স্টাফ রিপোর্টার ঃ সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক অধিকার ও উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বিকালে শহরের তুফান কনভেনশন সেন্টার লেকভিউতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কমিটির সভাপতি ও দৃষ্টিপাত সম্পাদক জিএম নূর ইসলাম। তিনি নাগরিক কমিটির ২৪ দফা দাবী তুলে ধরেন ২৪ দফা দাবি। জেলা নাগরিক অধিকার ও উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির দাবী সমূহ ঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা অনুযায়ী নাভারন থেকে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত রেল লাইন দ্রুত কার্যক্রম, জলাবদ্ধতা নিরসন জেলার সকল নদ-নদী ও খালগুলি পুনঃ খরনের ব্যবস্থা করা, যশোর, নাভারণ থেকে মুন্সিগঞ্জ ও ভোমরা থেকে খুলনা পর্যন্ত ৪ লেন রাস্তা উন্নতি করন, সাতক্ষীরা রেঞ্জে সুন্দরবনকে পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় স্থান চিহিৃত করার পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য মোটেল নির্মাণ করা, ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসাবে ঘোষনা করা, সাতক্ষীরা থেকে ঘোলা পর্যন্ত রাস্তাটি সম্প্রসারণ ও সংস্কারের ব্যবস্থা করা, সাতক্ষীরায় একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম সহ প্রতিটি উপজেলায় স্টেডিয়াম নির্মান করা, সাতক্ষীরা একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি কৃষি কলেজ স্থাপন করা, খুলনা থেকে চুকনগর ভায়া সাতক্ষীরা ভোমরা স্থল বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করা, জেলাকে এ গ্রেডের নিমিত্ত তালা উপজেলার পাটকেলঘাটাকে উপজেলা হিসাবে ঘোষনা করা, জেলায় অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা করা, জেলার দৃশ্যমান পয়েন্টে ভাস্কর্য এবং সৌন্দর্যবর্ধন করা, বিনেরপোতা থেকে আশাশুনি সড়ক রামচন্দ্রপুর ও দহকুলা হয়ে বাকাল চেকপোষ্ট পর্যন্ত সংযোগ সড়ক স্থাপনকরা, ভোমরা পোর্টের জিরো পয়েন্টে গেট নির্মান ও সৌন্দর্যবর্ধন করা, পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশন ঘোষনা করা, প্রাণসায়ের খাল খনন সহ দুই পার্শ্বে সৌন্দর্যবর্ধন এবং পানি প্রবাহ নিশ্চিতকরা, জেলার সকল হাসপাতাল এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরা, সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালকে বাইপাস রাস্তার পার্শ্বে স্থানান্তর করা, বিসিক শিল্পনগরীকে সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা, শিশুদের বিনোদনের জন্য জেলার প্রতিটি উপজেলায় একটি করে শিশু পার্ক স্থাপন করা, সাতক্ষীরায় প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবস্থা করা, সাতক্ষীরায় একটি এয়ারপোর্ট নির্মানের ব্যবস্থা করা, বসন্তপুর নৌবন্দর চালুর ব্যবস্থাকরা। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সংবর্ধনা উপ কমিটির আহবায়ক আলহাজ্ব ডা: আবুল কালাম বাবলা। তিনি বলেন, নাগরিক অধিকার উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি জেলার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তুলনামূলকভাবে সাতক্ষীরা অনেক পিছিয়ে আছে। সাতক্ষীরাকে এগিয়ে নিতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে। সংবর্ধিত অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন সদর আসনের সংসদ সদস্য মো: আশরাফুজ্জামান আশু। তিনি বলেন, আমাকে যারা ভোট দিয়েছেন আমি তাদের কাছ দায়বদ্ধ। সকলের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমার। সাতক্ষীরা পৌরসভা সিও সহ কিছু কর্মকর্তা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রামরাজত্ব কায়েম করে যাচ্ছে। নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। দালাল চক্র পৌরসভা ভূল বুঝিয়ে নিউ মার্কেট ভেঙ্গে ফেলেন। সম্প্রতি বিনেরপোতায় পৌরসভার সিওর নির্দেশে ব্যক্তি মালিকানার সম্পত্তিতে কয়েকগাড়ি ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়েছে। একটি জন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হওয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ এলাকা বাসি নিষেধ করা সত্ত্বেও জোর করে ময়লা ফেলেন। আমি সংসদে সাতক্ষীরা সকল সমস্যার কথা তুলে ধরেছি। বিশেষ করে জন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক গুলি, সাতক্ষীরা দরবার হল পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হবে। একই সাথে বিধি মোতাবেক ছাড়া নিউ মার্কেট ভবন নির্মান করতে দেওয়া হবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স। আমরা ও দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গড়তে