এফএনএস: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা সেতু আমাদের গর্বের সেতু। একটা সিদ্ধান্ত দেশকে অন্তত সেই মর্যাদা দিয়েছে আজ বাংলাদেশের মানুষ আন্তর্জাতিকভাবে গর্বের সঙ্গে বুক ফুলিয়ে চলতে পারে। আগে যারা কথায় কথায় আমাদের খবরদারি করতো তাদের মানসিকতা বদলে গেছে, তারা এখন বাংলাদেশকে সমীহ করে চলে। তিনি বলেন, টাকার অঙ্ক দিয়ে পদ্মা সেতুর বিচার নয়। এ সেতুর কারণে দেশের জনগণ একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা সফল হয়েছে। আমরা এখন আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে তোলবো। গতকাল শুক্রবার বিকেলে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে সেতুর প্রকল্পের সমাপনী উপলক্ষে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মাপারের মানুষ আমরা সব সময় কষ্ট ভোগ করতাম। আসতে যেতে। প্রথমে ১৯৫২ সালে দাদার সঙ্গে আমরা ঢাকায় যেতে নৌকায় পার হই এ পদ্মা। চারদিন চার রাত লেগেছিল। তখন আব্বা জেলে। এ যাতায়াতে কত মানুষের জীবন গেছে। বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আজকে আর কেউ সেবাবঞ্চিত হয় না। এমডি পদে কী মধু আছে? ড. ইউনূসের প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, একটা পদ। সেটা হলো একটা ব্যাংকের এমডির পদ। এ পদটা নিয়ে যত জটিলতা, যত সমস্যা। এখন ব্যাংকে যদি আইন থাকে, একজন ২০ বছর থাকতে পারবে। এরইমধ্যে তার বয়স ৭০ হয়ে গেছে। অতিরিক্ত সময় থেকে ফেলেছ। তারপরও সে সেখানে থাকে কী করে? একজন নোবেলজয়ী সামান্য একটা এমডি পদের জন্য লালায়িত কেন? এ প্রশ্নের উত্তর কখনো পেলাম না। শেখ হাসিনা বলেন, যে বড় দেশে তাকে (ড. ইউনূস) প্রমোট করে, সেদেশের রাষ্ট্রদূত আমার অফিসে আসে। আমার অফিসারদের ধমকায়। বলে, এ এমডির পদ না থাকলে এ টাকা (পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন) বন্ধ হয়ে যাবে। এ এমডি পদের জন্য আমার কাছে তদবির করতে হিলারি ক্লিনটন দুইবার ফোন করলেন। শেরি ব্লেয়ার ফোন করলেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি এলো। বিশ্বের অনেকেই এলো। আমি শুধু জিজ্ঞেস করলাম, এ এমডি পদে কী মধু আছে? তিনি বলেন, এরশাদ ব্যাংক করলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরকে এনে এমডি হিসেবে বসালেন। সেই প্রফেসর আর ওই চেয়ার ছাড়তে চান না। আমাদের অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভী সাহেব ওঁর কাছে গিয়ে বললেন, আপনি আর এমডি থাকবেন কোনো, আপনি বরং এখানে উপদেষ্টা হিসেবে থাকেন। তাতেও তিনি রাজি না। তিনি মামলা করলেন সরকারের বিরুদ্ধে। দুটি মামলা। সবাই ঘাবড়ে গেলো। আমি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বললাম, এটা তো তেমন কিছু না। খালি আইনটা উপস্থাপন করবেন। কোর্ট যদি পারে, কারো বয়স বাড়াতে বাড়াক। পরে উনি মামলায় হেরে গিয়ে আরও ক্ষেপে গেলেন। আর তার ওই রাষ্ট্রদূতের আনাগোনা তো চলছেই। বার বার পিএমওতে আসে আর একই কথা শোনায়। পরে একজন আন্ডার সেক্রেটারি এলেন, ওই একই কথা বললেন। পরে আমি বললাম, আর কেউ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলে আমি দেখা করবো না, কথা বলবো না। পরে আমি আর কারো সঙ্গে দেখা করিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও একই প্রশ্ন। আমি খালি বলেছি, ওই পদে কী মধু আছে। এখন একটা কথা বলি। এমডি পদে যে কী মধু, এখন যদি দেখেন খোঁজ পাবেন। শ্রমিকরা মামলা করলে, গ্রামীণ ব্যাংকের অডিট রিপোর্ট এলে আরও তথ্য বেরোবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক ঝড়ঝাপটা পার করে পদ্মাসেতু নির্মাণ করতে হয়েছে। সাধারণত কোনো প্রকল্প শেষ হলে সেই শেষ হওয়ার অনুষ্ঠান হয় না। কখনো করা হয় না, শেষ হয়ে যায়। তবে পদ্মা সেতু অনেক ঝড়ঝাপটা পার করে অনেক বাধা অতিক্রম করে নির্মাণ করতে হয়েছে। দেশের জনগণের টাকা পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর সঙ্গে যারা জড়িত, যারা জমি দিয়েছে, তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাইতে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছি। এটি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানানো অনুষ্ঠান। নিজের টাকায় পদ্মা সেতুর নির্মাণের ইতিহাস বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যে জাঁতি রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করলো, সে জাঁতি কেন মাথা নিচু করে চলবে? অকুতোভয় জাতিকে একেবারেই মর্যাদাহীন করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাবেক মন্ত্রিপরিষ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মনজুর হোসেন। প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শুরুতেই পদ্মাসেতু থিমসং প্রচার করা হয়। এ ছাড়া পদ্মা সেতুর ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়। সুধী সমাবেশে সেতুমন্ত্রীর ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা স্মারক দেওয়া হয়।