কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি ॥ অতিবৃষ্টিতে উপজেলার ৯০ শতাংশ বীজতলা ডুবে গেছে। ১৬ হাজার ২ শত ৩৫ হেক্টর বীজতলা জমির বীজতলা পুরো নষ্ট হয়েছে। খুলনা জেলায় আমনের আবাদ হয় বেশি উপকূলীয় কয়রা উপজেলায়। কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে এই উপজেলায় অনেক এলাকায় আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক চাষী নতুন করে বীজতলা তৈরির প্রস্তুতি নিতেও পারছেন না জলাবদ্ধতার কারনে। এতে আমন ধানের বেশিরভাগ বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। বিশেষ করে মহারাজপুর ইউনিয়নের ৫ টি বিলের পানি এখনও পর্যন্ত সরেনি। কারন হিসেবে শাকবাড়ীয় খালে বড়ব্রীজ নামক স্থানে ২০০৯ সালে আইলায় ব্রীজটি ভেঙ্গে গেলে মানুষের যাতায়াতের জন্য রাস্তা দিয়ে বাঁধ দেয়া হয়। দীর্ঘ একযুগ পর সেখানে ব্রীজ টেন্ডার হলেও কাজ স্থগিত থাকায় এ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এই শাকবাড়ীয়া খাল দিয়ে প্রায় ৫ হাজার বিঘা কৃষি জমি ও ২ হাজার বিঘা মৎস্য ঘেরের পানি বের হওয়ার একমাত্র খাল। খালে বড়ব্রীজ নামক স্থানে বাঁধ দিয়ে দুইটি পাইপে অল্প অল্প পানি বের হলেও জলাবদ্ধতা নিরসনে তা অনেক দিন লাগবে পানি সরতে। যে কারনে আমনে কৃষকের দুশ্চিন্তায় মাথায় হাত উঠেছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৭ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কয়রা উপজেলা। চলতি মৌসুমে এখানে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ২ শত ৩৫ হেক্টর জমি। এজন্য ৯৭১ হেক্টর জমিতে বীজতলা করা হয়েছিল। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারি গুরুদাস উপসহকারি হওয়া সত্বেও মাঠে না গিয়ে সবসময় অফিসে বসেন এবং অফিসের কাজ করেন। এমনকি উপজেলার তথ্য তার কাছে থাকেন। উপসহকারি গুরুদাসের সাথে কথা হলে তিনি মুখস্ত বলেন, উপজেলায় ১৫২ হেক্টর জমিতে বীজতলা পানির নিচে ডুবে আছে। অথচ ইউনিয়ন উপসহকারিদের কথায় ১৫২ হেক্টর জমিতে বীজতলা তো এক ইউনিয়নে আছে। বাকি থাকল ৬ টি ইউনিয়ন। কিন্তু বেসরকারি জরিপে জানা যায়, সম্প্রতি অতিবৃষ্টিতে ৯০ শতাংশ বীজতলা ডুবে যায়। অনেক স্থানের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ২৫ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রাবনের মাঝমাঝি আগষ্টের প্রথম সপ্তাহ) থেকে ভাদ্রের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আমনের চারার রোপন করা হয়। বীজতলা করা হয় আষাঢ়ের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত। এবারও চাষিরা সময়মত বীজতলা তৈরি করেছিলেন। তবে গত মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হয়। এতে উপকূলীয় এলাকার কব বীজতলা ডুবে যায়। উপজেলার যেসব এলাকার পানি নিনিস্কাশনের ব্যবস্থা তুলনামূলক ভালো, সেখান থেকে বুষ্টি থামার দু-একদিনের মধ্যে পানি নেমে গেছে। তবে সেসব বীজতলার চারার অবস্থা ভালো নেই। এর এখন অনেক এলাকার বীজতলা পুরোপুরি পানির নিচে। কৃষকের অভিযোগ, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সরকারের কাছ থেকে নামমাত্র ইজারা নিয়ে অথবা প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকা ব্যক্তিরা অধিকাংশ খাল দখলে রেখেছেন। ইজারাদার আর তাদের প্রতিনিধিরা খালে জাল ও বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করেন। এতে পানি নিস্কাশনসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে প্রয়োজনের সময় যেমন পানি সরছে না, তেমনি দিনদিন খালের নাব্যতা কমছে। এছাড়া এলাকার জলকপাট ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বেশিরভাগ সময় সব ধরনের কৃষকের কথা চিন্তা না করে পানি উঠানামা করান। যখন প্রয়োজন নেই হয়তো তখন জলকপাট দিয়ে নদী থেকে পানি উঠিয়ে দেন। আবার প্রয়োজনের সময় পানি ঠিকমত সরান না। আর কৃষি অফিস তো খোঁজ খবর রাখেন না এমনকি কোন কোন ইউনিয়নের কৃষককের বীজতলা তৈরিতে পাচ্ছে না কোন পরামর্শ। মহারাজপুর গ্রামের কৃষক মোকলেছ মোড়ল জানান, এ বছর ৮ বিঘা জমিতে আমন চাষের পরিকল্পনা করেছিলেন। ১৫ দিন আগে বীজতলা তৈরি করেন। চারা কিছুটা বড় হয়েছিল। এখন বীজতলায় এক হাত পানি থই থই করছে। মহারাজপুর ইউনিয়নের কৃষক প্রভাষক শাহাবাজ আলী বলেন, অধিকাংশ চাষীর বীজতলা পানির নিচে । চারার মাথায় পচন ধরেছে। এই চারা রোপন করা যাবে না।অনেকে নতুন করে বীজতলা তৈরির চিন্তা করছেন কিন্তু পানি না সরলে সেটা সম্ভব নয়। আর এতে খরচ বাড়বে। নতুন বীজতলার চারা রোপনের উপযোগী হতে মৌসুমের শেষ দিকে চলে আসবে। যদি দ্রুত এই পানি নিস্কাশন না করা যায় তাহলে শত শত কৃষক আমন চাষে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তবে দু- একদিনের মধ্যে পানি সরানোর ব্যবস্থা করতে পারলে কৃষক আবার নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে পারবে। এজন্য দ্রুত এসব বিলের জলাবদ্ধতা নিস্কাশন করতে বড়ব্রীজ নামক স্থানে বাঁধ দিয়ে শাকবাড়য়িা খালে পানি সরাতে উর্দ্ধতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। দ্রুত বিলের পানি সরলে কিছুটা হলেও কৃষকের দুশ্চিন্তা কমবে। মহেশ^রীপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের কৃষক আসলাম মোড়ল বলেন, তার বীজতলা পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। আবার বীজতলা তৈরির জন্য বেশি দামে বীজধান সংগ্রহ করতে হবে। এতে ধান লাগানোর সময় অন্তত তিন সপ্তাহ পিছিয়ে যাবে। উপজেলার আমাদী এলাকার ধানের একমাত্র ফসল এই আমন। সেখানকার কৃষক অনুনয় সরকার বলেন, টানা বৃষ্টিতে ধানের চারা ডুবে আছে। চারার গায়ে শেওলা জমেছে। বীজতলা থেকে পানি নামতে চারা নেতিয়ে যাবে। যাতে চারা নষ্ট হয়ে যাবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, অনেক বীজতলা এখনও ডুবে আছে। আবার অনেক কীজতলার চারা নেতিয়ে পড়েছে।তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শমতো পরিচর্যা করলে বীজতলার ক্ষতি কমবে।