক কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না। এছাড়া পানি নিষ্কাশনের জন্য যে খাল ও নদীনালা ছিল সেগুলোও ভরাট হয়ে গেছে। এতে অসুবিধা হয়, লবণাক্ত পানি ঢোকার কারণে দ্রুত অপসারণের ব্যবস্বা না থাকায় স্বাধু পানির উৎস নষ্ট হয়ে যায়। সাইক্লোন সিডর, আইলা ও আম্ফানের সময় আমরা সেটা দেখেছি। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশু ও নারীরা। তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং নানা ধরণের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি দেখা যায়। এই দুর্যোগের কারণে শিশুশ্রম বাড়ে, অভাবের কারণে নানা পেশায় ঝুঁকে এবং শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়ে। দুর্যোগ আসলেই যতটা তোড়জোড় শুরু হয় পরবর্তীতে আর তৎপরতা দেখা যায় না সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এটা খুবই দুংখজনক। বলেন, প্রচুর মানুষ উপকূলীয় এলাকায় ঝুঁকি জেনেও বেঁড়িবাধের কাছে বসবাস করছে। সরকারের উচিত এসব অসহায় মানুষদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দেয়া।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com