দৃষ্টিপাত রিপোর্ট ॥ বাংলাদেশ ভারত বিভক্ত করন ইছামতি নদীর ভাঙ্গন থেমেনেই। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার হাওড়দাহ হয়ে দেবহাটা উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহমান খরস্রোত ইছামতি কালিগঞ্জের বসন্তপুরকে স্পর্শ করেছে। অন্যদিকে ভারতের পশ্চিম বাংলার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটের পানতর এলাকা থেকে হিঙ্গলগঞ্জ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতকে বিভক্ত করেছে। যুগ যুগ ধরে খরস্রোত ইছামতির উপস্থিতি ব্যবসা বাণিজ্যে যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় কাঙ্খিত ভূমিকা রাখলেও গত কয়েক দশক যাবৎ ইছামতির সর্বনাশা ভাঙ্গন দেবহাটা সীমান্তের বিস্তীর্ন ভূ-খন্ড হারিয়ে গেছে। দেবহাটার পাশাপাশি সদর উপজেলার হাওড়দাহ এবং কালিগঞ্জের বসন্তপুর ও ভাঙ্গন কবলিত। দেবহাটার কোমরপুর, ভাতশালা, চর শ্রীপুর, টাউনশ্রীপুর উপজেলা সদরের বিওপি সংলগ্ন এলাকা নাংলা প্রতিনিয়ত ভাঙ্গছে তো ভাঙ্গছে। উপজেলার উল্লেখিত ছয়টি গ্রামের ফসলি জমি, স্থাপনা বসতবাড়ী, সরকারি খাদ্য গুদাম ইছামতির গর্ভে হারিয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গনের কবলে অনেকে গৃহহীন হয়েছে, আশ্রয়হীন হয়েছে। কোমরপুর গ্রামের ঐতিহাসিক বাগদাদীপীরের মাজার ও মসজিদটি হুমকির মুখে। এই গ্রামে অবস্থিত সরকারি খাদ্য গুদামটি বর্তমান অতীত। সেটিও ইছামতি ভক্ষন করেছে। কোমরপুর গ্রামকে রক্ষায় ইতিমধ্যে বিকল্প ভেড়িবাঁধ নির্মান করা হয়েছে। ভাতশালা গ্রামের আয়তন অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে বহু ফসলি ক্ষেত, বাগান ইছামতি ভক্ষন করেছে। মূল গ্রাম হুমকির মুখে। চরশ্রীপুরের উল্লেখযোগ্য অংশ ইছামতির রাক্ষুসে স্রোত গ্রাস করেছে। জাতীয় ভাবে আলোচিত রুপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র (মিনি সুন্দরবন) এর অংশ বিশেষ ভাঙ্গনের কবলে। সুন্দর আর সৌন্দর্য্যরে বরতা এই রুপসী ম্যানগ্রোভ হুমকির মুখে। উপজেলা সদরের বিওপি ক্যাম্প এর সম্মুখ ও আশপাশের এলাকা দীর্ঘদিন যাবৎ ভাঙ্গনের মুখে, ভাতশালা ও কোমরপুর অপেক্ষা অধিকতর ভাঙ্গন কবলিত নাংলা এলাকা। বর্তমানে নাংলা এলাকায় ইছামতি ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ চলমান। ইছামতির ভাঙ্গন দীর্ঘদিনের ভাঙ্গন রোধে মেঘা প্রকল্প গ্রহন করা জরুরী। প্রতি বছরই দেবহাটার কোন না পয়েন্টে ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করে কিন্তু ফলাফল অন্তঃসারশুন্য। স্থানীয়দের অভিযোগ অনিয়ম এবং দুর্নীতির কারনে ভাঙ্গন রোধের কার্যক্রম পূর্ণতা পায় না। প্রয়োজন ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী সমাধান। মেগা প্রকল্প গ্রহনের মাধ্যমেই স্থায়ী ভাঙ্গন রোধ সম্ভব এমন মন্তব্য দেবহাটার সীমান্ত পারের অধিবাসিদের। ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে দেশের ভূ-খন্ড হারাতে থাকবে এমন আশঙ্কা ইছামতি সীমান্ত পারের গ্রামবাসিদের। বাংলাদেশের ভূখন্ড ইছামতিতে তলিয়ে গেলেও আন্তর্জতিক নদীর সীমানা অনুযায়ী নদীর মাঝ বরাবর সীমান্ত হওয়ায় দৃশ্যতঃ আইনগত ভাবে নদীর অর্ধেকই প্রাপ্য। ইছামতির ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী টেকসই প্রকল্প গ্রহনের পাশাপাশি ইছামতি নদী হতে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করা জরুরী। বালু উত্তোলনের ফলে নদীর স্রোত স্বাভাবিক অপেক্ষা ক্ষিপ্রগতিতে প্রবাহিত হয় এবং বিপরীতমুখি স্রোতের গতি বৃদ্ধি পায় যে কারনে দেবহাটা সীমান্তে ভাঙ্গন ত্বরান্বিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। নদীর তীরবর্তি ঠেলা জাল দিয়ে মৎস্য আরোহনের কল্যানে নদীর ভেড়ি বাধ ক্ষতি হয় এবং ভাঙ্গন দ্রুত হয়। সীমান্ত পারের জনজীবন এবং ফসলি জমি, স্থাপনা সর্বপরি দেশের ভূ-খন্ড রক্ষায় ইছামতি ভাঙ্গন রোধে টেকসই ভাঙ্গন রোধ ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।