চাই। জনগনের জন্য কাজ করে যাবো। কাউকে ভয় করব না। ইতিমধ্যে সাতক্ষীরা জলাবদ্ধতা দুরীকরনে খাল খনন, বেতনা নদী খনন, সহ অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। যারা জেলার উন্নয়নে বাধাগ্রস্থ করবেন তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবেনা। সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেজুতি বলেন, নাগরিক অধিকার ও উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির দাবীগুলো যৌক্তিক। এই দাবী বাস্তবায়ন হলে সাতক্ষীরা মডেল জেলায় পরিনত হবে। আমি রেল লাইন সহ আপনাদের অনেক দাবীর বিষয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করে মহান সংসদে উপস্থাপন করেছি। জেলার সকল সংসদ সদস্যকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তবে জেলার উন্নয়ন সম্ভব হবে। সম্মানিত অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আ’লীগ সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব মো: নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সাতক্ষীরার উন্নয়ন আমার দাবি ছিল সংসদ সদস্যদের কাছে। আপনারা সেটা তুলে ধরেছেন। আমাদের জেলার সকল সমস্যা আপনারা জানেন। জেলার উন্নয়নে আমরা সকলে এক ও অভিন্ন। নাগরিকদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করব। তবে দাবীগুলি ভাগ করে নিলে ভাল হয়। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী সহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রনে আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকবো। সুন্দর সাতক্ষীরা গড়তে আমরা সকলে একত্রে কাজ করবো। সংবর্ধিত অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন নব নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বাবু। তিনি বলেন, জেলার উন্নয়নে দলমত নির্বিশেষে এককাতারে এসে দাবিগুলো তুলে ধরতে চাই। নায্য দাবি আদায়ে কেউ পিছিয়ে থাকব না। সকলে ঐক্যবদ্ধ হলে দাবি আদায় সম্ভব হবে। সময় এসেছে কালো ছায়া থেকে বের হয়ে সুন্দর সাতক্ষীরা গড়া। সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, সুশীল সমাজকে এক কাতারে আসতেহবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি নান্দনিক সাতক্ষীরা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন, কমিটির সাবেক সভাপতি মো: কামরুল ইসলাম ফারুক। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিশ্বনাথ ঘোষ, কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সুজন, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান রাসেল। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন কমিটির সহ সভাপতি আব্দুর রব ওয়ার্ছি, ফারহা দিবা খান সাথী, মহিলা সম্পাদিকা মুর্শিদা আক্তার, যুগ্মমহিলাসম্পাদিকা নাছিমা খাতুন, অফিস সম্পাদক সোহরাব হোসেন, প্রচার সম্পাদক মো: আশরাফুল করিম ধনি,মাষ্টার রফিকুল ইসলাম, মুছা করিম, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, গাজী আবুল কাশেম, নুরুল হক, নাসির উদ্দীন, আকবর হোসেন, মঈনুর রশিদ,রেজাউল করিম, কাজী মনিরুজ্জামান, ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম, আব্দুল গফ্ফার, মেম্বার জমাত আলী, শফিউদ্দীন, সালাউদ্দীন, আবু জাফর, শরিফুজ্জামান, জুথী প্রমুখ। এছাড়া বীরমুক্তিযোদ্ধা, ইউপি চেয়ারম্যান, সাংস্কৃতিক, সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। কমিটির সভাপতি জিএম নূর ইসলাম সমাপনী বক্তব্যে বলেন, নাগরিক কমিটি সাতক্ষীরা উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের দাবীগুলো অনেকটা বাস্তবায়ন হয়েছে। অন্য অন্য দাবী বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ সহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের স্মরনাপন্ন হয়েছি। সাতক্ষীরার সন্তানেরা রাষ্ট্রের যেসব গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে আছে তাদেরকে সাথে নিয়ে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সুন্দর সাতক্ষীরা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এজন্য আমরা সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, সুধীজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করব। তবে আমাদের জেলার উন্নয়নে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। এর পূর্বে সংবর্ধিত অতিথি ও সম্মানিত অতিথিদেরকে ক্রেস্ট প্রদান ও ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান করা হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কমিটির সহ সভাপতি তৈয়েব হাসান বাবু ও যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ পাড়।