জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর থেকেই প্রশাসনে অস্থিরতা কমছে না। বিভিন্ন সময়ে সরকারের গুডবুকে থাকা আমলারা সটকে পড়েছেন। অনেকে অফিসে এলেও হাজিরা দিয়ে বিভিন্ন কক্ষে গল্পগুজব করে সময় পার করছেন। অনেকে অফিসে ফেরার নিদের্শনা না থাকায় নিরাপদ স্থানে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। উচ্চ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে এসব বিষয়ে স্পষ্ট হওয়া গেছে। অপরদিকে প্রশাসনে বিভিন্ন সময়ে পদ-বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারি তাদের বঞ্চনা ঘূচাতে রয়েছেন তৎপর। নিজ উদ্যোগে নিয়েছেন সুবিধাজনক জায়গায় পদায়ন। এসব করে ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। এদিকে, গত বৃহস্পতিবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তবর্তীকালিন সরকারের ১৬ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়। তবে এসব উপদেষ্টাদের মধ্যে চৌদ্দজন শপথ নেননি। অন্তবর্তীকালিন সরকারের নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ পাওয়ার মাধ্যমে কয়েকদিনের অস্থিরতা কিছুটা কমে আসতে শুরু করেছে। শনিবার ছুটির দিনে নতুন উপদেষ্টাদের মধ্যে কয়েকজন অফিস করেছেন। এর মধ্যে আইন সংসদ বিষয়ক ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান অফিস করেছেন। আজ রবিবার থেকে সবাই পুরোদমে অফিস করবেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছেন। এসব উপদেষ্টাদের একান্ত সচিব ও সহকারি একান্ত সচিব এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জন-সংযোগ কর্মকর্তা নিয়োগ কার্যক্রম চলতি সপ্তাহে শেষ করার চিন্তা রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সূচারুভাবে পরিচালনা করা যায়, সেজন্য দ্রুত এসব নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করার পক্ষে সম্ভব। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে পতন হওয়া সরকারের আস্থাভাজন কাউকে উপদেষ্টাদের একান্ত সচিব না করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দীর্ঘসময়ে আন্দোলনকারীদের সমর্থনপুষ্ট ও সৎ, মেধাবি এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বঞ্চিত কর্মকর্তারা এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। তবে যারাই উপদেষ্টাদের একান্ত সচিব হবেন সবাইকে দুনীতিমুক্ত ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ জন্য শেখ হাসিনা সরকারের গত দেড় দশকের শাসনামলে প্রশাসনে পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের ব্যাচভিত্তিক তালিকা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে বিএনপি-জামায়াতসমর্থিত অন্তত প্রায় ৩০০ জন কর্মকর্তার নামের তালিকা জমা পড়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠনের পর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টার সম্মতিসাপেক্ষে বঞ্চিতদের তথ্য-উপাত্ত চুলচেরা বিশে¬ষণ করবে পদোন্নতির জন্য সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)। বঞ্চিত এসব কর্মকর্তার পদোন্নতির বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। বঞ্চিতরা জানান, বিগত কয়েক বছরে যাগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই পদোন্নতি পাননি, যা দুঃখজনক। তাঁদের ব্যাচভিত্তিক তালিকা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দু-একটি ব্যাচের তালিকা হয়েছে। বাকিগুলোও চলতি সপ্তাহের মধ্যে হয়ে যাবে। সরকার গঠনের পর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এসএসবির বৈঠক ডাকা হবে। সেখানে আবেদনকারী কর্মকর্তাদের তথ্য-উপাত্ত বিশে¬ষণ করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা হবে। আশা করি বঞ্চিতদের বেদনা প্রশমিত হবে। সংশি¬ষ্ট সূত্র বলেছে, তালিকায় অন্তত ৩০০ জনের কম-বেশি নাম রয়েছে। এর মধ্যে বিসিএস ১১তম ব্যাচের ৪ জন, ১৩তম ব্যাচের ৮ জন, ১৫তম ব্যাচের ২১ জন, ১৭তম ব্যাচের ৮ জন, ১৮তম ব্যাচের ২২ জন, ২০তম ব্যাচের ২১ জন, ২১তম ব্যাচের ১০ জন, ২২তম ব্যাচের ৮১ জন, ২৪তম ব্যাচের ১২ জন, ২৫তম ব্যাচের ১২ জন, ২৭তম ব্যাচের ১৩ জন, ২৮তম ব্যাচের ১০ জন এবং ২৯তম ব্যাচের ২২ জন রয়েছেন। এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে মন্ত্রণালয় ভিত্তিক একান্ত সচিব নিয়োগ করা হবে। পাশাপাশি বিদায়ী সরকারের মধ্যে যারা জন-সংযোগ কর্মকর্তা ছিলেন তাদের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে নতুন ও আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের মন্ত্রণালয়ের জন-সংযোগ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। সূত্রে জানা গেছে, সচিবালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের অনেকে এখনো অফিস করছেন না। বিশেষ করে যাঁরা শেখ হাসিনার সরকারে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে ছিলেন, তাঁদের অনেকে আড়ালে চলে গেছেন। কেউ কেউ অফিসে হাজিরা দিয়েই অন্য বন্ধুর কক্ষে সময় কাটাচ্ছেন।